ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বাধীনতার পর ৩ ভাগের ২ ভাগ আদিবাসী বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২২
স্বাধীনতার পর ৩ ভাগের ২ ভাগ আদিবাসী বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে

দিনাজপুর: দেশ স্বাধীনের এই ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ ভাগের ২ ভাগ আদিবাসী দেশ ত্যাগ করেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি শীতল মার্ডি।

বুধবার (২৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ৫০ বছরে আদিবাসীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশ ত্যাগ না করে যারা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তারা আজকে জরাজীর্ণ অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। যারা দেশে বসবাস করছেন ভবিষ্যৎতে তাদের বসতভিটা থাকবে কি না তা নিয়েও সংশয় আছে। আমার বাড়ি বীরগঞ্জ উপজেলার ১০ নম্বর মোহনপুর ইউনিয়নের মাটিয়াকুড়া গ্রামে। ওই গ্রামে স্বাধীনতার পরে প্রায় ১৫০ পরিবারের বাস ছিল। কিন্তু আজ সেখানে ৫৫টি আদিবাসী পরিবারের বসবাস রয়েছে। অথচ ১৫০ পরিবারের জমির আছে, রেকর্ড, সিএস সবই আছে। কিন্তু পরিবারগুলো নাই। তাহলে আমরা ধরেই নিবো এই গ্রাম থেকে ১০০ পরিবার দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। তবে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি- এরমধ্যে কিছু পরিবার অন্যত্র বসবাস করছে। আর বাকিসব পরিবার ভারতে চলে গেছে। আদিবাসীদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে বা দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।  

অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রবিউল আওয়াল খোকা, বাসদের দিনাজপুর সমন্বয়ক কিবরিয়া হোসেন সহ আদিবাসী পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।  

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শীতল মার্ডি বলেন, বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় আদিবাসীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে সাওতাল, মুন্ডা, রাজোয়ার, তুরি, কর্মকার, মালো, মাহাতো, মালপাহাড়িয়া, গন্ড, পাটনি, বাগদি, মাহালী, ডহরা, ভুমিজ, আঙ্গুয়ার রাজোয়াড, বেতিয়া, নুনিয়াহাড়ি, পাহাড়িয়া, ভুইয়া, বাগদী, রবিদাস, রাই, বেদিয়াসহ ৩৮টি জাতিসত্তা রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দেশের আদিবাসীদের বিশাল অবদান রয়েছে। এই দেশ স্বাধীনতা করতে অনেক আদিবাসী জীবন দিয়েছেন। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর নিজ দেশে এসে আদিবাসীরা নিজের বাড়ি-ঘর, চাষের জমি, ভিটা-মাটি দখল হয়ে গেছে। যা আজ পর্যন্ত ফেরত পায়নি।  

লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, বর্তমান সময়ে আদিবাসীদের জীবন সংকটাপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমাগতভাবে চরম অবনতি ঘটছে। আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা দিনদিন আরও প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। একশ্রেণির ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার, ভূমি থেকে উচ্ছেদ, জাল দলিল, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, মিথ্যা মামলা, লুটপাট, জবর দখল, দেশ ত্যাগে বাধ্যসহ নানা ধরনের নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদের নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণের ঘোষণা করেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে ধর্মীয় নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ এবং তাদের ভূমি, বসতভিটা, বনভূমি, জলাভূমিসহ অন্য সম্পত্তির পূর্ণ সংরক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তা এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।  

সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী পরিষদের পক্ষ থেকে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন, আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, দখলি শর্তে খাস জমি, বসতভিটা, কবরস্থান, পুকুর আদিবাসীদের নামে প্রদান, মামলা-হয়রানি থেকে মুক্ত করা, আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কমপক্ষে একজন করে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ করাসহ ১৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

দাবিগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১৮ মে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলায় আদিবাসী সমাবেশ, জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরা ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।