ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ভাড়া করা অস্ত্র দিয়ে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২
ভাড়া করা অস্ত্র দিয়ে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা

ঢাকা: চট্টগ্রামের সাততকানিয়ায় খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র আনা হয়েছিল ভাড়া করে। অতিউৎসাহী হয়ে সমর্থিত প্রার্থীকে জেতাতে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন তারা।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

জানা যায়, যার কাছে অস্ত্র ভাড়া করে আনা হয়েছিল তার বিষয়ে তথ্য মিললেও এখনও তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে সহিংসতায় নেতৃত্বদানকারী মো. কায়েসসহ আটজনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে পৃথক অভিযানে চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও ঢাকার তেজকুনিপাড়া থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।

আটকরা হলেন- নাসির উদ্দিন (৩১), মো. মোরশেদ (২৬), কোরবান আলী (৩৭), মো. ইসমাঈল (৫৫), মো. জসিম (২৪), মো. মিন্টু (২৬), মো. কায়েস (২২) ও মো. নুরুল আবছার (৩৩)। এদের মধ্যে ঘটনার দিন অস্ত্রসহ যাদের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তারাও রয়েছেন।

তাদের দেখানো মতে সাতকানিয়ার খাগরিয়া থেকে ৩টি একনলা বন্দুক, ১টি দোনলা বন্দুক, ১টি ওয়ান শুটারগান, অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র ও ৪২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কায়েসের নেতৃত্বে সহিংসতা ঘটানো হয়। কায়েস কার কাছ থেকে অস্ত্র পেয়েছিল, এ বিষয়ে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। তবে তাকে এখনও আটক করা সম্ভব হয়নি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতি উৎসাহী হয়ে নিজের সমর্থিত প্রার্থীদের জেতাতে সহিংসতা ঘটানো হয়। তবে প্রার্থীরা বলেছেন- এরা তাদের লোক না। আটকরা কারো নির্দেশে সহিংসতা ঘটিয়েছে কি-না এমন কোন তথ্য দেয়নি।

নির্বাচন কমিশন খাগরিয়া ইউনিয়ন নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত রেখেছে। সহিংসতার জন্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না এটি নির্বাচন কমিশনের বিষয় বলেও জানান তিনি।

অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জানুয়ারি মাসেই চট্টগ্রাম, সাতকানিয়া, টেকনাফে অস্ত্র কারখানাসহ ১৭৫টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এ ধরনের অভিযান ও র‌্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান আছে।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো কে কোন দলের সেটি মুখ্য বিষয় নয়। যারাই সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাবে তাদেরকেই আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে। আটক ৮ জনের মধ্যে উভয় প্রার্থীরই সমর্থিত লোক রয়েছেন।

আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সহিংসতায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে উল্লেখ করে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, কায়েস গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি এর আগেও সাতকানিয়ায় বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করা কায়েস বিভিন্ন মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে দলের সদস্যদের সরবরাহ করতেন।

সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে কায়েসের নেতৃত্বে জসিম, মোর্শেদ, মিন্টু, আবছারসহ আরও শতাধিক সন্ত্রাসী সহিংসতা চালায়। পরে কায়েস ঢাকায় আত্মগোপন করে।

গ্রেফতার নাসির একটি কোম্পানির চট্টগ্রাম বন্দর শাখার কর্মচারী। সহিংসতাকালীন নাসিরকে মেরুন রংয়ের মাফলার ও মুখে লাল-সবুজ মাস্ক পরিহিত অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক হাতে দেখা যায়। ঘটনার পর সে বান্দরবানের গহীন জঙ্গলে আত্মগোপন করে।

আবছার ঢাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যখনই সাতকানিয়ায় কোন সহিংসতার সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন সেখানে চলে যান তিনি। ঘটনার পর সে ঢাকায় চলে আসে ও আত্মগোপন করে।

বাকিদের পেশায় কেউ সিএনজি চালক, রাজমিস্ত্রি, গাড়ি চালক, নিরাপত্তাকর্মী, জমির দালাল হলেও সহিংসতার সময় সরাসরি অংশ নেয়। ঘটনার পরর তাৎক্ষনিকভাবে যার কাছ থেকে অস্ত্র ভাড়া এনেছিল তাকে ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই স্থানীয় কবরস্থান ও পুকুরপাড়ে অস্ত্রগুলো লুকিয়ে রাখে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২
পিএম/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।