ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হুট করে ঝুলন্ত তার কাটা সমাধান নয়: মোস্তাফা জব্বার

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
হুট করে ঝুলন্ত তার কাটা সমাধান নয়: মোস্তাফা জব্বার

ঢাকা: রাজধানী থেকে ঝুলন্ত তার সরাতে দুই সিটি করপোরেশন তার কেটে ফেলার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা যথার্থ নয় বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, “যখন তার কাটা শুরু করে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আমি নিজে মাননীয় মেয়রের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছি, এইভাবে হুট করে তার কাটা সমাধান নয়।

তিনি বলেন, “আমার মন্ত্রণালয় তার কাটে না। অন্য মন্ত্রণালয়ও কাটে না। তার কাটে কেবল সিটি করপোরেশন। ”

তার কাটা বন্ধ না হলে ১৮ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন দেশব্যাপী ৩ ঘণ্টা করে ইন্টারনেট-ডিস লাইন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ইন্টারনেট ও ডিস লাইন ব্যবসায়ীরা।  

তবে শনিবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর অনুরোধ এবং দক্ষিণ সিটির মেয়রের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজনের পর ইন্টারনেট ও ডিস ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে।  

মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এই তারগুলো তো একদিনে জড়ো হয়নি। বছরের পর বছর জমা হয়েছে। কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণে এমন হয়েছে। এই তারের সঙ্গে আইএসপি এবং ক্যাবল অপারেটররা সংশ্লিষ্ট। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ইন্টারনেট ও ডিসের লাইন লাগে। এটার বিকল্প থাকলে তারা তার ঝোলাতো না। তার ঝোলাতে তাদের বিনিয়োগ করতে হয়। ”
 
“এখন যেভাবে তার জড়িয়েছে আপনি যদি কেটে ফেলেন, তাহলে সার্ভিস বন্ধ করতে পারবেন। এখনকার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে আপনি টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে পারেন কিনা?”
 
মন্ত্রী বলেন, “আমাদের দিক থেকে অবস্থান খুব স্পষ্ট- কোনোমতেই মনে করি না এরকম আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তার কেটে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। ”
 
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “আমরা এখন থেকে ১০ বছর আগেই ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের মন্ত্রণালয়-বিটিআরসি তার বসানোর জন্য এনটিটিএন লাইসেন্স ইস্যু করা শুরু করে। এখন পর্যন্ত ছয়টা লাইসেন্স ইস্যু করা আছে। তিনটা সরকারি তিনটা বেসরকারি। সরকারি তিনটির মধ্যে রেলওয়ে ও পিজিসিবি নিজের কাজ করে। আর বিটিসিএল নিজস্ব নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজ করছে। বেসরকারি তিনটের মধ্যে দু’টি গত কয়েক বছর যাবৎ কর্মরত। আরেকটি কিছুদিন আগে লাইসেন্স পেয়েছে। তারাও তাদের মতো করে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। ”
 
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমাদের মেয়র (দক্ষিণ) মহোদয় যদি চান যে ঢাকা শহরের তার আমরা পোলের ওপর রাখবো না, তাহলে মাটির নিচ দিয়ে যেতে হবে। মাটির নিচ দিয়ে যদি তার যেতে হয় তাহলে সে কাজটা কেবল এনটিটিএন অপারেটররাই করতে পারে। অর্থাৎ যে গাইডলাইন রয়েছে তাতে তার বসানোর দায়িত্ব এনটিটিএনদের। ঢাকা শহরে যে পরিমাণ বাড়িঘর আছে তার অতি নগণ্য পরিমাণ বাড়িতে তার পৌঁছাতে পেরেছে এনটিটিএন। এজন্য দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করে সমাধান করতে হবে। ”
 
“আমার যেটি বিবেচনা, অ্যাজ এ মিনিস্টার আমি যেটা বুঝি- তিনটি এনটিটিএনের ওপর নির্ভর করে তার টানতেও আমাকে অনেকগুলো বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। এত বড় শহরে মাটির নিচ দিয়ে তার টেনে নিতে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন পড়বে সেই বিনিয়োগ করার ক্ষমতা আছে কি নেই। এটা অনেক বড় বিনিয়োগের ব্যাপার, ২/৪ টাকা না। আর মাটির নিচ দিয়ে তার নিয়ে গেলে কী পরিমাণ সময় লাগবে এবং রিটার্ন পেতে কত সময় লাগবে? এগুলো বিবেচনা না করে হুট করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলেই হয় না। ”
 
