ঢাকা: রাজধানী ঢাকার খালগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। খালের দায়িত্ব পেয়ে ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দুই মেয়র।
তারা বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা নিরসনে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। আমাদের নদীগুলো যেভাবে উদ্ধার হয়েছে সেভাবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দখলকৃত খাল উদ্ধার করতে পারব। আমরা মনে করি ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার করতে পারব।
বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো সিটি কর্পোরেশনের কাছে ন্যাস্তকরণ সংক্রান্ত পরামর্শক সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব প্রতিশ্রুতি দেন ঢাকার দুই মেয়র।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান প্রমুখ।
এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আজকের দিনটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দুই সিটির মেয়র চেয়ে আসছিলাম ঢাকা শহরের খালগুলো আমাদের আওতায় দিয়ে দিক। আজ সে বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখানে অনেক টেকনিক্যাল ব্যাপার রয়েছে। যেমন আমাদের সক্ষমতার বিষয়সহ আইনগত বিভিন্ন দিক রয়েছে। আমরা নগরবাসীকে বলতে পারি এটি একটি অনেক পুরনো সমস্যা। এখানে খাল, সুয়ারেজ থেকে শুরু করে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। জলাবদ্ধতা নিয়ে যে দুর্ভোগ আমরা চেষ্টা করব জনগণকে এটা থেকে রক্ষার জন্য।
তিনি বলেন, খালের দুই পাশ অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে। আমরা খালগুলো উদ্ধার করব। খালগুলো আরো গভীর করাসহ দুই পারে সাইকেল লেন, ওয়াকওয়ে ও গাছ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন পার্ক করব। এটি অবশ্যই একটি কঠিন কাজ। যদি সদিচ্ছা থাকে আমাদের নদীগুলো যেভাবে উদ্ধার হয়েছে সেভাবে খালগুলো প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উদ্ধার করতে পারব। সরকারি জমি অন্য কেউ দখল করে নিয়ে যাবে, আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব—সেদিন শেষ।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আজকে আমরা দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা নিরসনে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। ১৯৮৮ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা না দিয়ে ওয়াসাকে দেওয়া হয়। ফলে এ সকল জলাশয়, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ নর্দমার দায়িত্ব ওয়াসা পায়। সেই থেকে আজ অবদি প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ঢাকাবাসী দুর্ভোগে নির্মজ্জিত ছিল। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা একটি নবসূচনা করতে পারছি। আমি আশাবাদী সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের কাজের মাধ্যমে অচিরেই ঢাকাবাসীকে এর সুফল দিতে পারব।
দায়িত্বটাকে কতটা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, ঢাকাবাসী নির্বাচনের মাধ্যমে দুই জন নেতা নির্বাচিত করেছে। সেই ম্যানডেটের কারণে আমরা সাহস করেছি—ঢাকাবাসীকে আমরা এই সমস্যা থেকে সমাধান দেব। সব প্রতিকূলতা নিয়েই আমরা এই বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছি।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতির একটি সিদ্ধান্ত ছিল ওয়াসাকে দিয়ে দেওয়া। আমরা যখন ২০০৯-১০ সালে দায়িত্বে আসার পর ২০১২ সাল থেকে অনেক বার বলেছি এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হোক। আজকে সেটার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ওয়াসা ব্যর্থ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নই আসে না। যে কাজ আমাদের না সেটা আমরা এতদিন করেছি। এজন্য আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কারণ, কাজটা ঢাকা ওয়াসার ছিল না। এর ফলে ঢাকা ওয়াসা ওয়াটার সাপ্লাই ও সুয়ারেজে আরো বেশি মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ পাবে। ২০১২ সাল থেকে আমরা চিঠি দিয়ে আসছি হন্তান্তর করা হোক। এতদিন হয়নি, আজকে সেটা হলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২০
জিসিজি/এমজেএফ