ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্ভোগ কমাতে শায়েস্তাবাদের আড়িয়াল খাঁ নদে সেতুর দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২০
দুর্ভোগ কমাতে শায়েস্তাবাদের আড়িয়াল খাঁ নদে সেতুর দাবি

বরিশাল: জেলা সদরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় বিচ্ছিন্ন জনপদ হিসেবে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আগে থেকেই পরিচিত। শুধু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না থাকায় এ উপজেলার অনেক ইউনিয়ন ও গ্রামের মানুষ সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণসহ নানান দিক থেকে পিছিয়ে থাকছে।

প্রায়ই যোগাযোগ ব্যবস্থায় পড়তে হচ্ছে নানান দুর্ভোগে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদরের সাথে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সদরের যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। ধারাবাহিকতায় হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের মাঝে ফেরির মাধ্যমে সড়ক পথ সচল করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। আর আগে থেকেই হিজলা ও মুলাদীর সাথে জেলা সদরের সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপনে আড়িয়াল খাঁ নদে ফেরির ব্যবস্থা সচল রয়েছে।

তবে মুলাদী, হিজলা হয়ে এ রুটে মেহেন্দিগঞ্জের সাথে জেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা গেলেও, অনেক ইউনিয়ন ও গ্রাম থেকে যাবে বিচ্ছিন্ন।

বিশেষ করে হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের কাজীরহাট থানা এলাকার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে দুর্ভোগই পোহাতে হবে।  তাই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ওইসব এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদের আড়িয়াল খাঁ নদে সেতু নির্মাণ।

এদিকে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের রামকাঠি, চুরামন, পানবাড়িয়া, হায়াৎসার, চরআইচা, সাতবিঘা, পিতম্বরকাঠি এলাকার বাসিন্দারাও একযুগেরও বেশি সময় ধরে দাবি তুলে আসছে। তারাও বরিশাল সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। সন্ধ্যার পর এই এলাকার বাসিন্দারা জেলা সদরে আসতে যেতে পারেন না।

জানা গেছে, বরিশাল সদর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে শায়েস্তাবাদ আড়িয়াল খাঁ নদ। এই নদের খেয়া পার হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বরিশাল শহরে আসা যাওয়া করছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা এবং মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা। এর সঙ্গে শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের একাংশের বাসিন্দাও রয়েছে। প্রতিদিন এই খেয়াঘাটে এসে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।

বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মোস্তফা জানান, সদর উপজেলার বাসিন্দা হয়েও বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। সন্ধ্যার পর আর কোনোভাবে জেলা সদরে আসা সম্ভব হয় না। একটা ব্রিজ না থাকার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দরির চর ইউনিনের বাসিন্দা মো. মহসিন আলম বলেন, যদি এই নদীতে একটি সেতু হয়, তাহলে আমরা আর দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দা থাকবো না। দিনে ২/৩বার জেলা সদরে আসা যাওয়া করা সম্ভব হবে। সেতু না থাকায় ৪৫ কিলোমিটার ঘুরে গাড়িতে বরিশাল যেতে হয়। সেখানে মীরগঞ্জ খেয়া পার হতে অনেক সময় প্রয়োজন। আবার মীরগঞ্জ পৌঁছানোর আগে এই খেয়া পার হয়ে বরিশালে পৌঁছানো যায়। তাই মেহেন্দিগঞ্জ, হিজালা কাজিহাটের বাসিন্দারা মীরগঞ্জ না গিয়ে শায়েস্তাবদের এই খেয়া পার হয়ে বরিশালে আসা-যাওয়া করে। তাছাড়া শায়েস্তাবাদ হয়ে পরিশাল পৌঁছাতে মাত্র ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পথ। সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট।

শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. হানিফ রাঢ়ী বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদের কদমতলী এলাকায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই সেতুর কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু ওই সেতু হলেও কোনো লাভ হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত শায়েস্তাবাদে নদীতে সেতু নির্মাণ না হবে। কদমতলী সেতু থেকে এই খেয়াঘাটের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। আর এখান থেকে বরিশাল সদরের দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার।

শায়েস্তাবদা ইউনিয়নের ৭ হাজার বিঘা এলাকার বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান বলেন, মীরগঞ্জ দিয়ে গেলে ৩ থেকে ৪ শত টাকা খরচ হয়। সময়ও বেশি লাগে। আর এদিক শায়েস্তাবাদ খেয়া পার হয়ে গেলে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বরিশাল পৌঁছানো যায়। তাই নানান ঝক্কি-ঝামেলার মধ্যেই আমরা এই পথ ব্যবহার করি।

শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দ মো. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, রাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনপদে পরিণত হয় শায়েস্তাবাদের রামকাঠি, চুরামন, পানবাড়িয়া, হায়াৎসার, কদমতলা, ভাসানচর, কাজিরহাট, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জের পুরো এলাকা। রাতে কেউ অসুস্থ হলে বরিশালে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। বিভাগীয় শহরের পাশে থেকেও আমরা বিচ্ছন্ন জনপদের বাসিন্দা হয়ে গেছি।  

এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা চেয়রম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, শায়েস্তাবাদে একটি সেতু নির্মাণ হলে মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, কাজিরহাট থানাসহ মুলাদী উপজেলার একাংশের মানুষের বিভাগীয় সদরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। এর আগেও আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। তবে বর্তমানে এব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সাংসদ পংকজ নাথ বলেন, বরিশালের সঙ্গে মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা ও কাজিরহাটের মানুষের যোগাযোগের জন্য কদমতলী নদীতে সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এখন আড়িয়াল খা নদীতে একটি সেতু হলে ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমে আসবে। সেভাবেই ডিপিপি তৈরি হচ্ছে। আপাতত শায়েস্তাবাদে একটি ফেরি সার্ভিস চালুরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়:  ১০২৪ ঘন্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২০
এমএস/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।