ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২০২১ সালে ১১১৭ শিশু ধর্ষণের শিকার

স্টাফ করেসপেন্ডন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২২
২০২১ সালে ১১১৭ শিশু ধর্ষণের শিকার সংবাদ সম্মেলন। ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া সত্ত্বেও ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালে মোট ১ হাজার ১১৭ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৭২৩ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ১৫৫ জন, প্রতিবন্ধী শিশু ১০০ জন এবং অন্যান্য ১৩৯ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়।

এছাড়া ২০২০ সালে ধর্ষণের মোট সংখ্যা ছিল ৬২৬ জন এবং ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কন্যাশিশু ধর্ষণের হার বেড়েছে শতকরা ৭৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।

রোববার (২৭ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে মোট ১১৬ জন শিশু যৌন হয়রানি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন শিশুও রয়েছে। ২০২০ সালেরর তথ্য মোতাবেক, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল ১০৪ জন।  

পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এ যৌন হয়রানি বৃদ্ধির হার প্রায় ১২ শতাংশ। নির্যাতনগুলোর অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে রাস্তায়, নিজের বাসায়, নিকটতম আত্মীয় পরিজন ও গৃহকর্তার দ্বারা। যৌন নির্যাতনে অপেক্ষাকৃত নতুন ধরন পর্নোগ্রাফি। ২০২১ সালে পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ৫২ কন্যাশিশু।

২০২১ সালে এসিডের আক্রমণের শিকার হয়েছে ১০ জন কন্যাশিশু। পারিবারিক বিবাদ, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, সম্পত্তি সংক্রান্ত আক্রোশ, ইত্যাদি কারণে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।  

অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ২০৬ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছে ১৯৭ জন। ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৮৬৮ জন কন্যাশিশু। গড়ে প্রতিটি ইউনিয়নে ২১ জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ২০১৯ সালে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিল ২ হাজার ৫০৩ জন কন্যাশিশু। ২০২১ সালে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয় ১৭ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে যৌতুক দিতে না পারায় নয়জনকে হত্যা করা হয়েছে।

এছাড়াও ২০২১ সালে গৃহশ্রমিক নির্যাতনে ৩৫টি ঘটনার খবর জানা গেছে। এর মধ্যে ১৮ জনকে শারীরিক নির্যাতন, ৫ জনকে নির্যাতনের পর হত্যা এবং ১২ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২৪২ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। ২৭২ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৩৫ জন কন্যাশিশুকে বিভিন্ন এলাকায় ফেলে রেখে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ১০ দফা সুপারিশ জানায় ফোরামটি। এগুলো- শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে; উত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে সর্বস্তরের জন্য ‌‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি আইন জরুরিভিত্তিতে প্রণয়ন করতে হবে; ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, মামলা ও ধর্ষণ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে, ঘটনার শিকার কন্যাশিশু ও নারীর পরিবর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে ও আইনের আওতায় আনতে হবে; নারী ও শিশুকে অপদস্ত না করে অভিযুক্তের কাছে প্রমাণ চাইতে হবে যে, সে অপরাধী না। এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করতে হবে; সব ধরনের পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধসহ পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে; কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এছাড়া শিশু সুরক্ষায় শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন করতে হবে; করোনাকালে আর্থিক সংকটের কারণে অভিভাবকরা নাবালক কন্যাদের বিয়ে দিচ্ছে, এর ফলে বাল্যবিয়ে বহুগুণে বেড়ে গেছে।  

সোশ্যাল সেফটিনেটের বাজেট বৃদ্ধি করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কন্যাশিশু ও তাদের অভিভাবকদের এর আওতায় আনতে হবে; বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম বাড়তে হবে; নির্যাতন বন্ধে বিদ্যমান আইনসমূহ সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ক্রমবর্ধমান কন্যাশিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারী-পুরুষ, সরকার, প্রশাসন, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া পরিবার সবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, ব্র্যাকের জিজেডি অ্যান্ড পিভাউ পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, গুডনেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাঈনুদ্দিন মাইনুল এবং কোয়ালিটি এসুরেন্স অ্যান্ড কম্প্লেইন্স-এডুকো বাংলাদেশের হেড অব এডুকেশন গোলাম কিবরিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২২
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।