ঢাকা, সোমবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ জুন ২০২৪, ১৬ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

নেইম্রা মারমা: বিন্দু থেকে সিন্ধু

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
নেইম্রা মারমা: বিন্দু থেকে সিন্ধু

খাগড়াছড়ি: এই যেন আঁধার ভেদ থেকে আলোয় আলোকিত হওয়ার গল্প। যখন জীবনের পথ খুঁজে পাচ্ছিল না তখন নিজের ইচ্ছে শক্তিতে এখন বিন্দু থেকে সিন্ধুতে খাগড়াছড়ির নেইম্রা মারমা।

অল্প পুঁজিতে স্বপ্ন পূরণের বাসনা নিয়ে শুরু করা নেইম্রা মারমার ‘স্বপ্নচূড়া রেস্তোরা’ এখন জেলার অনুকরণীয় প্রতিষ্ঠান।

এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ করে যখন চারদিক অন্ধকার দেখছিলেন তখনই কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখেন নেইম্রা মারমা। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ‘স্বপ্নচুড়া’ নাম দিয়ে রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করে নেইম্রা। শুরুতে ছোট্ট একটি রুমে একটি টেবিল ও ছয়টা চেয়ার নিয়ে যাত্রা শুরু। আর পুঁজি বলতে নিজের জমানো সাত হাজার টাকার সঙ্গে লোন নেওয়া আরও ১০ হাজার টাকা।

শুরুর দিকে রেস্তোরাঁয় যেখানে ৮/১০জন বসার সুযোগ ছিল। এখন সেখানে খোলামেলা মনোরম পরিবেশে বসতে পারবে প্রায় ৭০ থেকে ৮০জন। রেস্তোরাঁর বেচাকেনার সঙ্গে বাইরে থেকেও সমানতালে অর্ডার হয়। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। খাবারের গুণগত মান. পরিবেশন ও পরিবেশের কারণে দিন দিন প্রতিষ্ঠানটিতে বাড়ছে কাস্টমারের সংখ্যা।

নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি অন্য নারীদেরও অনুকরণীয় এখন নেইম্রা মারমা। বর্তমানে মোট ৮জন নারী নেইম্রার রেস্টুরেন্টে কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন অধ্যায়নরত। নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সংসারেও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন কয়েকজন।

খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত মাসাচিং মারমা বলেন, পড়াশনার পাশাপাশি দিদির (নেইম্রা) রেস্তোঁয়ার কাজ করছি। এখান থেকে যে টাকা আয় হয় নিজের পড়াশুনাসহ থাকা খাওয়ার খরচ হয়ে যায়। পরিবার থেকে টাকা নিতে হয় না। ভবিষ্যতে আমিও উদ্যোক্তা হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।

খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত দিপিকা ত্রিপুরা বলেন, পারিবারিত আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো নয় যে নিজের জন্য টাকা চাইতে পারব। এখন রেস্তোঁরায় কাজ করে যা পাই তা দিয়ে আমার হয়ে যায়। আর রেস্তোরাঁ কলেজ সংলগ্ন হওয়ায় আরও সুবিধা হয়েছে।   

অল্প দিনেই নেইম্রার দোকানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে বাড়তে থাকে চাহিদা। শুরুর দিকে এক কক্ষে একটি টেবিল ও কয়েকটি চেয়ার দিয়ে বাড়ি থেকে তৈরি করা হরেক রকম নাস্তা বিক্রি শুরু করি। এখন সবার সহযোগিতায় এখন ব্যবসার পরিধি বড় হয়েছে। চাহিদা বাড়ায় পাশের আরেকটি কক্ষ এবং বিশাল একটি খোলা জায়গা নিয়ে স্বপ্নচূড়া।

প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে জম্পেশ আড্ডাস্থলে পরিণত হয় শহরের অদূরের এ রেস্টুরেন্ট। নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশের স্বপ্নচূড়া মুগ্ধ করছে সবাইকে।  যে পড়াশুনায় খারাপ রেজাল্ট করে ভেঙে যাওয়া নেইম্রা ব্যবসায়ীকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাস করেছেন।

নেইম্রা মারমা বলেন, শুরুর দিকে তেমন কারো সহযোগিতা পাইনি। বরং রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছি দেখে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে, নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে আমি এতটুকু আসতে পেরেছি।

তিনি বলেন, ব্যাংক যদি নারী উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিতো তাহলে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হতো। যাদের ইচ্ছা থাকা শর্তে ও  আর্থিক অভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছেন না।

নেইম্রার ইচ্ছা তার স্বপ্নচূড়ায় একদিন আরও অনেক নারীর কর্মসংস্থান হবে। আরো সৃষ্টি হবে নারী উদ্যোক্তা। নেইম্রা আরও এগিয়ে যাক এমটাই আশা করেন এলাকাবাসীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২২
এডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।