ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘সাঁই কখন খেলে কোন খেলা’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
‘সাঁই কখন খেলে কোন খেলা’

কুষ্টিয়া: করোনা ভাইরাসের কারণে এবার কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন আঁখড়াবাড়ীতে নেই কোনো অনুষ্ঠান। ১৭ অক্টোবর বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩০তম তিরোধান দিবস।

প্রতিবছর দিনটিকে ঘিরে সাধুরা নিজ নিজ রীতিতে ভাব বিনিময় করেন। বসে দেশের সবচেয়ে বড় বাউল সাধুদের হাট। লাখো ভক্ত আশেকানের পদচারনায় মুখ হয় আঁখড়াবাড়ী।  

এ বছর লালন আঁখড়া বাড়ির মূল ফটকে লাগানো তালা। সাধুদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দূর থেকে এক পলক দেখছেন সাঁইজির মাজার। সাধুদের বুক ফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আঁখড়াবাড়ী। আঁখড়াবাড়ীর আঙিনায় বসেনি সাধুদের হাট, ঘটেনি ভাবের আদান-প্রদান।

দৌলতপুর থেকে আসা সাধু আফসার ফকির বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাঁই কখন খেলে কোন খেলা’ সত্যিই আমাদের বোঝা দায়। করোনা নামের অদৃশ্য শক্তির কাছে হার মেনে সাঁইয়ের অদৃশ্য খেলায় মানবকুলের সকলেই এখন নিজেকে মুক্ত রাখতে মত্ত। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা সাধু-ভক্তরা আছি, এই আঁখড়াবাড়ীতে সাঁইজির ধামে আসতে পারলে মনের খুরাক মেটে। সাঁইজির কথাগুলো যে টুকি জানি সেটা অপরকে জানানোর চেষ্টা করি। আমরা তো মানুষ জাতি, আমাদের তার লীলা বোঝা সাধ্য নেই। ’

সাঁইজি তার বানীতে বলেছেন ‘আঠারো হাজার মোকামের মাঝে জ্বলছে যেন রুপের বাতি’ এ এক আজব কুদরতি’ তাই এ আজব কুদরতির লীলায় সঙ্গ দিতে সাধুরা ছুটে আসতে পারছে না সাঁইজির ধামে। ” 

ফকির করীম শাহ বলেন, ‘আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুক্তির পথ খুঁজতে আসি আমরা। বছরে দুইবার আঁসি নিজ নিজ আশ্রম ছেড়ে সাঁইজির আশ্রমে। করোনার কারণে দোল পূর্ণিমার উৎসব স্বল্প পরিসরে হয়েছিল। তবে দোল পূর্ণিমায় আমরা সাঁইজির আশ্রমে ঢুকে সাধু সঙ্গ করেছিলাম। আর এবার তো গেটেই তালা দেওয়া। সাঁইজির আশ্রমে যেতে না পারা যে কতটা কষ্টের সাধুদের কাছে তা কেউ বুঝবে না। ’

এদিকে লালন আঁখড়াবাড়ীর আসে পাশের সকল দোকানপাটও বন্ধ, বসেনি গ্রামীণ মেলা কিংবা বাউল শিল্পীদের গানের আসরও। তবে সাধু-গুরু দর্শনের মহামিলন না ঘটায় সাধুদের অন্তরে ব্যথা বেড়েছে কিন্তু মানব কল্যাণের স্বার্থে বিরহ ব্যথা নিয়ে সাঁইজিকে স্মরণ করবে নিজ আঙিনায় নিজস্ব রীতিতে।  

১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক সাধক পুরুষ ফকির লালন সাঁই দেহত্যাগ করেন। এরপর থেকে তার ভক্ত ও অনুসারীরা আঁখড়া বাড়িতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে আসছেন। এখানে কেউ ছুটে আসেন আত্মার শুদ্ধির মাধ্যমে মনের মানুষের সন্ধানে। আবার কেউ ছুটে আসেন আত্মার মুক্তির মধ্য দিয়ে পরমাত্মার সান্নিধ্য পেতে। যেটার কোনটাই হচ্ছে না এবার। তাই মনের ব্যথা মেনে নিয়ে সাঁইজিকে স্মরণ করতে হবে নিজ নিজ ধামে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।