ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রায়হান হত্যা: গণপিটুনির প্রমাণ নেই সিসিটিভি ফুটেজে!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
রায়হান হত্যা: গণপিটুনির প্রমাণ নেই সিসিটিভি ফুটেজে! রায়হান উদ্দিন

সিলেট: সিলেটে ছিনতাইয়ের অভিযোগে রায়হান উদ্দিন (৩০) নামে এক যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে পুলিশ দাবি করলেও সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন) ফুটেজে এর প্রমাণ নেই।
 
পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরে রায়হানকে নগরের কাষ্টঘরে ছিনতাইকালে গণপিটুনি দেওয়ার পর গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তির পর তার মৃত্যু হয়।

 

পক্ষান্তরে নিহত যুবকের স্বজনদের দাবি, রায়হানকে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
 
সুরতহালের বরাত দিয়ে হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিহতের হাতের নখ টেনে তোলার চেষ্টা করা হয়। তার হাতের মধ্যে সেলাই করা রয়েছে। হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাতেই বোঝা যায় তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
 
এদিকে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় এ দিন সকালে কোনো ছিনতাইয়ের গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান স্থানীয়রা। ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে গণপিটুনির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম।
 
তিনি বলেন, এই এলাকার পুরোটাই সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। এসব ক্যামেরার মনিটর রয়েছে তার কার্যালয়ে। শনিবার (১০ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ৭টা পর্যন্ত কাষ্টঘর এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এসব ফুটেজে কোনো গণপিটুনির ঘটনা দেখা যায়নি। এমনকি এই সময়ে কাষ্টঘর এলাকায় পুলিশের কোনো টহলও দেখা যয়নি। রোববার রাতে মুনিমের কার্যালয়ে গিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
 
কাউন্সিলর মুনিম বলেন, শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত আমি সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। ওই এলাকার ফুটেজে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পেরেছেন, এ ধরনের কিছু ঘটেছে বলে শুনেননি।
 
এদিকে রায়হান হত্যার প্রতিবাদে রোববার বিকেলে নগরীর আখালিয়া এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এলাকাবাসীরও অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে খুন হয়েছেন রায়হান।
 
নিহত রায়হান নগরের আখালিয়া ধানুহাটারপাড় এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের মীরের ময়দান এলাকায় শাহজালাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো শনিবার রাত ১০টার দিকে তিনি অফিস শেষে বাসায় ফেরেন। খাওয়া-দাওয়ার পর ১১টার দিকে বাসার সামনের রাস্তায় হাঁটা-হাঁটি করতে বের হন। এরপর তিনি আর বাসায় ফেরেননি তিনি। রোববার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ রাখা ছিল।

সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ছিনতাইচেষ্টাকালে রায়হান গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
 
নিহত যুবকের সৎ বাবা হাবিবুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, রায়হানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভোরে রায়হান ফোন করে বলছিল, তাকে বাঁচাতে ১০ হাজার টাকা নিয়ে কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আসতে। কোনো মতে ৫ হাজার টাকা নিয়ে এলেও ডিউটিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা দেখা করতে দেননি এবং ফজর নামাজ পড়ে আসতে বলেন। নামাজ পড়ে এসে দেখি পুলিশ সদস্যরা কানাঘুষা করছেন। পরে আমাকে ডেকে নিয়ে বলেন রায়হানের শরীর খারাপ মেডিক্যালে যেতে। মেডিক্যালে গিয়ে দেখি তার মরদেহ মর্গে রাখা।
 
নিহতের মামাতো ভাই আব্দুর রহমান অভিযোগ করেন, গণপিটুনিতে মারা গেলে তার দেহের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন থাকতো। কিন্তু তার হাতের নখগুলো দেখলে অনুমান করা যায় তা উপড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়িতে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করার অভিযোগ করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।