ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কাউন্সিলে হেরে দলীয় কর্মীর বাড়িতে আ.লীগ নেতার হামলা-লুটপাট

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
কাউন্সিলে হেরে দলীয় কর্মীর বাড়িতে আ.লীগ নেতার হামলা-লুটপাট ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: দলের কাউন্সিলে হেরে গিয়ে যত রাগ পড়লো সাধারণ কর্মী আব্দুর রহমানের ওপর। তাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার পর চালানো হলো পরিবারের ওপর হামলা।

বাড়িঘর, ভাঙচুর, লুটপাটের মতো ঘটনাও ঘটানো হল।  

রাজনীতি, দল বা নির্বাচন-কিছুই বোঝেন না শয্যাসায়ী শতবর্ষী বৃদ্ধা হালিমা খাতুন। হামলাকারীরা তাকেও লাঠিপেটা করলো। তাদের বর্বরতা থেকে বাদ যায়নি শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরীও। অশালীন ভাষায় গালিগালজসহ তার শ্লীলতাহানির অভিযোগও উঠেছে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে।  

সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বজরাপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে ওই গ্রামের গাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানকে মারপিট করার পর তার পরিবারের ওপর হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সরেজমিনে বজরাপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, গাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান একজন আওয়ামীলীগের সাধারণ কর্মী। দরিদ্র আব্দুর রহমান ভাই-ভাতিজাদের সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করেন। তারা সকলেই শ্রমজীবি মানুষ। গত রাতেই ৫টি ঘর, ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। সেগুলো বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ওই বাড়িটিতে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। ভয়ে সবাই বাড়ি থেকে বাইরে রয়েছে বলে বাড়িতে থাকা মহিলারা দাবী করেন।  

বারান্দায় বসে মৃদস্বরে কাঁদছিলেন শতবর্ষী বৃদ্ধা হালিমা খাতুন। অস্ফুট স্বরে তিনি বলেন, ‘লাঠি দিয়্যা পিটাইচে, সারা শরীরে ব্যাথা করছে। ’ 

আব্দুর রহমানের শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরী মেয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, রাতে এসে আমাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়। এরপর আমার কাছে এসে জাপটে ধরে অশ্লীল কথাবার্তা বলে। আমি কান্না করলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।  

হাসিনা খাতুন, আনোয়ারা বেওয়া ও হালিমা খাতুনসহ ওই বাড়ির গৃহবধুরা বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করেই ইউপি সদস্য দেলোয়ার, বিশা, শাওনের নেতৃত্বে অর্ধ-শতাধিক লোকজন বাড়ির ওপর এসে হামলা চালায়। তারা বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে।  

আফরোজা খাতুন বলেন, তার ঘরে থাকা মুরগী, গোয়ালের গরু ও ছাগলও নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।  

আব্দুর রহমানের স্ত্রী বুলবুলি বলেন, আমার প্রতিবন্ধী মেয়ে হাঁটতে-চলতে পারে না। তাকেও বেইজ্জত করেছে দেলোয়ার ও তার লোকজন। হামলার সময় দেলোয়ার বলে, এমপি তানভীর ইমাম আমার সঙ্গে আছে, কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।  

শনিবার (২১ নভেম্বর) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, গত ৮ নভেম্বর উল্লাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন নির্বাচন করে স্বপনের কাছে হেরে যান। সেই থেকেই তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার আমি চা-স্টলে বসেছিলাম, এ সময় দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে এসে তুই স্বপনের পক্ষে কাজ করেছিস বলেই মারপিট শুরু করে। আমাকে মারপিট করার পর লাঠিসোটা ও দেশীয় আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়।  

আব্দুর রহমানের ভাই বরাত আলী জানান, হামলাকারীরা ৫টি বসতবাড়ি, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। এ ঘটনায় তিনিসহ আব্দুর রহমান, বয়োবৃদ্ধ হালিমা খাতুন, বুলবুলি খাতুন, নাসরিন, হাসিনা, আফরোজা আহত হয়েছেন।  

তবে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলেই দাবী করেন ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন মন্ডল।  

উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহেদুল হক বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি। এই হামলার ঘটনাটি অনেক বর্বরতাকেও হার মানায়। অবিলম্বে দোষীদের শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।  

উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার দাস পিপিএম বলেন, ঘটনার দিন রাতে তিনি প্রথমে পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ঘটনার ব্যপকতা বেশি শুনে নিজেই ঘটনাস্থলে যাই। ভিকটিমের পরিবারকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্তও কোনো অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৭ ঘন্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
ইউবি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।