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এনটিটিএনদের আমরা যখন লাইসেন্স দেই, তাতে বলা হয়নি ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে তার বসিয়ে দিতে হবে। আমরা তাদেরকে তার বসানোর লাইসেন্স দিয়েছি এবং পুরো বাংলাদেশ হচ্ছে তাদের ভূখণ্ড। তারা যেখানেই তাদের ব্যবসার সুবিধা দেখে সেখানেই তার বসায়। এই অবস্থার মধ্যে আপনি যদি তার সরাতে চান তাহলে আপনি এনটিটিএনদের সঙ্গে বসবেন। কারণ, আইএসপি বা কোয়াব, কারোই দায়িত্ব নেই তার টানার। এই তার তারা টানে বাধ্য হয়ে কারণ এনটিটিএনের তার নাই। আমি যদি এই মুহূর্তে তার সরিয়ে ফেলি তাহলে গ্রাহকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। ” 
 
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, “এই অবস্থায় ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে এবং আইএসপি-এনটিটিএন-বিটিআরসি-ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে অপসারণ করতে হবে। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিল্প, শিক্ষা, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ইন্টারনেট ছাড়া তো এখন কারও চিন্তা করারও চলে না। ”
 
“ইন্টারনেট ও টিভি যদি বন্ধ থাকে তাহলে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার কী হবে? ব্যাংকিং সেক্টর-ব্যবসা-বাণিজ্য-সরকার পরিচালনার কী হবে? আমার সরকার তো ই-নথিতে কাজ করে, ইন্টারনেট ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। ”

মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এই সমস্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি মেয়র মহোদয়কে (দক্ষিণ) বলেছি, তিনি গুরুত্ব দেননি। এরপরে আইএসপিগুলো আলোচনা করে ব্যর্থ হয়েছে এবং ব্যর্থতার পরেই তারা সংবাদ সম্মেলনে যায় এবং অনেক পরে ধর্মঘট ডাকে। ” 
 
আমার দিক থেকে যেটি উদ্যোগ নেওয়ার দরকার আমি চেষ্টা করেছি, বলেন মোস্তাফা জব্বার।
 
মুখ্য সচিব, এলজিআরডি মন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীকেও এ বিষয়ে জানানো হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।  

মোস্তাফা জব্বার বলেন, “ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন আমার সঙ্গে কথা বলেছে, তিন ঘণ্টাও যদি ইন্টারনেট না থাকে তাহলে ব্যাংকিং সেক্টর কলাপস করবে। যদি ইন্টারনেট না থাকে তাহলে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সমস্ত কিছু হুমকির মুখে পড়বে। ”
 
ইন্টারনেট না থাকলে ৫ মিনিটেই হইচই লেগে যায় জানিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, “বাসার ছোট বাচ্চাও অনলাইন ক্লাসের জন্য বসে থাকে। আপনি মোবাইলে ইন্টারনেট পাবেন কিন্তু মোবাইলে সাময়িক কিছু কাজ- ফেসবুকে স্ট্যাটাস, ব্রাউজ করতে পারেন। কিন্তু সিরিয়াস কাজের জন্য দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ছাড়া সম্ভব নয়। ”
 
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “দক্ষিণ সিটি তার কাটছে, উত্তর সিটি অন্য অ্যাপ্রোচে গেছে। উত্তর সিটি একটা বিকল্প ব্যবস্থার কথা চিন্তা করেছে। আইএসপির সঙ্গে একমত হয়ে তারা তার কাটছে। ভবিষ্যতে যেখানে কাটবে বিকল্প ব্যবস্থা করেই কাটবে। ”
 
“উত্তর সিটি পারলে দক্ষিণ কেন পারবে না। এটা খুব সঙ্গত কারণেই করা উচিত। আমি আশা করি দক্ষিণের মেয়র সাহেব সদয় হবেন এবং পুরো পরিস্থিতিটা বুঝতে পারবেন। ”
 
তিনি বলেন, “আমি চেষ্টা করেছি, চেষ্টা করে যাবো কারণ দিন শেষে ইন্টারনেট আমার কাছে জীবন-যাপন। ডাল-ভাত যেমন প্রয়োজনীয় জিনিস, ইন্টারনেট সেরকম প্রয়োজনীয়। ” 
 
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “গত মার্চ মাস থেকে টোটাল কানেক্টিভিটি বজায় রাখার জন্য আমার প্রায় নির্ঘুম রাত গেছে। যেখানে মোবাইল অপারেটরদের যন্ত্রপাতির অভাব আমি বিশেষ ব্যবস্থায় যন্ত্রপাতি আনার ব্যবস্থা করেছি। কারণ চাল-ডাল-তেল-নুন-মাছ-মাংস এগুলো কিনতেও ইন্টারনেট লাগে। ”
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
এমআইএইচ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।