ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ম্যালেরিয়া নির্মূলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
ম্যালেরিয়া নির্মূলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে

ঢাকা: ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করা হবে। এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কাজ এগিয়ে চলছে।

এখন আগের তুলনায় ম্যালেরিয়া অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে এসডিজি বাস্তবায়নে করোনাকালে কাজ বন্ধ না রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ম্যালেরিয়া নির্মূলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

শনিবার (২১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) মিলনায়তনে কালের কণ্ঠ ও ব্র্যাক আয়োজিত ‘ম্যালেরিয়ায় কোভিডের প্রভাব এবং করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

কালের কণ্ঠ ও ব্র্যাক আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাকের কমিউনিকেবল ডিজিজেস এবং ওয়াশ কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম। বৈঠকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান‌।

বৈঠকে ডা. আফসানা আলমগীর খান বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের মধ্যে ময়মনসিংহ জোনের চার জেলাতে ম্যালেরিয়া লোকাল ট্রান্সমিশন কমিয়ে আনা হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে ৫১ জেলাকে ম্যালেরিয়া মুক্ত ঘোষণা করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে সিলেট জেলার চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাকে লোকাল ট্রান্সমিশন বন্ধ করা হবে। এমনকি পার্বত্য তিন জেলায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ এক হাজারের মধ্যে এক জনে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে  কাজ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত চার হাজার ৯৯৭ রোগী শনাক্ত হয়েছে।  এর মধ্যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলায় গড়ে ৯০ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। যেখানে ২০১০ সালে ৭৮ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৯৫ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়।  
তিনি আরও বলেন, করোনাকালেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করেছি।

বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এন্টি বডি টেস্ট করার জন্য সরকার দুই মাস আগে অনুদান দিয়েছে। আমাদের কিট না থাকায় এমনকি কোন কিট বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে তা নির্ধারণ না করতে পারায় এবং সঠিক সময়ে কিট সংগ্রহ না করতে পারায় আমরা এন্টি বডি টেস্ট শুরু করতে পারিনি। আমরা অল্প সময়ের মধ্যে এ পরীক্ষা শুরু করবো।

তিনি বলেন, আমাদের বেশি করে করোনা টেস্ট করার সুযোগ বাড়তে হবে। করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেলে পরীক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, করোনার জন্য অন্য রুটিন মাফিক কাজ আটকে রাখা যাবে না। সব কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে কাজের বিকল্প নেই। আমরা করোনাকালে লক্ষ্য করেছি, করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে শুধু করোনা চিকিৎসা হতো। পরবর্তীতে নন কোভিড রোগীদের কিসের জন্য আলাদা করে অবস্থা করতে হয়েছে। তাই কোনো কাজের জন্য অন্য কাজ আটকে রাখা যাবে না।

বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন,  এ বছর ম্যালেরিয়ায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন বিদেশ থেকে এসেছে। বাকিরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশু, কিশোর ও সাধারণ মানুষ। তাদের বাড়ি থেকে উপজেলা সদরে আসতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লেগেছে। অনেকে করোনার ভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেনি। এদের যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া যেতো তাহলে এদের আমার হারাতাম না।

বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নাজির আহমেদ বলেন,  সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ অনেক কম। তাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এলাকা ধরে কাজ করতে হবে। আমার বিশ্বাস আমরা যেভাবে এগুচ্ছি এতে ২০২৫ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূল হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বর্ডার এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগী বেশি। ম্যালেরিয়া ঝুঁকি এড়াতে তথ্যভিত্তিক কর্মকৌশল নিতে হবে ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

বক্তারা বলেন, দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলে সরকারের উদ্যোগে চলমান মশারি বিতরণ, রোগনির্ণয়, মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক স্প্রে, বাড়ি বাড়ি পর্যবেক্ষণ, আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ  সমন্বিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই।

কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মো. জাহিদুল করিম, আইসিডিডিআর,বি'র প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রাশিদুল হক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (বাংলাদেশ) কমিউনিকেবল ডিজিজেস সার্ভাইল্যান্স মেডিক্যাল অফিসার ডা. মিয়া সেপাল, ব্র্যাকের কমিউনিকেবল ডিজিজেস (ম্যাইলেরিয়া) কর্মসূচির প্রধান ডা. শায়লা ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
পিএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।