ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোবাইল চুরির অপবাদে নারীকে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
মোবাইল চুরির অপবাদে নারীকে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল!

পঞ্চগড়: মোবাইল চুরির অপবাদে পঞ্চগড়ে মজিদা বেগম (২৬) নামে এক নারীর কোমড়ে রশি বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট বাজারে ঘটনাটি ঘটেছে।

এ ঘটনার মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি ভ্যান গাড়িতে এক নারীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন কয়েকজন নারী। এর মধ্যে এক ব্যক্তি ওই নারীকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখছেন। আর তা দাঁড়িয়ে উপভোগ করছেন উৎসুক জনতা। তবে তর্কে জড়ানো নারী ও পুরুষের পরিচয় শনাক্ত করা না গেলেও তারা ঝলঝলি গ্রামের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

ভুক্তভোগী মজিদা বেগম পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বামনহাট ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আজিজুর রহমানের স্ত্রী। দুই সন্তানের জননী হলেও, সাংসারিক কলহের জেরে একই উপজেলার ঝলঝলি গ্রামে দিনমজুর বাবা মোজাম্মেল হকের বাড়িতে থাকেন।

জেমজুট বাজারের ভাই ভাই হোটেল ব্যবসায়ী মাসুম বিল্লা বাংলানিউজকে বলেন, সকালে দোকানের কাজ করছিলাম। হঠাৎ পঞ্চগড় থেকে একটি ভ্যানে দুই মহিলা ও একটা পুরুষ আমার দোকানের সামনে আসে। এর মধ্যেই তারা তর্কে জড়ায়। ভুক্তভোগী নারী একপর্যায়ে গালাগালি করে আমার দোকানে চলে আসেন। তাদের সঙ্গে থাকা ছেলেটি আমার পাশের দোকান থেকে লাঠি নিয়ে তাকে মারতে গেলে ওই নারীও তাকে মারতে যায়। এর মধ্যে ৮-১০ জন মহিলে এসে তাকে ধরে নিয়ে বেঁধে ভ্যানে করে নিয়ে যায়। জানতে পেরেছি তারা ঝলঝলি এলাকা থেকে এসেছে।

ওষুধ ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমি হঠাৎ অনেক লোকজনকে দেখতে পাই। এর মাঝে এক নারীকে ৮-১০ জন নারী আক্রমণ করছে। তাদের কাছে জানতে গেলে বলেন মোবাইল চুরি করেছে। তাই তাকে ধরতে এসেছে সবাই। পরে তাকে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায়। বিষয়টি আমার কাছেও খুব খারাপ লেগেছে। তাই মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করি।

অভিযোগ অস্বীকার করে ঝলঝলি গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান বাবুল বলেন, ওই মেয়েটি কারো কথা শুনে না, বাড়িতেও থাকে না। চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে। সর্বশেষ মোবাইল চুরি করায় লোকজন তাকে ধরে নিয়ে এসেছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মাধ্যমে একটি সালিশ করে তার বাবার হাতে মেয়েটিকে তুলে দিয়েছে গ্রামবাসী। তার এমন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সবাই।

প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম বলেন, মেয়েটা মানিকপীর এলাকায় তার এক দাদীর (বাবার খালা) বাড়িতে গিয়ে মোবাইল চুরি করে নিয়ে আসে। পরে জুটমিল এলাকায় তাকে ধরে মোবাইলসহ বাড়িতে নিয়ে আসে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মজিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমি বাড়ি থেকে ২-৩ দিন আগে ওই দাদির বাড়িতে (বাবার খালা) গিয়েছিলাম। যাওয়ার দিন বাড়িতে দাদিকে বাড়িতে না পেয়ে এক রাত আমার বান্ধবীর বাড়িতে থাকি। পরের দিন দাদি আসলে তাদের বাড়িতে যাই। এর মধ্যে আমার কল এসেছে বলে দাদি আমাকে কথা বলার জন্য মোবাইলটি দেয়। কথা বলার পর দাদিকে না পেয়ে আমি মোবাইলসহ বাড়ি চলে আসি। এর মধ্যে বাজারে এসে গ্রামের লোকজনসহ সবাই আমাকে চোর বলে মারধর করে বেঁধে বাড়িতে এনে দেয়।

ভুক্তভোগী মজিদার বাবা মোজাম্মেল হক বলেন, আমার খালার বাড়িতে গেছে মেয়েটি। পরে শুনতে পাই তাকে বাজারে ধরে বেঁধে মেরেছে। এখন তিনি আমার বাড়িতে আছে।  

এদিকে মা জাহেদা বেগম বলেন, মোবাইলের মাধ্যমে জানতে পারি মেয়ে মোবাইল চুরি করে নিয়ে এসেছে। আমরা বলেছি তিনি যদি নিয়ে আসে তো মোবাইল ফেরত দেব, না হয় নতুন কিনে দেব। কিন্তু তারা তাকে বাজারে বেঁধে মারধর করে বাড়িতে নিয়ে আসে। তাদেরও তো মা-বোন ও মেয়ে আসে। এমনটে কীভাবে করলো। আমরা কি বিচার চাইবো, উল্টো এমন কাজ করে আমার মেয়ের বিচার করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ গ্রামের লোক।

বোদা থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত না। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।