ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ভূমধ্যসাগরে স্পিডবোট ডুবি: নিখোঁজ ১৫ জনের পরিবারে শোক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
ভূমধ্যসাগরে স্পিডবোট ডুবি: নিখোঁজ ১৫ জনের পরিবারে শোক গ্রেফতাররা

নরসিংদী: ভূমধ্যসাগর পারি দিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ২৮ জনের মধ্যে ১৫ জনের বাড়িই নরসিংদীতে। ঘটনার ৩৭ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সন্ধান না পাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, তাদের সবার মৃত্যু হয়েছে।

ফলে নিখোঁজ পরিবারগুলোতে বইছে স্বজন হারানোর শোক। আর বেঁচে যাওয়া ৬ জনের মধ্যে নরসিংদীর একজন দেশে ফিরেছে।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নরসিংদীতে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।  

সোমবার (৭ মার্চ) রাতে রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ এলাকায় পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। পরে মঙ্গলবার দুপুরে তাদের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়।  

রায়পুরা থানার উপ-পরিদর্শক আতাইর রহমান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতাররা হলেন- রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার বাচ্চু মোল্লার ছেলে মামুন মোল্লা (৩৯) ও আগানগর এলাকার কালীপদ শীলের ছেলে সুবল চন্দ্র শীল (৪৫)। সুবল লিবিয়া প্রবাসী মনি চন্দ্র শীলের চাচাতো ভাই।
 
পুলিশ জানায়, রায়পুরার আগানগর এলাকার বাসিন্দা মনি চন্দ্র শীল প্রায় ৫ থেকে ৬ বছর ধরে লিবিয়ায় চাকরি করছেন। তিনি হাসনাবাদ এলাকার বাসিন্দা তারেক মোল্লা ও মামুন মোল্লাসহ তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে ইতালী নিয়ে যাবে বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা আদায়সহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা আশিষ সূত্র ধর (২১), মো. আলামিন ফরাজী (৩০), নাদিম সরকারকে (২২) বৈধ পথে ইতালি নেওয়ার কথা বলে আট লাখ টাকা মৌখিকভাবে চুক্তি বদ্ধ হয়। দেশ ছাড়ার আগে ছয় লাখ টাকা তাদের দেওয়া হয়। বাকি টাকা ইতালি পৌঁছার পর দেওয়ার কথা ছিল। পরে গত ৩০ নভেম্বর আশিষ সূত্রধর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ইতালির উদ্দেশে রওনা হয়। পরবর্তীকালে আশিষ সূত্রধরকে দালাররা ইতালি না পাঠিয়ে লিবিয়া পাঠায়। লিবিয়া পৌঁছার পর থেকে আশিষ সূত্রধর লিবিয়া অবস্থান করছে বলে মোবাইলে তার পরিবারকে জানায়। গত ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে আশিষ সূত্রধরের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ছেলের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে জানার জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার ছেলে ইতালি আছে বলে জানায় এবং অবশিষ্ঠ দুই লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। দালাররা আলামিন ফরাজী (৩০) এবং নাদিম সরকারসহ (২২) রায়পুরা থানা এলাকার আরও একাধিক যুবককে বিভিন্ন সময়ে একই কায়দায় ইতালির কথা বলে লিবিয়া বা অন্য কোনো দেশে পাচার করেছে বলে জানা যায়।

রায়পুরা থানার উপ-পরিদর্শক আতাইর রহমান বলেন, রোববার এ ঘটনায় উপজেলার আমিরগঞ্জ এলাকার দুই দালাল মো. তারেক মোল্লা ও লিবিয়া প্রবাসী মনি চন্দ্র শীলের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় নিখোঁজ আশিষ, আল আমিন ও নাদিমের পরিবার লিখিত অভিযোগ করে। পরে সোমবার রাতে রায়পুরা উপজেলায় গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামুন মোল্লা ও সুবল চন্দ্র শীলকে গ্রেফতার করে। মানব পাচারকারী এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সব আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এর আগে ২৭ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে ৩৫ যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট ডুবির ঘটনা ঘটে। নরসিংদীর নিখোঁজ ১৫ জন হলেন- রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ মির্জানগর পূর্বপাড়া এলাকার ওসমান গণির ছেলে এস এম নাহিদ (২৮), হাসনাবাদ বাজারের অনিল সূত্রধরের ছেলে আশিষ সূত্রধর (২২), হাইরামা ইউনিয়নের কবির মিয়ার ছেলে শাওন মিয়া (২২), আগানগর এলাকার আব্দুল করিম ভূঁইয়ার ছেলে ইমরান ভূঁইয়া (২১), বালুয়াকান্দি এলাকার সবুজ মিয়া (৩৮), দড়ি হাইরামার ইয়াকুব আলীর ছেলে সেলিম (৩৪), ডৌকারচর ইউনিয়নের সোবহান সরকারে ছেলে নাদিম সরকার (২২), বাচ্চু ফরাজীর ছেলে আল আমিন ফরাজী (৩৩) ও আলমগীর সরকার। বেলাব উপজেলার হালিম মিয়া, নারায়ণপুর ইউনিয়নের ভাটেরচর গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে আল আমিন (২৫), সল্লাবাদ ইউনিয়নের ইব্রাহীমপুর এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিন, হাবিবুর রহমানের ছেলে শরিফুল ইসলাম ও নারাণপুর ইউনিয়নের দুলালকান্দি এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মতিউর রহমান ও বাচ্চু মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (২৫)।

স্পিডবোট ডুবির ঘটনায় বেঁচে থাকা ছয়জনের মধ্যে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জের ইউসুফ মৃধা গত বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন।  

তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২৭ জানুয়ারি লিবিয়ার স্থানীয় সময় ৮টার দিকে দুই মিসরীয় চালক তাদের ২৫ জনের ধারণক্ষমতার স্পিডবোটে ৩৫ জনকে নিয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন। এসময় আমাদের কোনো লাইফ জ্যাকেট বা কোনো ধরনের সেফটি ইকুইপমেন্ট কাউকে দেওয়া হয়নি। ভূমধ্যসাগর পারি দেওয়ার সময় পড়ে যাওয়া একজনকে তুলতে গিয়ে স্পিডবোডটি উল্টে যায়। ওই সময় তিনিসহ আরও সাতজন উল্টো স্পিডবোটের ওপরে অবস্থান নেন। বাকিরা ঢেউরের ধাক্কায় ভেসে যান। তীব্র ঠাণ্ডায় ১১ ঘণ্টা ভেসে থাকার পর কোস্টগার্ডের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেন। তবে তীরে ওঠার আগেই ঠাণ্ডায় জমে একজনের মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।
 
এদিকে নিখোঁজ হাসনাবাদ বাজারের আশিষ সূত্রধরের ভাই আনন্দ সূত্রধর বলেন, তারেক মোল্লা যুবকদের ইতালি যেতে প্রলোভন দেখাতেন। আশিষকে দুবাই ও মিসর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজিতে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ত্রিপোলি নিয়ে বেশ কিছুদিন রাখা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি আশিষ শেষবারের মতো ফোন করে জানায়, রাতে স্পিডবোটে করে তাদের ইতালি পৌঁছে দেওয়া হবে। চারদিন আগে দেশে ফেরা ইউসুফের মাধ্যমে জানতে পারি স্পিডবোট ডুবির ঘটনা। পরে ভাইয়ের সন্ধান চেয়ে তারেক মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আশিষ এখনো জীবিত আছে, কিন্তু তাদের কথায় আমরা আশ্বস্ত হতে পারছিনা, ভাইয়ের পরিণতি নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।