ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২১
‘ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না’

ঢাকা: যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন রপ্তানিতে ভারত দেশটির সিরাম ইনস্টিটিউটকে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান।

তিনি জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের জি টু জি (সরকার টু সরকার) পর্যায়ে চুক্তি হয়েছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞা আমাদের চুক্তিকে এখন পর্যন্ত ব্যাঘাত করবে না। ভারত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাণিজ্যিক রপ্তানির ক্ষেত্রে। তাই বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পেতে সমস্যা হবে না।  

আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ভ্যাকসিন পেতে সমস্যা হবে না।

ভারত সরকার দেশটি সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর সোমবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে তাৎক্ষণিক ব্রিফিংয়ে একথা জানান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও ওই ব্রিফিংয়ে কথা বলেন।

ব্রিফিংয়ে শুরুতে ভ্যাকসিন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ভারতীয় হাইকমিশন অফিসে কথা বলে সাংবাদিকদের সবশেষ আপডেট অবহিত করেন।
সচিব আব্দুল মান্না বলেন, একটি সুসংবাদ আছে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমি ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে আমরা যে চুক্তি করেছি, যেহেতু এ কাজটি হয়েছে জি টু জির (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে, তাই এই নিষেধাজ্ঞার সম্পর্ক নেই। কমার্শিয়াল নিষেধাজ্ঞা হয়েছে। আমাদেরগুলোয় না। এটা সরকার টু সরকার।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উল্লেখ করেছেন, তিন কোটি ভ্যাকসিনের কথা। আমরা যে চুক্তি করেছি সেখানে ভারতীয় হাইকমিশনার উপস্থিত ছিলেন। ভারতের সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটা তাতে তাদের ইন্টারনাল কমর্শিয়াল অ্যাকটিভিটিজ হবে না। কাজেই হাইকমিশন থেকে এটা ক্লিয়ার করেছে।

সচিব জানান, সিরাম ইনস্টিটিউট গতকাল তাদের সরকারের কাছে অনুমোদন পেয়েছে। এখন সিরাম ইনস্টিটিউট ডব্লিউএইচওর (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) কাছে আবেদন করবে। যদি তারা তিন সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন নিয়ে আসতে পারে, তাহলে তিন সপ্তাহ অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাকি আছে। কাজেই আমাদের ডিলে (দেরি) হওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

সচিব বলেন, আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার মতো কিছু হয়নি বলে আমরা মনে করছি।

টাকা পাঠানোর বিষয়ে সচিব বলেন, আমরা সব ফর্মালিটিজ শেষ করেছি। যাদের কাছ থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি পেয়েছি তাদের ট্রেনিং দেবো। এটা আজ হয়ে যাবে। মন্ত্রী মহোদয় অনুমোদন করে দিয়েছেন। ডিজি ড্রাগকে আমরা অনুমোদন দিয়েছি। দুপুরের মধ্যে ডিজি ড্রাগ অনুমোদন দেবে।

 ‘শেষ কথা হলো- যে ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে সেটি আমাদের চুক্তিকে এখন পর্যন্ত ব্যাঘাত করবে না। ’

তাহলে ফেব্রুয়ারিতে আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি- প্রশ্নে সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত তাই বলা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ের শুরুতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরাও বিষয়টি নিয়ে সকাল থেকে কাজ করছি। আমরাও জানতে পেরেছি। পুরোপুরি খবর আমরা এখনও অবহিত নই। আমরা ইতোমধ্যে বেক্সিমকো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের ভারতের মিশন দেশটির ফরেন মিনিস্ট্রির সঙ্গেও আলোচনা করেছে।

‘ওনারা আশ্বস্ত করেছেন, আমাদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তিটি ব্যাহত হবে না। ’

ভারত সব দেশের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আশ্বস্ত যে সমস্যা হবে না, সমাধান আশা করি হয়ে যাবে। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তিকে অনার করার একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা সেটার উপরও আস্থা রাখি।

চুক্তি অনুযায়ী তাদের অর্ধেক টাকা পাঠানো হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ১২০ মিলিয়ন ডলার তাদের দেওয়া হচ্ছে।

আরও ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছি। চায়নিজ ভ্যাকসিন, রাশান ভ্যাকসিন এগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় আছে। এখনও তাদের ট্রায়াল শেষ হয়নি। তাদের ট্রায়াল শেষ হলে আমরা এগ্রিমেন্টে যাবো।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন পেতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উপস্থিতে গত ৫ নভেম্বর সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ সরকার।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে।

সমঝোতা অনুযায়ী, সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসকে অক্সফোর্ডের তৈরি সার্স-কভ-২ এজেডডি ১২২২ (অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রজেনিকা ভ্যাকসিন) [SARS-Cov-2 AZD 1222 (OXFORD/ASTRAZENECA VACCINE)] সরবরাহ করবে।

সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন তৈরি হলে প্রথম দফাতেই তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে সিরাম ইনস্টিটিউট। এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে নিয়ে আসবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। যখনই এটা তৈরি হবে তখনই বাংলাদেশকে প্রথম সুবিধামতো সময়ে দেবে। বেক্সিমকো এই ভ্যাকসিন আনার ব্যবস্থা নেবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল এবং সিরাম ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক সন্দীপ মোলায় এবং বেক্সিমকোর চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। সংসদ সদস্য ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নুর ও ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২১
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।