ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

প্রকল্পের সোয়া কোটি টাকা আত্মসাৎ, বরখাস্ত ৪

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২০
প্রকল্পের সোয়া কোটি টাকা আত্মসাৎ, বরখাস্ত ৪

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের উপকারভোগী সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা জমা না দিয়ে ও সদস্যদের নামে ঋণ উত্তোলন করে এক কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।

অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী মেহেদী হাসান, জুনিয়র অফিসার আব্দুল মুকিব এবং সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সূত্র মতে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২০১৪ সালে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’। সরকারিভাবে পরিচালিত হওয়ায় উপজেলার গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে এ সমিতি। বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার সদস্যের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।

সর্বশেষ অডিট অনুযায়ী, উপকারভোগী সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা জমা না দিয়ে ও সদস্যদের নামে ঋণ উত্তোলন করে গ্রাহকদের এক কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ লাখ টাকা উদ্ধার হলেও বাকি টাকার হদিস নেই।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুইগাছা গ্রামের আকলিমা খাতুন জানান, তিনি ২০১৪ সালে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ সমিতির সদস্য হন। প্রতি মাসে সঞ্চয়ের টাকাও জমা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়ার বই আজও পাননি। উল্টো অফিস থেকে এসে বলে গেছে, তার নামে ১০ হাজার টাকার ঋণ তোলা হয়েছে। কিন্তু ঋণের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

একই গ্রামের কামরুজ্জামান জানান, সমিতির কর্মকর্তারা তার বাবা, ভাই ও বোনের নামে ভুয়া ঋণ তুলে আত্মসাৎ করেছেন।

বৃদ্ধ নাসের সরদার জানান, তিনি কখনও অফিসে যাননি। কোনো কাগজপত্রে স্বাক্ষরও করেননি। অথচ তার নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা। সদস্য বই তার বাড়িতে আছে। কীভাবে এ ঋণের টাকা দেওয়া হলো? আর কেই বা টাকা উঠালো,  তা তিনি জানেন না।

রিক্তা খাতুন নামে আরও একজন জানান, তার নামেও ঋণ তোলা হয়েছে। কিন্তু তিনি জানেন না।

আবার, আলী হোসেন ও হামজের আলী নামে দু’জন জানান, তারা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধও করেছেন। কিন্তু টাকা অফিসে জমা হয়নি।

একই অভিযোগ করলেন সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারাফ হোসেন, তৈয়েব আলী, পারভীন খাতুন, হাছিনা খাতুন, নাজমা খাতুন, আবেদাসহ অসংখ্য সদস্য। তাদের সবার নামেই ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা জানেনই না।

সম্প্রতি আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের ঢাকা অফিস থেকে অডিট অফিসাররা উপকারভোগীদের এলাকা পরিদর্শন করলে গ্রাহকরা এসব তথ্য জানতে পারেন।

এদিকে, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী মেহেদী হাসান জানান, তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। যারা টাকা নিয়েছেন, তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।  

তবে নিজের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল ছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।

বরখাস্ত হওয়া জুনিয়র অফিসার আব্দুল মুকিব জানান, তিনি ৫৩ লাখ টাকার মত নিয়েছেন। এ টাকা তিনি নিজ বাড়ির কাজে ব্যবহার করেছেন। এরই মধ্যে কিছু টাকা ফেরতও দিয়েছেন। তবে তার কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হচ্ছে। তার পক্ষে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের সিনিয়র অফিসার বিশ্বজিৎ সরদার জানান, বৈকারি, কুশখালী, বাঁশদহা ইউনিয়নে বেশি ক্ষতি হয়েছে। আত্মসাৎ করা এক কোটি ২৭ লাখ টাকার মধ্যে ১৯ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। তাদের নামে ফৌজদারি মামলারও প্রস্তুতি চলছে। এ টাকা উদ্ধার করার জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

তবে, বর্তমানে কিছু এলাকায় আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।