ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জলদস্যুদের ফিরে আসা, স্বজনদের আতঙ্কের অবসান

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২০
জলদস্যুদের ফিরে আসা, স্বজনদের আতঙ্কের অবসান দস্যুতা ছেড়ে আত্মসমর্পন করছেন বাবা, তা দেখতেই এসেছে শিশুটি/ ছবি: বাংলানিউজ

বাঁশখালী থেকে ফিরে: সাত ভাই-দুই বোনের মধ্যে দুই ভাই দুর্ধর্ষ জলদস্যু বাহিনীর সদস্য। প্রায় তিন বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে একরকম যোগাযোগ নেই বললেই চলে।

পাশাপাশি সারাক্ষণ প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকা দুই ভাইকে নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকতেন পরিবারের সদস্যরা। দীর্ঘ সময় পর ভাইদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার খবরে খানিকটা স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে।

আবু বকর সিদ্দিক ও আব্দুর রশীদের আত্মসমর্পনের খবর দেখতে এসেছেন বোন মোবারকা ইয়াসমিন। দীর্ঘদিন আতঙ্কের অবসান ঘটিয়ে ভাইদের ফেরার খবরে বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) চট্টগ্রামের বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে বিভিন্ন দুর্ধর্ষ বাহিনীর ৩৪ জন জলদস্যু আত্মসমর্পন করেছেন। এসময় দেশি-বিদেশী ৯০টি অস্ত্র ও ২ হাজার ৫৬ রাউন্ড গুলি ও কার্তুজ জমা দেন তারা।

আত্মসমর্পনকারীদের মধ্যে দুই ভাই রয়েছেন উল্লেখ করে মোবারকা ইয়াসমিন জানান, প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি-জমা নিয়ে বিরোধের জেরে তিনবছর আগে তারা জলদস্যু বাহিনীতে যোগ দেয়। অনেক চেষ্টা করেও তাদের ফিরিয়ে আনা যায়নি। এই তিন বছর পালিয়ে থাকা ভাইদের নিয়ে বেশ আতঙ্কে কেটেছে সবার, কখন কী হয়ে যায়। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় বেশ ভালো লাগছে।

আবু বকরের নামে তিনটি ও রশীদের নামে দুটি মামলা রয়েছে। তবে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তার পাশাপাশি মামলাগুলো তুলে নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

জেলে জেলেই ৫ বছর কেটেছে মিজানুর রহমানের

কুতুবদিয়ার বাসিন্দা দস্যু মিজানুর রহমানের আত্মসমর্পনের খবরে দেখতে এসেছেন স্ত্রী জিন্নাত আরা। ৫ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সাত-আট মাস পরেই মিজানুর দস্যু বাহিনীতে যোগ দেয়। তখন থেকেই তিনি একরকম ঘরছাড়া। পরে তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া মেয়ে ফারেহা চার বছরে একবারের জন্যও বাবার সান্নিধ্য পায়নি।

জিন্নাত আরা বলেন, ৫ বছরের মধ্যে প্রথমে ৬ মাস, এরপর ৫ মাস এবং সর্বশেষ গ্রেফতার হয়ে তিনবছর জেলে ছিলেন মিজানুর। এখন আত্মসমর্পন করে যদি আমাদের কাছে ফিরে আসে, তাহলেই আমরা খুশি।
 

৮ বছর বয়সে কখনো বাবাকে দেখেনি রায়হান

৮ বছরের শিশু মো. রায়হানের বাবা মো. শাপদ্দিন জলদস্যু বাহিনীর সদস্য। লোকমুখে শুনেছে, বাবা জলদস্যু কিন্তু জন্মের পর থেকে কখনোই বাবাকে দেখতে পায়নি সে। জলসদস্যু দেখতে কেমন, কী করে, কীভাবে কথা বলে এসব ব্যাপারে তার কৌতূহল অনেক। দীর্ঘ আট বছর পর বাবাকে দেখতে চট্টগ্রামের বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মা মোছা. জনুয়ারার সঙ্গে এসেছে সে।

রায়হান জানায়, ছোট বেলায় বাবাকে দেখিনি, বাবা দেখতে কেমন তাও জানতাম না। শুধু মায়ের কাছে বাবার অনেক গল্প শুনেছি। আমি জানি আমার বাবা খারাপ কোনো কাজ করেনি। এলাকার মানুষ বাবাকে ফাঁসিয়ে বাড়ি ছাড়া করে দেয়।

শাপদ্দিনের স্ত্রী জনুয়ারা বলেন, স্থানীয় একটি মারামারির ঘটনার পর তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়। মামলার পর তার স্বামী ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে জলদস্যু বাহিনীতে যোগ দেয়। এরপর দীর্ঘ আট বছর সে বাড়ি আসেনি। তার সঙ্গে কোনো প্রকারের যোগাযোগও ছিল না। সে বেঁচে আছে কি-না তাও অনেক বছর জানতেন না। র‌্যাবকে অনেক ধন্যবাদ, তাদের মাধ্যমে আমি আমার স্বামী ও আমার সন্তান তার বাবাকে ফিরে পাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২০
পিএম/এইচএডি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।