ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইটভাটা মুক্ত হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন 

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
ইটভাটা মুক্ত হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন 

গাজীপুর: গাজীপুরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ফলে অবৈধ ইটভাটা মুক্ত হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। এ বছর (২০২০-২০২১ অর্থ বছরে) গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার সকল ইটভাটা বন্ধ রয়েছে।

 

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০/২৫ বছর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠে শতশত ইটভাটা। সরকারি অনুমোদন নিয়ে ইটভাটা মালিকরা ইটভাটা পরিচালনা করে আসছিলেন। এর মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলার একাংশ ও টঙ্গী থানা নিয়ে গঠিত হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন। পরে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুসারে সিটি করপোরেশন এলাকায় ইটভাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত ইটভাটার সকল স্থাপনা সরিয়ে নিতে ইটভাটা মালিকদের চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।  

কিন্তু ভাটা মালিকরা ইটভাটার স্থাপনা সরিয়ে না নিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ও অবৈধভাবে গত ৭ বছর ধরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কড্ডা, বাইমাইল, বাঘিয়া, কাতলাখালী, রাজাবাড়ী, আহাকী, আমবাগ, জয়েরটেক, ইসলামপুর, গাছা, কারখানাবাজার, কাউলতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ১৭৪টি ইটভাটা পরিচালনা করে আসছিল। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদের আদেশ দেয় উচ্চ আদালত। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর সদর দপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ইটভাটা বিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু করে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর। পরে ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত ইটভাটার উপর ২৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।  

এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত ১১২টি অবৈধ ইটভাটার আগুন ফায়ার সার্ভিস দিয়ে নিভিয়ে দেয় এবং ভেকু দিয়ে ওইসব ইটভাটার কিলন ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। এসময় ওইসব ইটভাটা মালিককে ৪ কোটি ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া জরিমানা অনাদায়ে ৩টি অবৈধ ইটভাটা মালিককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের কারণে এবছর (২০২০-২০২১ অর্থ বছর) গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৭৪টি ইটভাটার মধ্যে সকল ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে ওইসব এলাকায় এখন চাষাবাদ শুরু করেছে এলাকাবাসী।  

বর্ষার পরপরই অনেক ইটভাটার স্থাপনা সরিয়ে নিয়ে সেখানে সরিষা, ধান ও বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছে জমি মালিকরা। এতে ওইসব এলাকায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর আগের পরিবেশ ফিরে পেয়েছে। সবুজে ভরে গেছে পুরো এলাকা। ইটভাটার কালো ধোয়া ও ধুলাবালি থেকে দূষণ মুক্ত হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন।  

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউলতিয়া এলাকার বাসিন্দা তফিজ উদ্দিন জানান, গত ১৫ থেকে ২০ বছর আগে এ এলাকায় প্রচুর শাক-সবজি ও ফসল আবাদ হতো। ইটভাটার কারণে সকল কৃষি আবাদ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এলাকায় ধুলাবালি ও ইটভাটার কালো ধোয়ায় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ে। এতে মানুষের শ্বাস প্রশ্বাস নিতেও সমস্যা হতো। দূষণের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হতো এলাকাবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সিটি করপোরেশনের সকল ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। ফলে এলাকাবাসী অনেক উপকৃত হয়েছে।  

জহিরুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা জানান, এবছর গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় কোন ইটভাটা না থাকায় তার সুফল মানুষ পাচ্ছেন। ইটভাটার কালো ধোয়া ও ধুলাবালি থেকে মুক্তি পেয়েছে নগরবাসী। এবার শ্বাস নিতেও কোন সমস্যা হচ্ছে না। আগে ঘরের ভেতর, ছাদের উপর ও উঠানে ইটভাটার কালো ধোয়া পড়ে থাকতো। এবার আর এসব নেই। দূষণ মুক্ত সুন্দর একটি পরিবেশ গড়ে দেওয়া জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দূষণ মুক্ত পরিবেশে আমরা বেঁচে থাকতে চাই।  

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সালাম সরকার জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর সদর দপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট শাখা ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধ ইটভাটা বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। পরে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৬৬টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৭৪টি ইটভাটার মধ্যে এবছর সব কয়টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।  

এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৭৪টি অবৈধ ইটভাটা ছিল। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ফলে এবছর (২০২০-২০২১) গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার সব কয়টি ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। এতে এলাকাবাসী ইটভাটার দূষণ থেকে মুক্তি পেল। পরিবেশ ভাল থাকবে এবং এখানে পরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠবে। ইটভাটাগুলো লোকালয়ের বাইরে হবে। এছাড়া চাষাবাদের জন্য  কৃষকদের সরকারিভাবে সার ও বীজ দেওয়া হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০।  
আরএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।