ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সালিশ না মানায় ৩ পরিবারকে সমাজচ্যুতির অভিযোগ

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২১
সালিশ না মানায় ৩ পরিবারকে সমাজচ্যুতির অভিযোগ

মৌলভীবাজার: ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে গ্রাম্য সালিশ না মানায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কোরবানপুর গ্রামের ৩ পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কাজল আহমদ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার ভাই আকমল হোসেন ও সমাজচ্যুত অন্য একটি পরিবারের সদস্য জুবেল আহমদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার দাদার ভাই তোরাব আলীর নাতী পাখি মিয়ার সঙ্গে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সালিশকারী ও পঞ্চায়েত কমিটিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে গেলে তারা উভয়পক্ষের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জামানত নিয়ে সালিশের সময় দেন ২০২০ সালের ১৯ জুন। সালিশের দিন জায়গার কাগজপত্র নেন। সালিশে তিনি কাগজ অনুযায়ী ন্যায় বিচারের দাবি করেন। রেকর্ডে এক শতাংশ জায়গার মালিক হলেও গ্রাম্য পঞ্চায়েতে সালিশকারীরা তাদের জায়গা বুঝিয়ে দেননি। পরে ন্যায় বিচারের জন্য গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা (মামলা নং ৯৭/২০২০ ইং) দায়ের করা হয়। আদালতে মামলা করায় সালিশকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ৫ ডিসেম্বর বাড়িতে বসে তার পরিবারকে কোরবানপুর গ্রাম থেকে সমাজচ্যুত করে। সালিশকারীরা এলাকার লোকদের তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে না যাওয়ার জন্য কঠোরভাবে নিষেধ দেয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে তাদেরও পরিণতি তার মতো হবে। সমাজচ্যুত করার পর মসজিদের ইমামের বেতন ও মক্তবের জন্য সাপ্তাহিক যে চাঁদা নেওয়া হতো তাও নিতে নিষেধ করা হয়। এই নিষেধের ফলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ বকেয়া টাকা আদায় সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য তিনি অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমনকি তার পরিবারের কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে বাড়িতে না যাওয়ার জন্য নিষেধ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সমাজচ্যুত করার কারণে গত ১৪ ডিসেম্বর চরম দুর্ব্যবহার, স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায়ে বিভিন্ন ধরনের বাধা বিপত্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লোকজন না আসা এমনকি গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে না দেওয়াসহ স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি, মৌলিক অধিকার হরণ, মানবাধিকার লঙ্গনের জন্য বিবাদী পাখি মিয়া, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া, সদস্য চেরাগ মিয়া, চুনু মিয়া, হান্নান মিয়া, কাদির মিয়ার নাম উল্লেখ করে সমাজচ্যুত করার কারণ জানতে চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। ওই লিগ্যাল নোটিশের কোনো সন্তোষজনক জবাব তারা দেয়নি। উপরন্তু তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোয় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সালিশকারীরা বিবাদী পাখির মিয়ার বাড়িতে আবারও বসে তাদের ৫ বছরের জন্য চুড়ান্তভাবে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

কাজল আহমদ অভিযোগ করে বলেন, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া প্রভাবশালী লোক। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ কথা বলতে চায় না। তার বিরুদ্ধে কেউ গেলে তাদেরও সমাজচ্যুত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, সালিশে আমাদের জমাকৃত টাকা ও জায়গার কাগজপত্রাদি সমূহ সালিশকারীরা আমাদের এখনো বুঝিয়ে দেননি। এছাড়াও বর্তমানে তাদের ছেলে-সন্তানরা মক্তবে গিয়ে কোরআন শিক্ষা করতে পারছে না সমাজচ্যুতের কারণে। তাদের সমাজের অন্য ছোট্ট সন্তানরা হেয় করে কথা বলছে। যে জন্য তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা শঙ্কিত।

এ বিষয়ে গ্রাম্য পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বর্তমানে আমি ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে কোনো কথা বলবো না। তবে পঞ্চায়েত কমিটির অপর সদস্য চুনু মিয়া সমাজচ্যুতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

ভূকশীমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এই পঞ্চায়েত কমিটির মধ্যে সমস্যা আছে। তারা একেক সময় একেক পরিবারকে সমাজচ্যুত করে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। এরকম হয়ে থাকলে ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। সভ্য সমাজে এরকম সমাজচ্যুতের ঘটনা ঘটতে পারে না। আইন অনুযায়ী সমাজচ্যুত করার কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২১
বিবিবি/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।