ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাভারে এক মাসে ১০ ধর্ষণ, আতঙ্কিত নারী সমাজ

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২০
সাভারে এক মাসে ১০ ধর্ষণ, আতঙ্কিত নারী সমাজ

সাভার (ঢাকা): দেশের বিভিন্ন জেলায় যেন ধর্ষণ উৎসব শুরু হয়েছে। শুধু ধর্ষণই নয় সঙ্গে চলছে অমানবিক নির্যাতনও।

কেউ কেউ বলছেন, ‘এতো ধর্ষণের দায় নারীদের পোশাক’। আবার কেউ বলছেন, ‘এর মূখ্য কারণ হচ্ছে পুরুষদের বিকৃত মানসিকতা। ’ 

ধর্ষণ রুখতে ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে সড়ক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলন করে আসছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ। সব মিলিয়ে আতঙ্কিত আমাদের সমাজের নারীরা।  

শিল্প এলাকা নামে পরিচিত সাভার উপজেলা দেশের সব চেয়ে ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা। এ এলাকায় পোশাক কারখানা পরিমাণ বেশি থাকায় নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানও বেশি। গত এক মাসে পোশাক শিল্পের এমন স্পর্শকাতর এলাকায় ঘটে গেছে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক কয়েকটি ঘটনা।  

পুলিশ জানায়, সাভার ও আশুলিয়া থানায় গত ৯ দিনে ধর্ষণ ও গণধর্ষণ মিলে মোট ১০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে সাভার থানায় তিনটি ও আশুলিয়া থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো দায়ের করেছেন ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার শিশুর ও কিশোরীর পরিবার, গৃহবধূ ও নারী পোশাক শ্রমিক।  

আশুলিয়া থানায় ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার ৭ মামলাগুলো হলো- ভাদাইল এলাকায় দুই বন্ধবীকে গণধর্ষণের ঘটনা ভিডিও ফাঁস। এ ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ৭ অক্টোবর মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং এর ১০-১২ জন সদস্যের ভেতর তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  

আইনাল মার্কেট এলাকায় এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শিক্ষক আবুল পলাতক। এ ঘটনায় ১ অক্টোবর মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী শিশুর বাবা।  

জামগড়া মোল্লাবাজার এলাকায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে (১০) ধর্ষণের অভিযোগে মিজানুর রহমান মিরু (৪০) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা।  

বাইপাইল নামাবাজার এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণে অভিযোগে আসামি বজরুল রহমান গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় গত ৬ অক্টোবর মামলা দায়ের হয়।  

তৈয়বপুর এলাকায় ৩ শিশু ধর্ষণের ঘটনায় বাড়িওয়ালা হেলালা উদ্দিন গ্রেফতার হন। এ ঘটনায় গত ৮ অক্টোবর মামলা দায়ের হয়।  

আবারও রুস্তমপুর এলাকায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ৯ অক্টোবর মামলা দায়ের করা হয়।  

আশুলিয়ায় এক নারী পোশাক শ্রমিক ধর্ষণের শিকার হলে মামলা হয় ৯ অক্টোবর।  

এদিকে, সাভার থানায় ৩ তিনটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এরমধ্যে- সাভারের সবুজবাগ এলাকায় চাকরির প্রলোভনে গৃহবধূকে দিনের পরদিন ধর্ষণের অভিযোগ ৫ অক্টোবর প্রবাসী সাদিকুর রহমান সেলিম (৫০) গ্রেফতার করা হয়।  

আন্দপুর এলাকায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আরেক শিশুকে বলৎকারের অভিযোগে ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে মনোয়ার (২১) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  

পরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানা, বাসা-বাড়িসহ কোথাও নিরাপদে নেই নারীরা। আতঙ্কে দিন পার করছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারীরা।  

সাভার অঞ্চলের বিভিন্ন পেশাজীবী নারীরা বলছেন, তাদের নিরাপত্তা নেই। পরপর এতো ধর্ষণের ঘটনায় তারা আতঙ্কিত। বাসা থেকে কর্মস্থলে চলাচল করতেও তাদের মনে নানা শঙ্কা থেকে যায়।  

একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকতা ও মহিলা আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ব্যাংকে নারীরা সুরক্ষিত।  এখন যে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে বিষয়টি কিন্তু আমাদের সবার জন্যই ভীতিকর। এই অপরাধের শাস্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কথা বলেছেন সেটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। মৃত্যুদণ্ডের কথা শুনে শুনে হলেও অন্তত ধর্ষকরা ধর্ষণ থেকে বিরত থাকবে।  

এ বিষয়ে শ্রমিক নেত্রী তাসলিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, পোশাক শ্রমিকদের অনেক সময় রাতে ফিরতে হয়। পোশাক শিল্প এলাকাতে যেভাবে নিরাপত্তা দেওয়া উচিত সেভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। সেক্ষেত্রে অনেক সময়ই আমাদের নারী শ্রমিকরা নানাবিপদে পড়ে। এবং তাদের সঙ্গে ঘটে ধর্ষণের মত ন্যক্কারজনক ঘটনা। আমাদের পোশাক শ্রমিকরাও আজ আতঙ্কিত। শ্রমিকরা ভাবছে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে রাতে সুস্থভাবে ফিরতে পারবে কিনা এ নিয়ে চিন্তিত তারা। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলেই ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব।  

সাভার উপজেলা নারী বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা আক্তার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, কোন নারী যদি ধর্ষণের শিকার হয় শিকার হয় হয় সরকারি কোনো দপ্তরে বিচার না পেয়ে থাকে বা মামলা না নিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আমরা মামলা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেই। ধর্ষণকে রুখতে হবে। আর সারাদেশে যে অঘটনগুলো ঘটছে তাতে আমি নিজেওতো নিরাপদ না। আমার পরিবারের নারী সদস্যরাও তো নিরাপদ নয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।