ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বোরো আবাদ রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সীমান্তের কৃষক

জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
বোরো আবাদ রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সীমান্তের কৃষক

শেরপুর: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ি এলাকায় ফের বন্যহাতির আক্রমণ শুরু হয়েছে। ফলে বন্যহাতির আক্রমণ থেকে চলতি মৌসুমের বোরো আবাদ রক্ষায় বন্যহাতি আতঙ্কে রয়েছেন কৃষকরা।



স্থানীয় কৃষকসহ এলাকাবাসী তাদের ফসল রক্ষায় গত কয়েক দিন ধরে মশাল জ্বালিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এতে পাহাড়ি সীমান্তে বসবাসকারী মানুষদের আতঙ্কের অন্ত নেই।

শনিবার (১২ মার্চ) সরেজমিনে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যহাতির ৪০/৫০টির একটি দল ভারতের সীমান্তঘেঁষা পানিহাটার তালতলার জঙ্গলে অবস্থান করছে। হাতির এই দলটি প্রায় প্রতিদিন উপজেলার নাকুগাও ও পানিহাটা এলাকা দিয়ে নেমে আসছে ফসলের জমিতে। গত কয়েক দিনের অব্যাহত হাতির অত্যাচারে নাকুগাও ও পানিহাটার ফেকামারিতে ১০ জন প্রান্তিক কৃষকের সাড়ে পাঁচ একর বোরো আবাদের ফসল পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করেছে হাতির দল। নাকুগাও এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমি নাকুগাঁও স্থলবন্দরে শ্রমিকের কাজ করে বাবা-মাসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতে হয়। ১৬ হাজার টাকা খরচ করে এক একর জমিতে বোরো ধান করেছি। গত সোমবার সন্ধ্যায় বন্যহাতির পালটি ক্ষেতে নেমে আমাদের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। বাকি ফসল রক্ষা না করতে পারলে আমাদের মহাবিপদে পড়তে হবে।

একই এলাকার প্রান্তিক কৃষক আলিম উদ্দিন বলেন, ঋণ কইরা ১০ কাডা (৪০ শতক) জমিতে বোরো ধান লাগাইছি। হঠাৎ কইরা হাতির পাল ক্ষেতে নাইমা পইড়া দুই কাডা জমি খাইয়া আর পাও (পা) দিয়া ফসল মাডির (মাটির) লগে মিশাইয়া ফালাইছে। গ্রামবাসী সবাই হইহেুাল্লুর কইরা ক্ষেত থাইকা হাতি সড়ানো অইছে। অহন রাইত জাইগা সবাই হাতি পাহারা দিতাছি।

পানিহাটা এলাকার কৃষক চানু, লিটন সাংমা ও মতি মিয়া কুবি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি মৌসুমে বন্যহাতির পাল আইসা আমগর ক্ষেত খাইয়া যায়। আমরা হাতির অত্যাচার থেকে কবে মুক্তি পাবো জানি না। গতকাল রাইতেও ক্ষেতের ধানগুলো নষ্ট কইরা গেল হাতির পাল।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান ও কয়েকজন কৃষক জানান, প্রায় ১৫-২০ বছর আগে ৬০-৭০টি বন্যহাতি ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও ভারতের বিএসএফ সদস্যদের বাধার কারণে হাতির দলটি আর ফিরে যেতে পারেনি। এরপর এসব হাতি ২-৩টি দলে বিভক্ত হয়ে সীমান্ত এলাকায় এভাবে চষে বেড়াচ্ছে আর ফসলের ক্ষতি করছে। তারা যেকোনো সময় নাকুগাও ও পানিহাটা এলাকার ফসলি জমিতে ও লোকালয়ে তাণ্ডব চালাতে পারে। তাই পাহাড়ি এলাকার মানুষ বন্যহাতির তাণ্ডব থেকে বাঁচতে চিৎকার করে রাত কাটাচ্ছে। নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ে সামাজিক বনায়ন করায় পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকাতে ক্ষুধার্ত হাতির দল যখন রাগান্বিত হয়ে তেড়ে আসে তখন সাধারণ মানুষ পিছিয়ে যায়। এরা মাঝেমধ্যেই পাহাড়ি এলাকায় আক্রমণ করছে। ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ৪০-৪৫টি বন্যহাতির দল উপজেলার তালতলার জঙ্গলে অবস্থান করছে। সন্ধ্যার পর পর হাতির দলটি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ক্ষেতে নেমে পড়ে ফসলি জমি পা দিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। আমি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে বলেছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।