ঠাকুরগাঁও: শীত এলেই শুরু হয় তাঁতীদের ব্যস্ত সময়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে খট খট শব্দে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়নের কেশুরবাড়ির গ্রামের তাঁত পল্লীতে চলে শীতের কম্বল তৈরির কাজ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৪নং বড়গাঁও ইউনিয়নের কেশুরবাড়ি গ্রামের তাঁতী সুজন দাস বলেন, এটা আমার দাদার দাদা করছিল তার পর আমার দাদা ও বাবা করেছেন এখন আমি দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে কম্বল তৈরি করি। শুধু আমি না আমার পরিবারের সবাই করে। আগে লাভ ছিল এখন নাই। সুতার দাম বেশি। সুতা পাওয়া যায় না। পরিবারের সবাই কাজ করে অল্প কিছু পাই। কম্বল তৈরি করে বিক্রি করে যা টাকা পায় তা দিয়ে কোনো মতো টেনে টুনে সংসার চালিয়ে নেই।
সবুজ দাস বলেন, এক সময় হামার(আমার) গ্রামত(গ্রামে) প্রায় ৭০০ পরিবার কম্বল তৈরি করিছিন(করেছে)। লাভ কম হয়, এজন্য দিন দিন এই পেশা অনেকে ছাড়ে দিছে। গতবার ৪০ পরিবার কম্বল তৈরি করেছে এবার করছে ২০-২৫টি। কেউ আর এই পেশাত থাকিবার চাহে না। এখন লাভ কম, সুতার দাম বেশি। হামরা সুদের পর টাকা নিয়ে কম্বল তৈরির কাজ শুরু করিছি।
তাঁত কারিগর অনামিকা দাস বলেন, আমার যখন বিয়ে হয় আমার শ্বশুড় কম্বল তৈরির কাজ করতেন। আগে আমি কম্বল তৈরির কাজ জানতাম না আমার শ্বশুরের কাছে দেখে দেখে আমি শিখেছি। এখন আমার বয়স প্রায় ৫৫বছর এখনও আমি এই কম্বল তৈরির কাজ করি। আমার সঙ্গে আমার বউমা ও ছেলে করে।
মিলন দাস বলেন, শীতের ৪ মাস হামরা কম্বল তৈরি করি। গরমের সময় কম্বল তৈরি করার কাজ থাকে না। তখন শহরে গিয়ে রিক্সা চালাই। বাপ দাদার পেশা ছাড়তেও পারি না। তাই দাম কম আর বেশি ধরে আছি বাপ-দাদার পেশা।
কম্বল কিনতে আসা পাইকার আজিজুল হক বলেন, আমি ১০ বছর ধরে কম্বলের ব্যবসা করি। শীত এলেই ৪ মাস ভালোই হয় আমার ব্যবসা।
তারা জানান, পুঁজির অভাবে তাঁতীরা এ ব্যবসায় আগের মতো আর বিনিয়োগ করতে পারছেন না। বেশির ভাগ তাঁতীই পুঁজি জোগাতে মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের জালে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে সুদ পরিশোধেই চলে যাচ্ছে তাঁতীর পুঁজির বড় অংশ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, তাঁতশিল্প ধরে রাখার জন্য এখন তাঁতীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি চেষ্টা করবো তাদের জন্য সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা ও লোনের ব্যবস্থা করার।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
এসআইএস