ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ঠাণ্ডা হাতে গরম পিঠায় জমে আড্ডা

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
ঠাণ্ডা হাতে গরম পিঠায় জমে আড্ডা ঠাণ্ডা হাতে গরম পিঠা। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট:  শীতের আমেজে নানান ধরনের ধোঁয়া উঠা গরম গরম পিঠায় জমে উঠেছে লালমনিরহাটের ফুটপাত, সড়ক-মহাসড়কের পাশের পিঠার দোকানগুলো। কনকনে শীতে ঠাণ্ডা হাতে গরম গরম পিঠা-পুলিতে জমেছে আড্ডা।

  

জানা গেছে, হিমালয়ের পাদদেশের লালমনিরহাট জেলায় শীতের আগমন ঘটে অনেকটা আগেই। এর দাপট যেমন দীর্ঘ হয়। অনুরূপ দীর্ঘস্থায়ী হয় এ জেলার শীতকাল। শীতের আমেজে মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্মের মতই পরিবর্তন ঘটে রুচি আর পোশাকেও। শীতকালে গরম কাপড় ছাড়া বাইরে বেড়ানো অসম্ভব। বাঙালি বরাবরই ভোজন প্রিয়। সে থেকেও পিছিয়ে নেই এ জেলার মানুষ। শীতেও ভোজনে আসে আমূল পরিবর্তন। শীতের পিঠা-পুলি বাঙালির প্রিয় খাবার। যা শীতকালে হাট-বাজার, গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত ও মহাসড়কের পাশেও জমে পিঠা-পুলির আড্ডা।  

লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের দীর্ঘ ১০০ কিলোমিটার পথে অসংখ্য পিঠা-পুলির দোকান বসে শীতকালে। এবারও এর ব্যর্তয় ঘটেনি। যাত্রাপথে একটু দাঁড়িয়ে ক্লান্ত পথিকরাও যুক্ত হন শীতের পিঠা-পুলির আড্ডায়। ঠাণ্ডা হাতে গরম গরম পিঠায় শরীর তাপিয়ে যাত্রা শুরু করেন পথিক। হাট-বাজার, ফুটপাত বা মহাসড়কের পাশে এভাবে নানান ধরনের পিঠা-পুলি বিক্রি করে সংসারের চাকা সচল রাখেন হাজারো মৌসুমী হকার ও ব্যবসায়ী।

গরম পিঠায় জমেছে আড্ডা।  ছবি: বাংলানিউজ

ওই মহাসড়কের আদিতমারী স্বর্ণামতি সেতুপাড়েও জমে উঠেছে শীতের পিঠার আড্ডা। সেতুপাড়ে বেশ কয়েকটি পিঠা-পুলির দোকান বসেছে। তবে আড্ডা জমে শফিকুলের পিঠা আড্ডায়। ধোঁয়া উড়ানো ভাপা পিঠা, তেল পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ পিঠা, চিংড়ি মাছ চপ, ধনে পাতার চপ ও গরম গরম ভূনা খিচুড়ি। নানান ধরনের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা পরিবেশন করা হয়। শীতের ঠাণ্ডায় পিঠার মিষ্টি ঘ্রাণে স্বর্ণামতি সেতুপাড় জমে মানুষের আড্ডা। গরম গরম পিঠার স্বাদ নিতে অনেকেই ছুটে আসেন সেতুপাড়ে।  

পিঠা বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শীতের সকাল ও বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি। বাড়িতে পিঠা তৈরির সরঞ্জাম প্রস্তুত করেন আমার স্ত্রী। আমি দিনভর বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি বিক্রি করি। দৈনিক ৫-৭ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করে ৭ থেকে ৮শ’ টাকা আয় হয়। এই আয় দিয়ে তিন ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াসহ ৬ সদস্যের সংসার খরচ চালাই। সন্ধ্যায় বিক্রি বেড়ে যায়। তখন দোকানে ভাই-ভাতিজারা সহযোগিতা করেন। দীর্ঘ ৫-৭ বছর ধরে শীত এলেই পিঠা বিক্রি করছি।  

স্থানীয় সন্তোষ কুমার, আতিক, শ্যামল ও মিলন চন্দ্র বাংলানিউজকে জানান, শীতকালে পিঠা ছাড়া আড্ডা জমে না। ঠাণ্ডা হাতে গরম গরম পিঠা খেতে ভারি মজা। পিঠা ছাড়া শীতকাল ভাবাই যায় না। তাই কাজ শেষে সন্ধায় শফিকুলের পিঠা আড্ডায় ছুটে আসা। অনেক সময় ভোক্তাদের ভিড়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়, তবে দাঁড়িয়ে থাকলেও পিঠার স্বাদ নেওয়ার লোভ সামলানো অসম্ভব।

শফিকুলের গরম পিঠা দোকান।  ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট শহরের প্রাণ কেন্দ্র মিশন মোড়েও জমে উঠেছে শীতের পিঠা-পুলির দোকান। সন্ধ্যা নামলে শীতের দাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিঠা-পুলির দোকানেও ভিড় বেড়ে যায়।  

পিঠা খেতে আসা ট্রাকচালক মমিন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যা নামলে শীতের প্রকোপ বেড়ে যায়। ফলে ঠাণ্ডায় হাত শীতল হয়ে যাওয়ায় স্টিয়ারিং ধরে রাখাও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। তাই প্রায়ই পথে ট্রাক দাঁড় করিয়ে গরম গরম ভাপা ও চিতই পিঠা খেয়ে শরীরটা কিছুটা তাপিয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করি। সেতুপাড়ে মধ্যরাত পর্যন্ত গরম পিঠা পাওয়া যায়। অনেক সময় পিঠার লোভেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে এ আড্ডায় যোগ দেই।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।