ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে এক কোটি মানুষ পাবে বিশেষ কার্ড

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে এক কোটি মানুষ পাবে বিশেষ কার্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা: স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাগবে কম দামে পণ্য কিনতে আরও এক কোটি লোককে বিশেষ কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) গণভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা টার্গেট করেছি ১ কোটি মানুষকে আমরা স্পেশাল কার্ড দেবো। যেটা দিয়ে তারা ন্যায্যমূল্যে জিনিস কিনতে পারবে। যে ৩৮ লাখকে আমরা টাকা দিচ্ছি তারা তো থাকবে, তার বাইরেও আরও এক কোটি লোককে দেবো। তাছাড়া ৫০ লাখ লোককে একটা কার্ড দেওয়া আছে সেটা থেকে তারা ১০ টাকায় চাল কিনতে পারে। সেই ব্যবস্থা করা আছে। ’

সরকারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য মজুত আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এখনও ১৮ লাখ খাদ্য মজুত আছে আমাদের। সেখানে কোন অসুবিধা নেই। ’

ফসল উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারো এত টুকু জমি যেন অনাবাদী না থাকে। যে যা পারেন সেটাই উৎপাদন করেন। প্রত্যেক এলাকায় কিছু না কিছু উৎপাদন হবেই। সেটাই আমার লক্ষ্য। তাতে আমাদের যে খাদ্য চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি। ’

ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তেল নিয়ে যে সমস্যা সেটা নিয়ে কালকেও মিটিং করেছি ভার্চ্যুয়ালি। সেখানে আমি বলে দিয়েছি একটা টাস্কফোর্স করা। মজুত তেলের কোথাও ‘হোল্ডিং’ হচ্ছে কিনা  তা দেখা হচ্ছে। আর প্রত্যেকটা জায়গায় খোঁজ নেওয়া। '

শেখ হাসিনা বলেন, 'হ্যাঁ দাম আন্তর্জাতিক বাজারে খুব বেড়ে গেছে, আমরা যেমন সয়াবিন তেলটা আমাদের বেশির ভাগই আসে হলো ব্রাজিল থেকে। আর পাম ওয়েলটা আসে মালয়েশিয়া থেকে। তো এই যুদ্ধের কারণে যাতায়াত খরচ, অতিরিক্ত কার্গো ভাড়া বেড়ে গেছে। আনতে অসুবিধা। এসব সমস্যা আছে। কিন্তু আমাদের মজুত যেটুকু আছে বা এখানে যেটা হচ্ছে সেটা আমরা খোঁজ নিচ্ছি।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা হয়, দাম বাড়তে দেখলে সবাই মজুত করে, সবাই সুযোগ নেয় সে বিষয়গুলো আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি।   কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বেড়ে যায় তখন খুব বেশি তো আর আমাদের করার থাকে না। কিছু তো কমপ্রোমাইজ আমাদের করতে হয়। কিন্তু রোজার সময় যাতে অন্তত দ্রব্যমূল্য (সহনীয়) থাকে। '

ভোজ্যতেলে বাংলাদেশ এখনও ৯০ ভাগই পরনির্ভরশীল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, 'খালি ভোজ্যতেলের ব্যাপারে এখনও আমরা ৯০ ভাগই নির্ভরশীল, পরনির্ভরশীল হয়ে গেছি। সেটাও আমি বলছি যে আমাদের অবশ্য রিসার্স ইনস্টিটিউট বারি থেকে কয়েকটা বীজ আবিষ্কার করেছে। খুব ভালো উৎপাদন হবে। ভবিষ্যতে আরও কিভাবে করা যায়। '

'আমার কথা হলো প্রত্যেকটা জিনিস আমরা যেন নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারি সে একটা অবস্থানে আমাদের থাকবে হবে।   কারো মুখাপেক্ষী হয়ে আমাদের যেন থাকতে না হয়।   সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি। '

আগামীতে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে বাংলাদেশ

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ পেঁয়াজ রপ্তানি করার আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'পেঁয়াজ নিয়ে যে সমস্যা ছিল, আমার মনে হয় তা উৎপাদন করতে পারি। আমাদের সেই ব্যবস্থা নিতে পারি। আমাদের বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে কৃষি বিজ্ঞানীরা খুব ভালো কাজ করে। সঙ্গে সঙ্গে রিসার্স করে এখন আমরা বীজ উৎপাদন করতে পারছি। '

'আশা করি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পেঁয়াজ আর বাইরে থেকে আনতে হবে না। আমরা রপ্তানি করতে পারবো। সেভাবে আমরা কৃষকদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। '

দেশে অনেক বিনিয়োগ প্রস্তাব আসছে

দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ আসা প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, 'পাশাপাশি অন্য ক্ষেত্রেও কিন্তু বিনিয়োগ ভালো আসছে।   আমরা যে ১শটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। ভালো একটা সাড়া আমরা পাচ্ছি। এখন তো অনেকটা কম্পিটিশন এসে গেছে যে বাংলাদেশে কে কে কী কী বিনিয়োগ করবে। সেটার জন্য আমরা আলাদাভাবে রোড শো করা, বিভিন্ন দেশের মানুষকে আকর্ষণ করা, তাদের আহ্বান করা, অর্থাৎ ভবিষ্যৎটা যাতে চলে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। যাতে করে দেশের উন্নয়নটা এগিয়ে যায়। '

তৈরি পোশাক শিল্পেও বাংলাদেশ আগের চেয়ে বেশি অর্ডার পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'গার্মেন্টসের অর্ডার অনেক বেশি আসছে বাংলাদেশে এখন।   অন্যান্য জায়গায় কিছু ঝামেলা হওয়াতে আগ্রহটা বেশি। '

শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে

দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচেছ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আরেকটা ভালো সুখবর হলো, সেটা আমরা ঘোষণা করতে যাচ্ছি। মার্চ মাসে, এই সময়ের মধ্যেই করবো ও পায়রাতে আমি যাবো। ওখানে আমাদের একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সেটা উদ্বোধনের ঘোষণাটা দেবো, আপনাদের আগে আমি বলে রাখি। এখন কিন্তু বাংলাদেশে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়ে দিয়েছি। যেসব জায়গায় গ্রিড লাইন সেসব জায়গায় সোলার প্যানেল দিয়েছি। খুঁটে খুঁটে বের করছি, কোন জায়গায় নাই। সর্বশেষ পেলাম গঙ্গাছড়াতে ৭০টা পরিবারের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। সেখানে আমি সোলার প্যানেল করে দিয়েছি। '

'এখন কিন্তু শতভাগ বিদ্যুৎ হয়ে গেছে আমাদের বাংলাদেশে। যেটা আমাদের টার্গেট ছিল। কিছু কিছু দ্বীপ অঞ্চল, সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে লাইন নিয়ে গেছি, যেমন সন্দীপে নিয়ে গেছি, ভোলার কিছু অঞ্চল, আর তাছাড়া বেশির ভাগ তো সোলার প্যানেল তো দিচ্ছি। গ্রিড লাইন আরও তৈরি করছি যাতে আরও সুস্থভাবে বিদ্যুৎ দিতে পারি। '

জ্বালানি গ্যাস প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'একটা সময় বলতো গ্যাসে ভাসে বাংলাদেশ, এখন আর সেটা না। যার জন্য এখন আমাদের এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে এটাও একটু সমস্যা হচ্ছে। তারপরও প্রচেষ্টা থাকছে যে দাম বাড়ে বাড়বে, কিন্তু তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেভাবে হোক আমাদের উন্নয়নটা যাতে অব্যহত থাকে। '

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২/আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা,
এমইউএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।