মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল ডাসার। তখন কালকিনি উপজেলার একটি ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিতি ছিল ডাসারের।
২০১২ ফেব্রুয়ারিতে ডাসারে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপিত করা হয়। পরের বছর মার্চে গিয়ে কালকিনি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গড়ে তোলা হয় ডাসার থানা।
থানা গঠনের আগে থেকেই ডাসারে একটু একটু করে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে থাকে। প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে তৈরি হতে থাকে রাস্তাঘাট। থানা গঠনের পর উন্নয়নের পালে যেন হাওয়া লাগতে থাকে। রাস্তা-ঘাট, বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হতে থাকে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাতেও পরিবর্তন আসতে শুরু করে।
ডাসারের স্থানীয়রা জানান, ডাসার মূলত একটি নিচু এলাকা। বিস্তৃর্ণ বিল রয়েছে ডাসারে। বর্ষায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাইলের পর মাইল এলাকার ফসলি জমি। আনুমানিক গত ২০ বছর ধরে ডাসারকে ঘিরে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রাস্তাঘাট হওয়ার পর সাধারণ মানুষও রাস্তা সংলগ্ন এলাকা ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন। ধীরে ধীরে বিল-অঞ্চল বলে খ্যাত ডাসার এলাকাটি হয়ে উঠছে আধুনিক।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ডাসারকে আধুনিক এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ব্যপক অবদান রয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে জনপদে আধুনিকতার বিকাশ ঘটতে শুরু করে। মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যে-কর্মসংস্থানেরও সংস্থান হতে থাকে। চলতি বছরের ২৬ জুলাই ডাসারকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ডাসার উপজেলায় তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং পাঁচটি ইউনিয়নে কমপক্ষে ২০টি মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। কলেজগুলোর মধ্যে ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের শশীকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় এবং ডাসার ইউনিয়নের সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজটি বেশ পরিচিত। এছাড়াও ডি কে আইডিয়াল সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমি অ্যান্ড কলেজ নামে একটি কলেজও রয়েছে ডাসারে।
কালকিনি উপজেলা সদর থেকে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকে করে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যেই ডাসারে পৌঁছানো যায়। কালকিনি উপজেলা থেকে ডাসারে যাওয়ার সড়ক পথ বেশ প্রশস্ত এবং মসৃণ। ডাসারের বর্তমান প্রাণকেন্দ্র বলতে বোঝায় সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজে প্রবেশের সড়ক থেকে শুরু করে ডাসার থানা পেরিয়ে ডি কে আইডিয়াল সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমি অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত সড়কটি ঝকঝকে ও দৃষ্টিনন্দন। দু’টি কলেজ, সৈয়দ আবুল হোসেনের বাড়ি, পুকুরের মধ্যে ঘোড়ার ভাস্কর্য, হেলিপ্যাড, দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ সব কিছু মিলিয়ে বেশ নান্দনিক ডাসারের এ জনপদটি। সৈয়দ আবুল হোসেনের বাড়ি ও কলেজের বাইরে সড়কের পাশেই রয়েছে বিশাল পুকুর। চারপাশে শান বাঁধানো পুকুরের পাড় সাজানো হয়েছে নারিকেল গাছে। পুকুরের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি ঘোড়ার ভাস্কর্য-ফোয়ারা।
ছায়াঘেরা-পাখিডাকা বেশ মনোরম পরিবেশের কারণে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এ ডাসারে। তবে উপজেলার প্রশাসনিক বিভিন্ন ভবন তৈরি হয়ে গেলে গ্রামের মধ্যে এক টুকরো শহরে পরিণত হবে ডাসার উপজেলা। বর্ষায় প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি দেখা যাবে। ধুধু বিলে ফুটবে শাপলাসহ নাম না জানা জলজ ফুল।
ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকচালক মো. ইদ্রিস বলেন, বিকেল হলে বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষ আসে এখানে ঘুরতে। কালকিনি বা ভুরঘাটা থেকে ইজিবাইক ভাড়া করে নিয়ে আসে। দুই/তিন ঘণ্টা ঘুরে ফিরে যায়। মাদারীপুর শহর থেকেও আসে অনেকে। তবে বিকেলের দিকে লোকজনের সংখ্যা বেশি থাকে। বর্ষাকালে ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ে।
স্থানীয়রা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি শেখ হাসিনা উইমেন্স কলেজটি নারী শিক্ষার জন্য বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজটি বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে এসে ছাত্রীরা এখানে ভর্তি হচ্ছে। ক্যাম্পাসের মধ্যে ছাত্রীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে এখানে। কলেজ ক্যাম্পাসে আরো একাডেমিক ভবন হচ্ছে। কলেজটি শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়তার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে এখানকার মনোরম পরিবেশ। পরিচ্ছন্ন, শান্ত-স্নিগ্ধ প্রকৃতি চারপাশে। যেন এক ধরনের পার্ক। পরিবেশের কারণে এক ধরনের ভালো লাগা তৈরি হয় জায়গাটির প্রতি। বিকেলে মসৃণ রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়ানো, ফুরফুরে বাতাস। সব মিলিয়ে পুরো জায়গাটি মনে হয় মনোরম একটি পার্ক!
সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে পরিচিতি পেয়েছে ডাসার। এখানে খুব সুন্দর সুন্দর স্থাপনা এবং মানসম্মত লেখাপড়ার জন্য একাধিক স্কুল-কলেজ রয়েছে। ডাসার এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ চমৎকার। যেহেতু উপজেলা হয়েছে, সেহেতু এখানে আরো উন্নয়ন হবে। বিভিন্ন এলাকা থেকে শুধুমাত্র ঘুরতে এখানে প্রতিদিনই লোকজন আসে।
ডাসার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, উপজেলা ঘোষণার মধ্য দিয়ে ডাসারবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে। ডাসারকে আধুনিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের দিক দিয়ে ডাসার চমৎকার এলাকা। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের পর বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে ঘুরতে আসে এখানে। আগামীতে ডাসারকে ঘিরে পর্যটনের বিকাশ ঘটবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। আশা করি, একটি আধুনিক উপজেলা হিসেবে গড়ে উঠবে আমাদের ডাসার।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, সরকার ডাসারকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি। যত দ্রুত সম্ভব সব ধরনের কার্যক্রম শুরু করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।
মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার একটি ইউনিয়ন 'ডাসার'। প্রাকৃতিকভাবে সবুজে ঘেরা। আর বর্ষায় পানিতে টইটুম্বুর জলাভূমি ডাসারের সৌন্দর্যের মধ্যে অন্যতম। একটি ইউনিয়ন থেকে ক্রমান্বয়ে উপজেলায় উন্নীত হওয়ায় ডাসারের জনগণের স্বপ্নের পথ আরও প্রশস্ত এখন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নগরায়নের মধ্য দিয়ে এ এলাকাটি হয়ে উঠবে একটি আধুনিক সবুজে নগরী- এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
এসআই