ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

তেঁতুলতলা মাঠের বিকল্প না পেলে আলোচনা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
তেঁতুলতলা মাঠের বিকল্প না পেলে আলোচনা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

ঢাকা: কলাবাগানের 'তেঁতুলতলা মাঠ’ আপাতত খেলার মাঠই থাকছে। সেখানে হচ্ছে না থানা ভবন।

থানার জন্য অন্য কোনো স্থান নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

সোমবার (২৫ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ প্রাঙ্গণে ঈদ উপলক্ষে দরিদ্রদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তেঁতুলতলা মাঠটি জেলা প্রশাসকের চিহ্নিত করা একটি খাস জমি হওয়ার কারণেই সেখানে থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে খেলাধুলার জন্য মাঠেরও প্রয়োজন আছে । সে কারণে থানা ভবন নির্মাণের জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রকে বলা হয়েছে। যদি না পাওয়া যায় তাহলে আলোচনার মাধ্যমে থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নতুন প্রজন্মের জন্য খেলার মাঠ প্রয়োজন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তবে বিকল্প জায়গা পাওয়া না গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য এই থানা ভবন নির্মাণও জরুরি।

খেলার মাঠের স্থানে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় রোববার মা-ছেলেকে আটক প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা সরাসরি ফেসবুক লাইভে এসে এমন কিছু প্রচার করছিলেন যা অসঙ্গতিপূর্ণ। বারবার থামানোর চেষ্টা করেও নিবৃত করা যায়নি বলেই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নেওয়া হয়েছিল, পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাজধানীর কলাবাগানের 'তেঁতুলতলা মাঠ’ রক্ষার অন্যতম আন্দোলনকারী স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্নাকে রোববার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে আটক করে পুলিশ। পরে তার ছেলেকেও ধরে নেওয়া হয়। দুজনকে রাখা হয় কলাবাগান থানায়। সৈয়দা রত্না উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। তাদের এই আটক নিয়ে দিনভর ব্যাপক সমালোচনা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠায় পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় আটক থাকার পর

এদিকে তাদের আটকের খবর পেয়ে দুপুর দুইটার দিকে ওই মাঠে যান মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উদীচীর ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফ নূরসহ কয়েকজন। পরে বিক্ষোভের মুখে রোবববার প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুচলেকা নিয়ে রত্নার বোনের হেফাজতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এবিষয়ে ডিএমপির কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র গণমাধ্যমকে বলেন, ভবিষ্যতে কোনো সরকারি কাজে বাধা দেবে না এই প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে রত্না ও তার ছেলেকে দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ।

এর আগে একই অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করে কলাবাগান থানা পুলিশ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের অধীন তেঁতুলতলা খেলার মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের খেলার মাঠ হিসেবে এবং জানাজার মতো অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০২০ সালে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেখানে থানার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে কলাবাগান পুলিশ। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা সেই পদক্ষেপের প্রতিবাদ ও সাইনবোর্ড অপসারণ করে এবং আগের মতো জায়গাটি ব্যবহার করতে থাকে।

পরবর্তীতে, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জায়গাটি চিহ্নিত করে পুলিশ। কলাবাগান থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যকেও নিয়মিত সেখানে পাহারা দিতে দেখা যায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়, তেঁতুলতলা মাঠটি তাদের খেলার মাঠের তালিকায় নেই। এলাকাবাসী এটিকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছিলেন।

গত বছরের ২৪ আগস্ট ঢাকা জেলা প্রশাসনের জারি করা এক নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সেখানে ডিএমপি কলাবাগান থানা ভবন নির্মাণের জন্য খেলার মাঠটি সরকার অধিগ্রহণের প্রস্তাব করে। নোটিশে জমিটিকে পতিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরে ১১ সেপ্টেম্বর নোটিশের প্রতিবাদে কলাবাগানের বাসিন্দা, পরিবেশবাদী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নকর্মী এবং শিশু-কিশোররা আন্দোলন শুরু করে।

সৈয়দা রত্না ও এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, ২৫ এপ্রিল, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।