ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঝুলন্ত তার নিয়ে তিন পক্ষের টানাটানি

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২০
ঝুলন্ত তার নিয়ে তিন পক্ষের টানাটানি গত ১ অক্টোবর ঝুলন্ত তার অপসারণ শুরু করে উত্তর সিটি করপোরেশন। সে কাজে হাত লাগান মেয়র আতিকুল ইসলাম

ঢাকা: রাজধানীর সড়কে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ওপরে তাকালে অথবা সুউচ্চ ভবনের কোনো জানালা বা বারান্দা দিয়ে নিচে তাকালে আকাশ বা সড়কের বদলে দেখা যাবে তারের জঞ্জাল। এই তার অপসারণ করার নামে অনেকটা টানাটানিতে নেমেছে সংশ্লিষ্ট সরকারি বেসরকারি সংস্থা, রেগুলেটরি কমিশন এবং অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো।

 

সম্প্রতি রাজধানীজুড়ে ঝুলে থাকা অবৈধ তার অপসারণে রীতিমতো অভিযান শুরু করে ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। একই সঙ্গে এর জন্য ন্যাশন ওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরগুলোকে দায়ী করেছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তার এই বক্তব্যকে অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছে বেসরকারি খাতে কাজ করা দুইটি এনটিটিএন অপারেটর। এনটিটিএন অপারেটরগুলোকে তদারকিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসির ভূমিকা নিয়ে তোলা মেয়র আতিকের প্রশ্নকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।  

এমনই টানাপোড়নে নিজস্ব ড্রেন বা সড়কের নিচ দিয়ে নিজেরাই ফাইবার অপটিক ক্যাবল বসানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। বিষয়টি এনটিটিএন নীতিমালার পরিপন্থী হলেও অনেকটা অনড় অবস্থানে ঢাকা উত্তরের নগরপিতা।

এনটিটিএন অপারেটর সামিট কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আল ইসলাম বলেন, “২০০৯ সাল থেকে আমরা এবং আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘ফাইবার অ্যাট হোম’ দেশজুড়ে এনটিটিএন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছি। বিটিআরসি থেকে আমাদের লাইসেন্স প্রদানের সঙ্গে যে শর্ত দেওয়া হয়েছিল আমরা সেগুলো যথাযথভাবে পালন করে আসছি। ঢাকার অলিগলিতে ফাইবার টানতে হবে এমন নির্দেশনা সিটি করপোরেশনও আমাদের কোনোদিন দেয়নি। তবুও আমরা অনেক জায়গাতেই চেষ্টা করেছি। কোনো ভবন পর্যন্ত আমরা ফাইবার নিয়ে গেলে ভবন মালিক ভাড়া চায়। তাহলে আমরা কী করব? এখন যদি একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে আমাদেরকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে আমরা করব। ”

‘ফাইবার অ্যাট হোম’- এর জনসংযোগ ও রেগুলেটরি বিষয়ক বিভাগের প্রধান আব্বাস ফারুক বলেন, “দেশজুড়ে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার আইনি এখতিয়ার শুধু আমাদের; এনটিটিএন অপারেটরদের। এর বাইরে যারা এটা করবেন সেটা গাইডলাইনের পরিপন্থী। আমরা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আছি। ডিশ ক্যাবল অপারেটর, আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) বা অন্য কেউ আমাদের নেটওয়ার্কে আসতে চায় না। আমাদেরকে টাকা দেওয়ার বদলে তারা তার ঝুলিয়ে নিতেই পছন্দ করে। আবার অনেক অবৈধ আইএসপি আছে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী আছে। তারা যদি এই নেটওয়ার্কের আওতায় আসে তাহলে বিটিআরসির কাছে তারা ধরা পড়ে যাবে। তাই তারা এনটিটিএন এ আসে না। এখন যদি সিটি করপোরেশন বা অন্য কেউ নেটওয়ার্ক বসায় তাহলে আমাদের বিনিয়োগের কী হবে? আমরা ফাইবার অ্যাট হোম এখন পর্যন্ত রাজধানীতে ১৮০০ কিলোমিটার ফাইবার বসিয়েছি। সিটি করপোরেশন চিহ্নিত সকল প্রধান সড়ক ও রাজপথে ফাইবার বসিয়েছি। মাটির নিচ দিয়ে তার বসানোর জন্য প্রতি মিটারে আমরা সিটি করপোরেশনকে কমপক্ষে ২৩০০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। তাহলে আমাদের ব্যবসার কী হবে?”

এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীকে নিজেদের পাশে পাচ্ছে এনটিটিএন অপারেটর। উলটো সিটি করপোরেশন নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না দাবি করে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের সিটি করপোরেশনগুলো তাদের যে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল সেটা ঠিক সেভাবে পালন করেনি। তারা আজকে রাতারাতি পুরো শহর সাফ করে তার ফেলে দেওয়ার যে কথা বলছে, সেটা আমার কাছে আত্মঘাতী মনে হচ্ছে। এই সময়ে মানুষ বাসায় অনলাইন ক্লাস করছে, ব্যবসা করছে, অফিসের কাজ অনেকে বাসায় করছে। সেখানে কোনো বিকল্প না করে তার ফেলে দেওয়া আত্মঘাতী হবে। দুই সিটি করপোরেশন কোনো বিকল্প না করে এটা করছে; এটাকে আমি সমর্থন করছি না। আমরাও তারবিহীন শহর পছন্দ করব, কিন্তু বিকল্প করে করতে হবে। ”

সিটি করপোরেশন নিজেরাই অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর সুযোগ দেবে এমন বিষয়কে ‘না জেনে বলা কথা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন যদি কাউকে লাইন টানার সুযোগ দেয় তাহলে সেটা এনটিটিএন অপারেটরগুলোকেই দিতে হবে। এই অধিকার কোয়াব বা আইএসপিএবির নেই। নিজেরা আইন বানালে তো হবে না। মূলত তারা না জেনে কথা বলেছেন। ”

অবশ্য আইনে যাই থাকুক না কেন যে কোনো উপায়ে তারবিহীন শহর চান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। এনটিটিএন অপারেটর ছাড়া অন্য কারও ফাইবার অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা এনটিটিএন গাইডলাইন পরিপন্থী হলেও ‘ডোন্ট কেয়ার’ আতিক। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “এটা এনটিটিএন গাইডলাইনের পরিপন্থী কী না ‘আই ডোন্ট কেয়ার’। আমার শহরের ওপর দিয়ে তার যেতে পারবে না। আমি যদি তার কেটে দেই তাহলে এনটিটিএনের চেয়ে আমার বদনাম বেশি হবে। কারণ এই কোভিডের সময় সবাই বাসায় থেকে ইন্টারনেটে কাজ করছে। কাজেই আমি আমার রাস্তা থেকে পাইপ নেব। এনটিটিএন যদি কিছু করতে পারে তারা আমার সঙ্গে কথা বলুক। হয় এনটিটিএন আগামী এক মাসের মধ্যে সমস্ত রাস্তার নিচ দিয়ে পাইপ দেবে। পাইপ দিয়ে প্রাইস কমিয়ে আইএসপি এবং কোয়াবকে তারা সেখানে প্রবেশ করাবে অথবা রাস্তার নিচ দিয়ে আমি পাইপ দিয়ে দেব। আমি দেখব কোয়াব, আইএসপি আমাদের পাইপ ব্যবহার করে নাকি তাদেরটা ব্যবহার করে। তারা চাইলে আমাদেরটা করবে; চাইলে এনটিটিএনদেরটা করবে। কিন্তু আমাদের শহরে কোনো ঝুলন্ত তার থাকতে পারবে না। ”

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২০
এসএইচএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।