ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জনমনে সচেতনতা ছাড়া দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২০
জনমনে সচেতনতা ছাড়া দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়

ঢাকা: দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। এ দুর্নীতির মোকাবিলা করতে হলে সমাজের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আইন প্রয়োগ ও বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি জনমনে সচেতন বাড়ানো না হলে দেশে দুর্নীতি থামানো সম্ভব নয়।

বুধবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে ‘দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তারুণ্য: কার্টুন ও চিত্রশিল্প’ শীর্ষক আলোচনা ও ‘দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা-২০২০ এর ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।

শিক্ষাবিদ এবং টিআইবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান বলেন, কার্টুন একটা ভিজুয়াল একটি মাধ্যম। একটি ছবির অনেক ক্ষমতা। কার্টুন এমন একটা বিষয় যেটা ছোট বাচ্চা থেকে বয়স্করা সবাই বোঝে। বাংলাদেশের সবার রন্দ্রে রন্দ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশন যদি ভালোভাবে কাজ করতেন তাহলে টিআইবির কোনো দরকার ছিল না। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের মধ্যেই দুর্নীতি রয়েছে। সর্ষের মধ্যেই ভুত বসে আছে।

কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য বলেন, দুর্নীতিটা খারাপ জিনিস, এটা সবাই উপলদ্ধি করে এর বিরুদ্ধে এক ধরনের বক্তব্য কার্টুনের মধ্যে দিচ্ছে। কার্টুন একটা পিকটুরিয়াল ল্যাংগুয়েজ। অনেক গম্ভীর কথা লিখিতভাবে দিলে ২০ শতাংশ মানুষ বুঝলো। আর কার্টুন (পিক্টুরিয়াল ল্যাংগুয়েজ) ৮০ শতাংশ মানুষ বুঝবে।

তিনি বলেন, যার অংশগ্রহণকারী তারা যদি নিজেদের ভাবনা চিন্তাকে প্রকাশ করে তবে ভালো কার্টুন বানাতে পারবে। কিন্তু অংশগ্রণকারীদের মধ্যে অনেকেই কার্টুন কপি করেছে। সেটা বাদ দিতে হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে একটা গাছ লাগাতে খুব পরিশ্র্রম করতে হয়। অথচ আমাদের দেশে একটা পাখির মুখ থেকে বীজ মাটিতে পড়লেই গাছ হয়ে যায়। এ যে সোনার মাটি সোনার দেশ কথা গুলো কিন্তু এমনি এমনি হয়নি। কাজেই দেশ টাকে যারা কলুষিত করছে, যারা নষ্ট করছে, তাদের বিরুদ্ধে টিআইবির যেসব কার্যক্রম চলছে, এটা সত্যিই সুন্দর।

টিআইবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সদস্য লেখক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, আমরা সাধারণত দুর্নীতির কথা প্রকাশ করে থাকি। কিন্তু এ দুর্নীতি যে করছে, তার ভেতরে একটা মন কাজ করছে। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর একটা লেখা আমরা পড়েছিলাম। সেখানে বলা হয়েছিল- মনের মধ্যে দুটো মন তর্ক করে। একটা কু-প্রবৃত্তি অপরটা সু-প্রবৃত্তি মন। এ দুটো মনের মধ্যে কু-মনের জয় হয় তবে ওই মানুষের কাজগুলো হবে খারাপ। সেই কারণে যদি দুর্নীতি বাড়তে থাকে, তবে বুঝতে হবে সেই সমাজে সু-মনগুলো ভালাভাবে কাজ করছে না। তার জন্য আমাদের চিন্তা করতে হবে শিক্ষার কথা।  

তিনি বলেন, বাঘের বাচ্চা মেউ মেউ করবে না, সে হালুম করবে, হাসের বাচ্চা সাতার কাটতে শিখে ফেলবে। বিড়ালের বাচ্চা মেউ মেউ করবে। এটা তাদের সহজাত বিকাশের মধ্যেই ঘটে। মানুষকেই একমাত্র মানুষ হতে হয়। সেই হওয়াটার ব্যাপার যদি ঠিকমত না ঘটে তাহেলেই কেউ ধর্ষক হয়, কেউ লুটেরা হয়, কেউ চোর, প্রতারক হয়। এমন ভাবে আমরা সমাজে ছড়িয়ে পড়তে দেখি।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের সমাজের দিকে যদি তাকাই, তবে দেখবো দৈনন্দিন জীবনেও সত্য মিথ্যাকে জড়িয়ে ফেলছি। একজন দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে আমরা নির্বাচিত করছি। দুনীতিবাজরা সংসদে চলে আসছে। কারণ এটা সমাজ কিন্তু তাদের ছেঁকে তুলছে না। এখন দুর্নীতি ও সুনীতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে যে, এর বোধটা আমাদের শাণিত হয়নি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা ও তরুণদের সম্পৃক্ত করা এ কাজটি শুরু করার পেছনে মানুষের ভাবনা ছিল। টিআইবির প্রথমে খানা জরিপের সময় প্রশ্নদাতারা বলেছিলেন, আইনের দরকার আছে, বিচারের দরকার আছে, কিন্তু আমরা মনে করি দেশের জনগণ সচেতন না হলে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়।  

দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তারুণ্য: ‘কার্টুন ও চিত্রশিল্প’ শীর্ষক আলোচনা ও ‘দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতায় ১৩০ জন কার্টুনিস্ট অংশ নেন। দুটি গ্রুপে এ প্রতিযোগিতা হয়। ক গ্রুপে ছিল ১৩-১৮ বয়স পর্যন্ত এবং খ গ্রুপে ১৯-২৫ বছর পর্যন্ত।  দুটি গ্রুপ থেকে ২২৭টি কার্টুন জমা পড়ে। এর মধ্যে ক গ্রুপে ১১৯টি এবং খ গ্রুপে ১৬৮টি কার্টুন।

প্রতিযোগিতায় দুটি গ্রুপ থেকে ছয় জন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। এদের মধ্যে- ক গ্রুপের প্রথম হয়েছেন কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী মো. ইসমাইল মাহমুদ, দ্বিতীয় হয়েছেন- নেয়াখালী গভঃ কলেজের এইএসসির শিক্ষার্থী আসিফ মোহাম্মদ ইউসুফ। আর তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন- ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গাল্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিন সামিহা ইসলাম।

খ গ্রুপ থেকে প্রথম হয়েছেন ঢাকার মাহতাব রশিদ, দ্বিতীয় হয়েছেন সৈয়দপুরের দুরন্ত সাদাত মাহবুর ও তৃতীয় হয়েছেন সিলেটের রাহুল রাজ দেবনাথ।  

দু’টি গ্রুপের প্রথম স্থান অর্জনকারীরা পাচ্ছেন ৭৫ হাজার টাকা, একটি ক্রেস ও সনদ। দ্বিতীয় স্থান অধিকারীরা পাবেন ৫০ হাজার টাকা, ক্রেস ও সনদ। আর তৃতীয় স্থান অধিকারীরা পাবেন ৪০ হাজার টাকা, একটি ক্রেস ও সনদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২০
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।