ঢাকা: জন্মগতভাবে কুঁজো হওয়া সত্ত্বেও শারীরিক প্রতিবন্ধতাকে উপেক্ষা করে রিকশা চালানোর মতো কঠিন পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেন আতাউল সরদার।
আতাউল সরদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার তালুক হরিদাস গ্রামে।
আতাউল বলেন, আমার এক ছেলে, এক মেয়ে পড়াশোনা করে। কিন্তু আমি তাদের পড়াশোনার খচর ঠিকমতো দিতে পারিনা। এ করোনার সময় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় আমারও আয় অনেক কমে গেছে। করোনার মধ্যে আমি অনেক কষ্ট করছি, আমাকে না খেয়েও থাকতে হয়েছে। এখন কোনোদিন ২০০ টাকা, কোনোদিন বড়জোর ২৫০ টাকা আয় করতে পারি। এ টাকায় সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে যায়। এখন দেখেন এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) মরিচ কিনতেও ৫০ টাকা লাগে। গ্রামেও এখন সব জিনিসের অনেক দাম। ভাতের সঙ্গে কোনোদিন ভালো তরকারি জোগাড় করতে পারি, কোনোদিন পারি না।
রিকশা চালাতে কষ্ট হয় কিনা জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, এ শরীর নিয়ে রিকশা চালাতে আমার অনেক কষ্ট হয়। আমার শরীরে দেখেন কিছুই নেই। সবাই আমাকে দেখে মায়া করে। সবাই বলে, এ শরীর নিয়ে আমি কীভাবে রিকশা চালাই। বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারি না। আমি অনেক কমগতিতে রিকশা চালাই, তাই অনেক যাত্রী আমার ওপরে রাগও করেন। জোড়ে চালাতে বলে, কিন্তু আমি জোড়ে চালাতে পারি না। আমি কম দূরত্বের যাত্রী বহন করি, তাই আমি কম টাকা ভাড়ার যাত্রী পাই। আমাকে দেখে যাদের মায়া লাগে, তারাই শুধু আমার রিকশায় ওঠেন। অফিস টাইমে যারা তাড়াতাড়ি যেতে চায় তারা আমাকে দেখেই রিকশায় ওঠেন না।
রিকশা না চালিয়ে অন্যকোনো কিছু কেন করেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্রামের বাড়িতে একটা দোকান দেওয়ার ইচ্ছা আছে। পাশাপাশি আমার স্ত্রীকে যদি একটা গরু কিনে দিতে পারতাম আর আমি দোকান করতাম, তাহলে আমার সংসার ভালোমতো চলতো। কিন্তু ব্যবসা করার মতো বা গরু কেনার মতো টাকা আমাদের নেই। আমি অনেক গরিব মানুষ, যে টাকা আয় করি, সেই টাকা দিয়ে সংসারই ঠিকমতো চলে না।
তিনি আরও বলেন, আমি কোনদিন কারও কাছে হাত পাতিনি, নিজে পরিশ্রম করে জীবন চালাইছি। কিন্তু এখন আমি আর রিকশা চালাতে পারি না, রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। সরকারতো কতো মানুষকে কত ধরণের সহযোগিতা করে, অনেক মানুষ আছে তারাও গরিবদের সাহায্য করে, কেও যদি আমার মতো একজন অসহায় গরিবকে একটু সহযোগিতা করতো, তাহলে আমি এ রিকশা চালানোর মতো কঠিন কাজ থেকে মুক্তি পেতাম।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
আরকেআর/ওএইচ/