যশোর: যশোরের চুড়ামনকাঠি এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা (৫৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। সুদের টাকার জালে আটকে পড়ার ক্ষোভ ও কাঠের ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য গোলাম মোস্তফাকে হত্যার পরিকল্পনা করে আবদুল্লাহ আল মামুন।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লোমহর্ষক এ ঘটনার কথা জানান যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২৫ অক্টোবর সকালে যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ঘোনা গ্রামের ভৈরব নদ থেকে গোলাম মোস্তফার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের নামে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী সালমা বেগম। ওই মামলায় বুধবার (২৯ অক্টোবর) সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৩) ও সদর উপজেলার শাখারীগাতি গ্রামের মাজেদ মোল্যার ছেলে সহিদুল ইসলামকে (৩৭) গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
এসপি মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, নিহত গোলাম মোস্তফা পেশায় একজন কাঠ ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি এলাকায় তিনি সুদের কারবারও করতেন। মানুষ টাকা ধার দিতেন। বিনিময়ে উচ্চহারে সুদ নিতেন। একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুনও কাঠ ব্যবসায়ী। তবে তিনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না। তাই কয়েক বছর আগে গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে দুই লাখ ৪৩ হাজার টাকা সুদে ধার নেন। সেই টাকা বিভিন্ন সময়ে পরিশোধ করেছেন। কিন্তু গোলাম মোস্তফা সুদের সুদ দাবি করে আসায় ঋণের জাল থেকে বের হতে পারছিল না আব্দুল্লাহ আল মামুন। একইসঙ্গে গোলাম মোস্তফা এলাকায় বড় কাঠ ব্যবসায়ী ছিলেন। এজন্য তার ব্যবসাও ভাল যাচ্ছিলো না। সুদের টাকার ক্ষোভ আর ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার করার জন্য গোলাম মোস্তফাকে হত্যার পরিকল্পনা করে মামুন। এরপর ২৪ অক্টোবর শহরের মণিহার এলাকায় গিয়ে বাসচালক বন্ধু সহিদুলের সঙ্গে দেখা করেন।
তখন বন্ধুকে মামুন তার একটা কাজ করে দেওয়া কথা বলে। সহিদুল জানায় তার বাসের ট্রিপ রয়েছে কাজ করতে পারবেন না। এসময় মামুন বলে ট্রিপের চেয়ে বেশি টাকা সে দেবে। সহিদুলকে কাঠ ক্রেতা সাজিয়ে তারা মোটরসাইকেলে চুড়ামনকাটি বাজারে আসে। এরমধ্যে মামুন মোবাইল ফোনে গোলাম মোস্তফাকে জানায় বড় একটা কাস্টমার পাওয়া গেছে। তিনি অনেক কাঠ নেবে, আপনি চুড়ামনকাটি বাজারে চলে আসেন। তার কথামতো গোলাম মোস্তফা সেখানে যান। এরপর তিনজন এক মোটরসাইকেলে সলুয়া বাজারে গিয়ে ফেনসিডিল পান করেন। সেখান থেকে ফিরে চুড়ামনকাটি বাজার থেকে গাঁজা কিনে সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে তারা গাঁজাসেবন করেন। একপর্যায়ে মামুন ছুরিকাঘাত করতে উদ্যত হলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ভৈরব নদের পাড়ে পড়ে যান গোলাম মোস্তফা। এসময় সহিদুল তাকে চেপে ধরে, আর মামুন তাকে গলাকেটে হত্যা করে। একপর্যায়ে মরদেহ নদের ফেলে দিয়ে তারা কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখে এবং নিহতের মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে। এরপর তারা পালিয়ে যায়। পরের দিন সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
তিনি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডে দুইজন জড়িত ছিল। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিমের মোবাইল ফোন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বার্মিজ চাকু, মোটরসাইকেল ও জড়িতদের দু'টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সালাউদ্দিন শিকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী শেখ, ডিবি ওসি সোমেন দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২০
ইউজি/ওএইচ/