ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিদেশে চাকরির প্রলোভন: দুই বছরে ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
বিদেশে চাকরির প্রলোভন: দুই বছরে ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ

ঢাকা: রিক্রুটমেন্ট লাইসেন্স ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া শুধু ভিসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হয়ে বিদেশে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত দুই বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ‘ভিসা গাইড সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

শুধ তাই নয়, বিদেশ গমনেচ্ছুদের মেডিক্যাল চেকআপের নামে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা নেওয়া অভিযোগও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

কানাডা, জাপানসহ ইউরোপের ‍বিভিন্ন দেশ ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করে এ প্রতিষ্ঠানটি। এ বছরেরই বিদেশ গমনেচ্ছু অন্তত আড়াই হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের কাছ থেকে কয়েক ধাপে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর শাহআলী মার্কেটে ৯ম তলায় ভিসা গাইড সেন্টারে অভিযান চালায় র‌্যাব-৩ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান পরিচালনা করেন র‌্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।  

অভিযান শেষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), বিষয়ে পরামর্শ ও কাউন্সিলর এবং প্রতিষ্ঠানটির আইটি স্পেশালিষ্টকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

র‌্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ বিদেশে গমনেচ্ছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন ছাড়া বিদেশে লোক পাঠানোর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠনটি কানাডা, জাপান, ফিজি, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভনের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিলো। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু দালালের মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছুদের এ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা হতো। অভিবাসী আইনানুযায়ী  ভিসা গাইড সেন্টারের কোনো রিক্রুটমেন্ট লাইসেন্স নেই। প্রতিষ্ঠানটি যেসব দেশে পাঠানোর কথা বলছে, সেসব দেশের কোনো কোম্পানির ডিমান্ড লেটার নেই‌। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন দেখাতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। এরপরও প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন কোম্পানির নামে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ও ভুয়া ভিসা তৈরি করে বিদেশ গমনেচ্ছুদের হাতে দিয়ে দিতো।

তিনি বলেন, অভিযানে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কেবল ২০২০ সালে আড়াই হাজার লোকের কাছ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাবে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

তিনি বলেন, প্রথমে কাউন্সিলিং করে এবং চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভিসা সাবমিট করার কথা বলে ২৫০ ডলার, এরপর মেডিক্যাল ফিটনেস পরীক্ষা বাবদ ১০ হাজার করে টাকা নিয়ে নেয়। চুক্তিভিত্তিকভাবে শেওড়াপাড়া‌র একটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার জনপ্রতি ১ হাজার টাকা ফি দিয়ে রক্ত পরীক্ষা করানো হতো। এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সিএস হাফিজ স্বীকার করেছেন।

এসব অপরাধের দায়ে ভিসা গাইড সেন্টার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সিএস হাফিজ এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মোশারফ হোসেনকে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের কাউন্সেলিং অফিসার আরিফুল ইসলাম ও আইটি স্পেশালিস্ট সুজন রনিকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
এসেজেএ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।