ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২০
করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

খুলনা: করোনাকালে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। চলতি বছরের মার্চে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে অন্যদের মতো ঘরে বসে সময় অপচয় না করে ব্যতিক্রমী কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছেন সৌরভ বিশ্বাস নয়ন।

 

তিনি ঢাকার নর্থ প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক। তার গ্রামের বাড়ি যশোরের কেশবপুরের ভরত ভায়না গ্রামে।

লকডাউনের সময়ের ছুটিতে গ্রামে এসে বাড়ির আঙ্গিনা ও ঘরের আশ-পাশের পরিত্যক্ত জমিতে সবজিক্ষেত গড়ে তোলেন। বাগানে উৎপাদিত এসব সবজি দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদেরও দিচ্ছেন।

সৌরভ বিশ্বাস নয়ন বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালে সারা দেশের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ হয়ে যায়। অবসর সময় কাটাতে গ্রামে চলে আসি। আঙ্গিনায় শখেরবশে সবজি বাগান করি। চোখ ধাঁধানো সবুজের এই সমারোহ দেখে এলাকার সাধারণ মানুষও সবজিচাষে আগ্রহ দেখায়। লকডাউনের সময় ব্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত অনেকেই হঠাৎই এমন অপ্রত্যাশিত ছুটি/কর্মবিরতিতে মনে মনে কিছুটা স্বস্তি পায়। কিন্তু বিপত্তি শুরু হয় কিছুদিন পর যখন এই অপ্রত্যাশিত ছুটির মেয়াদ ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে তখন থেকেই। মাসের পর মাস ঘরে বসে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে যায় জনজীবন। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণদের মধ্যেও কিছুটা হতাশা আর বিরক্তির রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ছুটি ব্যাপারটা হয়তো সবসময়ই সুখকর কিন্তু এবারেই এই ছুটি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকতা করার সুবাদে আমিও বেশ খানিকটা অবসর সময় পেয়ে যাই, বাড়ি চলে আসি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, কাজের চাপ কম যদিও অনলাইনে ক্লাস নেওয়াসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করতে হতো তারপরও এই অবসর সময় আর গৃহবন্দি অবস্থা খুব বেশি একঘেঁয়ে লাগছিলো। ভাবছিলাম অন্যরকম কিছু একটা করা দরকার। আমাদের বাড়িতে বেশকিছু ফুলের গাছ আছে, বিভিন্ন সিজনে বিভিন্ন ফুলের চাষও হয়। কিন্তু ওগুলো মা আর বোনের সম্পত্তি। পরে চিন্তা করলাম বাড়ির চারপাশে যেসব খোলা জায়গা আছে ওখানে সবজি চাষ করলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। বাবার কাছে শেয়ার করলাম আমার এই ভাবনা আর বাবার সঙ্গে গিয়ে কিনে আনলাম বিভিন্ন ধরনের সবজির বীজ।

কী কী সবজির চাষ করেছেন জানতে চাইলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, বাড়ির চারপাশে খুব আগ্রহ নিয়ে লাউ, কুমড়া, শসা, কাকরোল, চালকুমড়া, ধুন্দল, বেগুন, শিম এসব বীজ রোপণ করেছি। এই সবজি চাষের জন্য বিশেষ কোনো আয়োজন করেনি। বাতাবিলেবু গাছের নিচে ধুন্দল, জবাফুল গাছের নিচে কাকরোল, এ ধরনের সুবিধাজনক জায়গায় বীজ রোপণ করেছি। কিছু সবজির জন্য অবশ্য একটু ভিন্ন আয়োজন করতে হয়েছে। তারপর শুরু হলো পরিচর্যা, আনন্দ নিয়েই করতাম কাজগুলো। দেখতে দেখতে চোখের সামনেই লকলকিয়ে গাছগুলো বড় হয়ে উঠলো। সবার আগে গাছে শসা ধরলো। নিজের হাতে পরিচর্যা করা গাছে প্রথম ফল ধরলে কতটা আনন্দ হয় সেটা বোধ হয় শুধুমাত্র তারাই জানে যাদের এই অভিজ্ঞতা আছে।

তিনি আরও বলেন, এই পুরো প্রক্রিয়ায় আমার সঙ্গে ছিলেন আমার বাবা। তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তাই তিনিও সময় পেয়েছেন আমার এই শখের সবজিচাষে সময় দিতে। মাঝখানে হঠাৎ করে ঢাকায় চলে যেতে হলো আমাকে, কিন্তু বাবা গাছগুলোর পরিচর্যা করেছেন। দুর্গাপূজার সময় বাড়ি এসে দেখি সবগুলো গাছেই সবজি ধরেছে। খুশিতেই মনটা ভরে গেলো। আসলে অবসর সময়ে বাড়ির চারপাশে/ছাদে কিছু শাক-সবজি লাগিয়ে রাখলেই নিত্যদিনের সবজি চাহিদা অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব। চারিদিকে এত এত ভেজাল আর সার, কীটনাশকযুক্ত সবজির ভিড়ে বিশুদ্ধ বা ভেজালমুক্ত সবজি খাওয়ার একটা বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে এটা। আজকাল পুরোদস্তুর শহরবাসী অনেকেই ছাদে/ব্যালকনিতে সবজিচাষ করে থাকেন, মফস্বলেও এমনটা দেখা যায়। আবার অনেক সময় অনেক জায়গা থাকা সত্ত্বেও শহরতলীতে এগুলো দেখা যায় না। গ্রামগুলোও অনেকটাই আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে গেছে। আগে একটা সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই কিছু না কিছু শাক-সবজি থাকতোই কিন্তু এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় আসা অধিকাংশ সচ্ছল পরিবারই কৃষিবিমুখ। শহর বা গ্রাম যেখানেই থাকুন না কেন এ ধরনের উদ্যোগের জন্য খুব বেশি জায়গা, সময় বা অর্থ কোনোটাই দরকার হয় না, দরকার হয় শুধু একটু ইচ্ছার। আর দিনশেষে কিছু ফ্রেশ সবজির সঙ্গে আপনি পাবেন নির্মল আনন্দ আর মানসিক পরিতৃপ্তি। সুতরাং চেষ্টা করে দেখতে পারেন, ঠকবেন না এতটুকু বলতে পারি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২০
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।