ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সেতুর সঙ্গে সেলফি!

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
সেতুর সঙ্গে সেলফি!

মাদারীপুর: ‘যতোবারই ঢাকা যাওয়া-আসা করেছি। পদ্মাসেতুর কাছে লঞ্চ আসলেই ছবি তুলতে ইচ্ছা করে।

সেতুর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে একাধিক সেলফি তুলতে হবে। শুধু আমি না লঞ্চের অনেক যাত্রীদেরই এসময় ছবি তুলতে দেখা যায়। কেউ গ্রুপ ছবি তুলে। কেউ সেলফি আবার কেউ ভিডিও করে থাকে। ’

কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা এলাকার যুবক রুবেল। তিনি ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে লঞ্চে করে পদ্মানদী পার হচ্ছিলেন। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে লঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি এই মনোভাব ব্যক্ত করেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘পদ্মাসেতু চালু হলে আমরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবো। এখন ঢাকা যাওয়া আসার ক্ষেত্রে যে কষ্টটা হচ্ছে, সময় ব্যয় হচ্ছে, এই সমস্যা আর থাকবে না। যখন-তখন প্রয়োজনে দ্রুত ঢাকা পৌঁছানো যাবে। আর এ কারণেই পদ্মাসেতু আলাদা বিষয় মনে হয়। লঞ্চ সেতুর কাছাকাছি এলেই লঞ্চের যাত্রীরা ব্যস্ত হয়ে পরে ছবি তুলতে। এটা একটা আবেগ!’

এসময় কথা হয় মো. জোবায়ের নামে আরেক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি সেতুর ল্যান্ডস্কেপ ছবি নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তখন দিনের ক্লান্ত সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়তে শুরু করেছে। সূর্যের আলোকছটা পদ্মার পানিতে সোনারঙ ছড়াচ্ছে। পদ্মাসেতু আর নদীর এই সৌন্দর্যকে ক্যামেরা বন্দি করতে করতে তিনি বলেন, ‘এখন বেশিরভাগ সময় লঞ্চেই পার হই। লঞ্চে পার হলে খুব কাছ থেকে সময় নিয়ে পদ্মাসেতু দেখা যায়। পুরো সেতুকে ভালোভাবে সময় নিয়ে দেখতে পারি। ছবিও তুলি। বেশ আনন্দ লাগে। একটা গর্ববোধ করি ভেতরে ভেতরে। ’

জান্নাতুল প্রভা নামের এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী বলেন, ‘সেতুর কাছাকাছি আসতেই লঞ্চের ভেতর থেকে বাইরে বের হয়ে আসি। সেতু দেখার মধ্যে এক ধরনের মুগ্ধতা কাজ করে। আর সেতুর ছবি তো তুলতেই হবে। যখন উপর দিয়ে যাবো তখন তো সেতুর ছবি এরকম করে তোলা যাবে না। ’

সরেজিমেন মঙ্গলবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজারগামী একটি লঞ্চে অবস্থান করে দেখা গেছে, ‘লঞ্চটি সেতুর কাছাকাছি আসতেই সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের ব্যস্ততা কাজ করছে। লঞ্চের ভেতরে বসে থাকা কেউ কেউ তখন বাইরের ডেকে এসে দাঁড়াচ্ছেন। সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন। আর সেতু নিয়ে নানা আলাপন তখন চলতে থাকে বয়স্কদের মধ্যে। লঞ্চের সামনে, দুইপাশে এবং সেতু পেরিয়ে গেলে পেছনে দাঁড়িয়ে অসংখ্যা যাত্রীরা ছবি এবং সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এসময় লঞ্চের মাস্টার ও চালকেরা বলেন, ‘সেতুর কাছাকাছি লঞ্চ আসলেই যাত্রীদের মধ্যে একটা হুড়িহুড়ি ভাব দেখা যায়। ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠে সবাই। অনেকে লঞ্চের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা নিষেধ করি। কারণ, লোকজন সামনে চলে আসলে আমাদের সমস্যা হয়। কিন্তু কিছুই করার থাকে না। যাত্রীরা নিষেধ শোনে না। পরে ভাবি এটাও এক ধরনের আনন্দ। পদ্মাসেতু হলে যদিও লঞ্চ আর থাকবে না এই নৌরুটে। তারপরও চাই সেতু চালু হোক দ্রুত। পদ্মাসেতু আমাদের অহংকার। ’

সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। সোনালী আলোর ছটা দিগন্তে, পদ্মার টলমলে পানিতে। চোখের সামনে দীর্ঘ অবয়বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে পদ্মাসেতু! দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন। পদ্মার ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ কেটে লঞ্চ এগিয়ে চলে গন্তব্যে। চোখের সামনে ক্রমেই এগিয়ে আসে স্বপ্নের সেতু। তখন যাত্রীদের চোখজুড়ে থাকে শুধুই মুগ্ধতা!

বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।