ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যে কারণে আমির হামজাকে নিয়ে বিতর্ক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
যে কারণে আমির হামজাকে নিয়ে বিতর্ক

মাগুরা: সাহিত্যে অবদানের জন্য মাগুরার কবি আমির হামজাকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কারে’ মনোনীত করায় সমালোচনার ঝড় তৈরি হয়েছে।  

প্রশ্ন উঠছে, একজন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে কোনো অশোভন মন্তব্য বা তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা সমাজের রুচিশীল ও বিবেকবান মানুষের কাছে কতোটা জরুরি।

এদিকে, বুধবার (১৬ মার্চ) রাতে দুইটি জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এলাকায় সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা চারণ কবি আমির হামজা তার কাব্য প্রতিভার জন্যই সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারে মনোনীত হয়ে থাকলে এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তোলাটা কি যুক্তিসঙ্গত?  

জানা যায়, কবি আমির হামজা মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৩ নম্বর শ্রীকোল ইউনিয়নের বরিশাট গ্রামের অধিবাসী। কৈশোর থেকেই তার গান ও কবিতার প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। অল্প বয়স থেকেই তিনি গান ও কবিতা লিখতেন। নিজ জেলা মাগুরাসহ বিভিন্ন স্থানে তিনি কবিগান ও ভাবখানা গেয়ে মঞ্চ মাতাতেন। তার অনন্য কাব্য প্রতিভা মানুষকে মুগ্ধ করত। মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে তিনি যে কবিতা ও গান লিখেছেন তা মানুষের কাছে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তার কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘বাঘের থাবা’ প্রকাশিত হয়। মৃত্যুর পরে তার সন্তানদের চেষ্টায় আরও দুটি বই বাজারে আসে। বের হয় তার লেখা গানের সিডি।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুরের বরিশাট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম ঝন্টু বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামেও তো মামলা ছিল। এদেশে অনেক মুক্তিকামী মানুষ কারাগারে গিয়েছেন, জেল খেটেছেন। অনেক কবি দার্শনিককে জেল খাটতে হয়েছে। সামাজিক দলাদলির কারণে ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলায় আসামি হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন অনন্য কাব্য প্রতিভার অধিকারী আমির হামজা। মূল বিষয় হচ্ছে তার লেখা কবিতা ও গান। অথচ এখন একটি মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে প্রায় দুই যুগ আগের একটি হত্যা মামলার বিষয় নিয়ে।

তিনি আরও বলেন, একটা সময় ছিল যখন এই এলাকায় কাইজা, দাঙ্গা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়া ও সহ-অধিনায়ক মোল্লা নবুয়াত আলীর নামেও মামলা হয়েছিল। তাদের ও জেলা খাটতে হয়েছিল। কারাগারে যেতে হয়েছিল। ১৯৭২ সালে কবি আমির হামজা ‘সেই বাংলা’ নামে একটি নাটক লিখেছিলেন। সেই নাটকে যারা অভিনয় করেছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। যাদের অনেকেই মারা গেছেন। আমি একজন অভিনেতা হিসেবে সেই নাটকে অভিনয় করেছিলাম। কবি আমির হামজার ‘এই সেই বাংলা’ নামের সেই নাটকটি অনেক দর্শক প্রিয় ছিল। জানিনা সেই নাটকটির পাণ্ডুলিপি তার সন্তানদের কাছে এখনো আছে কি না।

মাগুরা সাংস্কৃতি সংগঠক কণ্ঠবিথীর সভাপতি খান মাজারুল হক লিপু বলেন, শ্রীপুরের বরিশাট গ্রামের কবি আমির হামজা স্বাধীনতা পুরস্কার ষোষণার পর থেকে একটি মহল প্রশ্ন তুলছে। তবে আমি একজন সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক হিসেবে মনে করি বাংলা একাডেমি এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। তবে আমি ওই এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে শুনতে পেরেছি, কবি আমির হামজার অনন্য কাব্য প্রতিভা ছিল। তার কাল জয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘বাঘের থাবা’। এক সময় সংসারে অভাব অনটনের কারণে তিনি গান গেয়েই সংসার চালাতেন।  

শ্রীপুর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইকরাম আলী বিশ্বাস বাংলানিউজকে, চারণ কবি আমির হামজা গেজেটভুক্ত একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অনন্য ভূমিকা রয়েছে। মূলত তিনি ছিলেন একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে এখন যে ধরনের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তা অত্যন্ত দুঃখের ও কষ্টের।

মরহুম কবি আমির হামজার ছোট ছেলে মো. নুরুজ্জামান রাজু বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, তার পরিবারে কেউ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে আমৃত্যু কবি আমির হামজা বঙ্গবুন্ধর সৈনিক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাবাকে একটি হত্যা মামলার আসামি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি নিঃশর্ত মুক্তি পান। স্বাধীনতা পুরস্কারে মনোনীত হওয়ার পর থেকে একটি মহল থেকেই যে ধরনের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তা সমাজের অন্য বিবেকবান মানুষের মতো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমরাও কষ্ট পাচ্ছি।  

কবি আমির হামজার মেঝ ছেলে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী (সিইও) উপসচিব মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এককভাবে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বত্বাধিকারী আন্দোলন নিয়ে বাবার রচিত যতো গান ও কবিতা রয়েছে তা এক কথায় অনন্য।

আরও পড়ুন:-
>>> আমির হামজার স্বাধীনতা পুরস্কার: পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত 

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।