ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মুক্ত হয় কুষ্টিয়া

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মুক্ত হয় কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়া: আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে কুষ্টিয়াকে হানাদার মুক্ত করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২টি যুদ্ধ শেষে ১১ ডিসেম্বর বৃহত্তর কুষ্টিয়া মুক্ত হয়েছিল। মুক্তিবাহিনী, ভারতীয় মিত্রবাহিনী কুষ্টিয়া শহর দখল নিতে কুষ্টিয়া শহরতলী চৌড়হাসে পৌঁছালে পাকিস্তান বাহিনীর অ্যাম্বুশে পড়ে। পরে ত্রিমুখী যুদ্ধে পাকিস্তানবাহিনী পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর মুক্ত হয় কুষ্টিয়া।  

পাকিস্তান বাহিনীর অপারেশন সার্চ লাইটের আওতায় ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় যশোর থেকে পাকবাহিনী এসে কুষ্টিয়া দখল করে নেয়। এবং এক নাগাড়ে ৩০ ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য আইন জারি করে সশস্ত্র অবস্থায় কুষ্টিয়া শহরে টহল দিতে থাকে। সান্ধ্য আইন ভেঙে মুক্তিকামী মানুষ বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। তৈরি করে বেরিকেড। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ ইট-পাটকেল, কাটা গাছের গুঁড়ি, ঘরের চাল নিয়ে এসে সেনাবাহিনীর চলাচল বিঘ্ন করার উদ্দেশে বেরিকেড তৈরি করে। সেনাবাহিনী সেগুলো সরিয়ে মারমুখী হয়ে ওঠে। পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ।

৪ ডিসেম্বর খোকসা, ৭ ডিসেম্বর মিরপুরের আমলাসদরপুর, ৮ ডিসেম্বর দৌলতপুর, মিরপুর, ভেড়ামারা, ৯ ডিসেম্বর কুমারখালী এবং ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্ত হয়। ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসের ৫দিন আগেই শত্রুমুক্ত হয় এই জনপদ।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বংশীতলাযুদ্ধসহ ২২টি যুদ্ধ শেষে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী কুষ্টিয়া দখল নিতে আসছিল। ঠিক তখন ১০ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণে চৌড়হাস বিমান চত্বরে মেইন রাস্তার ওপর পাক হানাদার বাহিনীর অ্যাম্বুশে পড়ে তারা। শুরু হয় ত্রিমুখী যুদ্ধ। রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর ৭০ জন শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার সমস্ত এলাকা স্বাধীন ও শত্রুমুক্ত হয়।

১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহর স্বাধীন ও শত্রুমুক্ত হয়। তাই এ দিন আনন্দের হলেও বেদনারও দিন। কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় অবস্থিত কহিনূর ভিলায় ১৮ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এখানে শিশুসহ হত্যা করা হয় মোট ১৬ জনকে।

বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা ৮ নম্বর সেক্টরের অধীন ছিল। মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে এপ্রিল মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ২২টি ছোটবড় যুদ্ধ শেষে কুষ্টিয়া মুক্ত হয়।

কুষ্টিয়াতে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে অফিসিয়ালি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে জোনাল কাউন্সিলের সেক্রেটারি এম শামসুল হককে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার দেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার কবি, ছাত্র, সাহিত্যিক, শিল্পী, লেখকের ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।