ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঝুলন্ত তারের দায় নিতে নারাজ এনটিটিএন অপারেটরগুলো

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
ঝুলন্ত তারের দায় নিতে নারাজ এনটিটিএন অপারেটরগুলো

ঢাকা: রাজধানীর সড়কের আকাশজুড়ে মাকড়সার জালের মতো ঝুলে থাকা তারের দায় নিতে নারাজ এনটিটিএন অপারেটরগুলো।  

‘লাইসেন্স পাওয়ার ১০ বছরেও কিছু করেনি’, সিটি করপোরেশনের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠানগুলো।

এনটিটিএন এবং বাংলাদেশ টেলিকমিনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে বলে মত ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এর।

রাস্তাঘাট থেকে অযাচিত ফাইবার কেবল সরিয়ে ফেলা, একই স্থানে একাধিক ফাইবার নেটওয়ার্ক যেন গড়ে না ওঠে এবং মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৯ সালে লাইসেন্স দেওয়া হয় দেশীয় দুইটি প্রতিষ্ঠানকে। ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) রেগুলেটরিং অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনের আওতায় এই লাইসেন্স দেয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। সে বছরের শুরুতেই ফাইবার অ্যাট হোম এবং শেষ দিকে সামিট কমিউনিকেশন এনটিটিএন অপারেটর হিসেবে লাইসেন্স পায়। গেল ২০১৯ সালে প্রাইভেট খাতে তৃতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই লাইসেন্স পায় বাহন লিমিটেড।

সম্প্রতি রাজধানীজুড়ে মাথার ওপর ঝুলে থাকা তার অপসারণে অভিযান শুরু করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তার কেটে ফেলা কার্যক্রমের উদ্বোধনী দিনে (১ অক্টোবর) ‘এনটিটিএন অপারেটরগুলো লাইসেন্স পাওয়ার ১০ বছরেও কোন কাজ করেনি’ বলে দাবি করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এনটিটিএন অপারটেগুলোর তদারকিতে বিটিআরসির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

আর ঠিক এখানেই দ্বিমত পোষণ করছে এনটিটিএন অপারেটরগুলো। সামিট কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা সারা দেশে ৪৭ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছি। এর ভেতর দিয়ে ২৩ হাজার লিংক চলে। আজ এই করোনাকালে ঘরে ঘরে যে মানুষ অনলাইনে কার্যক্রম করছে তার বড় অংশই আমাদের এনটিটিএনদের করে দেওয়া নেটওয়ার্কের ওপর। এখন বাড়ি বাড়ি তার টানার যে কথা বলছে সিটি করপোরেশন, এটা তো আমাদেরকে আগে কেউ করতে বলেনি। বিটিআরসি বলেনি, সিটি করপোরেশনও বলেনি। আমাদের লাইসেন্সের শর্তেও এটা বলা ছিল না। তবুও একটি এনটিটিএন পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর ছয়টি স্থানে ফাইবার টু দি হোম অর্থাৎ এফটিটিএইচ বক্স স্থাপন করেছিল। কিন্তু কোনো ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) বা ক্যাবল অপারেটর তাদেরকে সহযোগিতা করেনি। সেই এনটিটিএনের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এটা দেখে আমরাও সামিট থেকে এমন কিছু আর করিনি। আজ হঠাৎ করে বাড়ি বাড়ি, অলিতে গলিতে লাইন চাইলে তো হবে না। শুধু ঢাকা শহরেই সামিটের প্রায় এক হাজার ২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক আছে। তাহলে আমরা ১০ বছর কিছু করলাম না কীভাবে?”

আরেক এনটিটিএন অপারেটর ফাইবার অ্যাট হোম- এর জনসংযোগ ও রেগুলেটরি বিষয়ক বিভাগের প্রধান আব্বাস ফারুক বলেন, “বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স নিতে আমাদেরকে ১০ বছরের জন্য টাকা গ্যারান্টি রাখতে হয়েছে। কাজের অগ্রগতি দেখিয়ে এই টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। বিগত ১০ বছরে আমাদের কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিটিআরসি সন্তুষ্ট, সেই সনদও পেয়েছি আমরা। জামানত রাখা টাকাও ফেরত পাচ্ছি। তাহলে আমরা কাজ করলাম না কীভাবে? ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের রাস্তা খুঁড়ে আমরা যে ফাইবার বসাচ্ছি তার জন্য প্রতি মিটারে গড়ে ২৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয় আমাদের। শুধু ঢাকা শহরেই আমরা ১৮০০ কিলোমিটার ফাইবার নেটওয়ার্ক গড়েছি। তাহলে আমরা কত টাকা সিটি করপোরেশনকে দিয়েছি একবার হিসাব করেন। আমরা যদি কিছু নাই করি তাহলে এত টাকা বিনিয়োগ করেছি কেন? শুধু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকেই আমরা ৫ বছরে প্রায় ৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছি রাস্তা খোঁড়ার জন্য। সিটি করপোরেশন নির্ধারিত সব প্রধান সড়ক ও রাজপথে আমাদের ফাইবার আছে। আমরা দেশীয় প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখনও লোকসানের মধ্যেই আছি। আর আমাদেরকে এভাবে একতরফা দোষারোপ করা হচ্ছে। এটা আমরা মানতে পারি না। ”

এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এনটিটিএন তাদের কাজ করছে। এখন যে কথা হচ্ছে ঢাকা শহরের একেবারে অলিতেগলিতে, বাড়িতে বাড়িতে ফাইবার অপটিক ক্যাবল নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ না। মাত্র দুইটা এনটিটিএন কাজ করছে। তাদের কাছে এটা আশা করা উচিত হয়নি। এটা খুবই বিনিয়োগ নির্ভর খাত, যেখানে দ্রুত অবকাঠামো গড়ে তোলা যায় না। বিটিআরসিও রেগুলেশনের জায়গা থেকে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। বিটিআরসি তো এই নির্দেশনা দিতে পারে না যে, তোমরা (এনটিটিএন) এক বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের সব জায়গায় লাইন বসাবা। বিটিআরসির কাজ তদারকি করা যে তারা লাইন বসাচ্ছে কি না। সেটা তো এনটিটিএনগুলো করেই যাচ্ছে। কাজেই বিটিআরসির কোনো গাফিলতি দেখি না। ”

তবে এনটিটিএন সম্পর্কে এখনও নিজের অবস্থানে অনড় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। বাংলানিউজকে মেয়র আতিক বলেন, “এনটিটিএন যদি কাজ করে থাকে, আমাদের সঙ্গে বসুক। তাদের কাজের ম্যাপ দেখাক। আমি এক মাস সময় দেব। এর মধ্যে তারা ক্যাবল নিতে না পারলে আমি সব কেটে ফেলব। ১০ বছর হয়েছে, তাদের কাজ করতে করতে আরও ১০ বছর যাবে। এই সময়ে আমাদের শহর ঝুঁকিতে থাকবে। আগুন লাগলে কিন্তু মারাত্মক কিছু হয়ে যাবে। আমরা নীল আকাশ দেখতে পারি না। এটা আমি মানব না। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
এসএইচএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।