ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২০
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান প্রতীকী ছবি

ঢাকা: ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় তোলা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে শুধু ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ নয়, বরং এর সঠিক প্রয়োগের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সাধারণ জনগণ।

সোমবার (১২ অক্টোবর) এই বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বললে তারা জানিয়েছেন এমনটিই। বরং কেউ কেউ আওয়াজ তুলেছেন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড জনসম্মুখে করানোর জন্যও। কেউ বলছেন, ধর্ষকদের নপুংসকরণ করা উচিত। অনেকেই বলেছেন, শুধু ধর্ষক নয়, বরং তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্যকারী ব্যক্তিদেরও সাজা হওয়া উচিত।

এই বিষয়ে রাজধানীর একজন ব্যবসায়ী বিশ্বাস মোহাম্মদ তানভির বলেন, বাংলাদেশে কোন আইনের ভালো প্রয়োগ নেই। ফলে মৃত্যুদণ্ড, বা যাবজ্জীবন যেটাই হোক না কেন কোন লাভ নেই। কোনটাই সেভাবে কার্যকর হবে বলে মনে হয় না। আর এই বিষয়ে বিচার হতে এতো সময় লেগে যায় যে, তাতে আর মন থাকে না। এটি এতোই লম্বা পক্রিয়া যে, সবাই ভুলে যায়; অমুকের ধর্ষণের রায় এই হয়েছে, ফলে আমি আর করবো না। কিন্তু যদি এটার দ্রুত বিচার হতো, তাহলে সবাই দ্বিতীয়বার ভাবতো; বিশেষ করে রায়গুলোর কথা মাথায় রাখতো। কিন্তু আমরা তা দেখি না।

তিনি বলেন, এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের মানুষেরাও বিভিন্ন সময় আইনী প্রক্রিয়ায় ছাড় পেয়ে যায়। তবে বর্তমান যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে মৃত্যুদণ্ড ঠিক আছে। কিন্তু এর সাথে আরো একটি বিষয় যোগ করতে হবে, আর তা হলো বিচার ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর করা। তবেই আমরা যেটা চাইছি যে, অন্যরা ভয় পাক, বা সাবধান হোক, সেটি হবে; না হলে নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন বলেন, এমন হয় যে অনেক সময় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বা আইনের মানুষগুলোও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ধর্ষণকে উৎসাহ বা ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সাহায্য করে। সেদিক থেকে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলে এটাও ঠিক করা উচিত যে, ধর্ষকের সাথে থেকে তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করা মানুষগুলোর বিচার কি হবে! এছাড়া ধর্ষণ বা গণধর্ষণের বিচার আলাদা নাকি এক! একইসাথে ধর্ষণের শিকার নারীর চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়টি আরো গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিত। সেসঙ্গে দ্রুত বিচার পক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা উচিত।

শুধু আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা নয়, বরং শক্তিশালী নারী সুরক্ষা কমিশন গঠন করে ধর্ষকদের বিচার করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। সবাই বলছেন, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মূল্যবোধ ও নৈতিকতা গড়ে তোলা।

এসব বিষয়ে উন্নয়ন কর্মী ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, করোনা মহামারিতে সারা পৃথিবী যখন বিপর্যস্ত তখন নোয়াখালী, সিলেট, মুন্সীগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণের ঘটনাগুলো আমাদের উন্নয়ন ও সভ্যতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অবক্ষয় এই পরিস্থিতির সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই যা পুনঃস্থাপন সম্ভব।

তিনি বলেন, ধর্ষকের নৃশংসতা বর্বর যুগকেও হার মানিয়েছে। বিচারের পথ যখন দুর্গম হয়, নির্যাতন তখন ব্যাপকতা পায়। এই প্রেক্ষাপটে নারীর প্রতি যৌন নির্যাতন বন্ধে শক্তিশালী নারী সুরক্ষা কমিশন গঠন করে বিচার করতে হবে। বর্তমানে দেশে তিন বছরের কন্যা শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষণকারীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এ রকম একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশে। সারাদেশে ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা দ্রুত আমলে নিয়ে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা এবং তা দ্রুত সময়ে কার্যকর করা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২০
এইচএমএস/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।