পিরোজপুর: ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে পিরোজপুরের বেকুটিয়ার কঁচা নদীতে নির্মাণাধীন অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুতে কর্মরত চীনের নাগরিক লাও ফান ওরফে ফান ইয়াংজুনকে (৫৮) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
এ মামলার প্রধান দুই আসামি হোসেন শেখ (১৯) ও সাব্বির আহম্মেদ শেখকে (২০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম এ কথা জানিয়েছেন।
গ্রেফতার হোসেন পিরোজপুর সদর উপজেলার মরিচাল এলাকার ছোহরাব শেখ ও সাব্বির একই এলাকার হায়দার আলী শেখের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাপক তদন্তের পর মাত্র ছয় দিনে মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গ্রেফতার সাব্বির নির্মাণাধীন অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুতে কর্মরত একজন স্থানীয় শ্রমিক। হোসেন শেখ সাব্বিরের সুপারিশে চলতি বছরের মে মাসে ওই সেতুতে শ্রমিক হিসেবে কাজ নেয়। হোসেনের কাজ ভাল না হওয়ায় তাকে মাত্র ১৪ দিন পরে কাজ থেকে বাদ দেন চীনা নাগরিক ফান ইয়াংজুন। এ সময় হোসেন তার কাজের ব্যবহৃত হেলমেটটি নিয়ে যায়। পরবর্তী মাসে বেতন দেওয়ার সময় ফান ইয়াংজুন হেলমেট বাবদ ৫শ টাকা কেটে রাখেন। এই ক্ষোভ থেকেই চীনা নাগরিক প্রধান টেকনিশিয়ান ফান ইয়াংজুন কখন কিভাবে শ্রমিকদের বেতনের টাকা নিয়ে যান তা পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন হোসেন। পরে সাব্বিরের যোগসাজশে তারা কোনো এক সময় ফান ইয়াংজুন এর কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৭ অক্টোবর (বুধবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফান ইয়াংজুন শ্রমিকদের বেতন দিতে একাধিক ব্যাগে করে ২ লাখ ৫৩ হাজার ২৩০ টাকা নিয়ে বাইসাইকেলে করে বাসস্থান থেকে মূল সেতুর দিকে যাচ্ছিলেন। পথে ওৎ পেতে থাকা হোসেন শেখ টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে ফান ইয়াংজুন বাধা দেন। তখন হোসেন তাকে ছুরিকাঘাত করে টাকার একটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত ফান ইয়াংজুন পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বাড়ি গিয়ে হোসেন কাদা মাখা টাকা, ব্যাগ জামা-কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে নেয়। পরে ফোনে সাব্বিরকে কাজ শেষ হয়েছে বলে জানায়। পরবর্তীকালে ব্যাপক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পুলিশ গত ১২ অক্টোবর কর্মরত শ্রমিক সাব্বিরকে সন্দেহজনক হিসেবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সব ঘটনা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ওইদিন রাতেই হোসেনকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। এসময় তার দেওয়া তথ্যমতে বসতঘরের খাটের নিচ থেকে ছিনতাইকৃত এক লাখ ৮৯ হাজার টাকা ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত জিনিষপত্র উদ্ধার করে। এরপর তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হোসান ও সাব্বির সব দোষ স্বীকার করে রোববার (১৯ অক্টোবর) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান জানান, তদন্তকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যাগে ৬১ হাজার এবং আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৮শ টাকা উদ্ধার করেন। মূল টাকা থেকে হিসাব অনুযায়ী ২ হাজার ৪৩০ টাকা পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, ফান ইয়াংজুন এর অধীনে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করত। ফান ইয়াংজুন এর মরদেহ ময়নাতদন্তের পর চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নির্মাণাধীন অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কুমিরমারা এলাকায় অবস্থিত চায়না ব্যারাক থেকে কর্মচারীদের বেতনের টাকা নিয়ে সেতুতে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীদের ছরিকাঘাতে মারা যান ফান ইয়াংজুন।
এ ঘটনায় নির্মাণাধীন অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর সিকিউরিটি ইনচার্জ কাও চিয়েন হুয়া বাদী হয়ে ওই রাতেই অজ্ঞাত আসামিদের নামে পিরোজপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা আজাদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী শাহনেওয়াজ, সদর সার্কেল খায়রুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২০
আরএ
