ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সাক্ষাৎকারে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েই ভারতের ইউক্রেন নীতি

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২২
জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েই ভারতের ইউক্রেন নীতি হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

ঢাকা: জাতীয় স্বার্থ ও জ্বালানি নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়েই ভারত তার ইউক্রেন নীতি সাজিয়েছে। ভারতের সদ্যবিদায়ী পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।

 

শনিবার (৩০ এপ্রিল) তিনি অবসরে গেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে শ্রিংলা বাংলাদেশে হাইকমিশনার ও যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ভারত সরকার শ্রিংলাকে আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনের মুখ্য আহ্বায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।  

শ্রিংলার সাক্ষাৎকারটি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয় গত শুক্রবার।  

এতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি মূলত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে তাঁর গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। ওই দুই বছরকে শ্রিংলা তুলনা করেছেন ‘বিরতিহীন রোলার কোস্টারের’ সঙ্গে। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও এসেছে।  

শ্রিংলা বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলো আমাদের প্রাথমিক কূটনৈতিক ক্ষেত্র হিসেবে আছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে আমার কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি আমাদের কাছের প্রতিবেশীদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি। ’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত পররাষ্ট্র সচিবরা (ভারতীয়) প্রথম সফরে ভুটানে যান। সেই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আফগানিস্তানের সঙ্গে পরিচিত হতে আমি আমার প্রথম বিদেশ সফর আফগানিস্তানে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ’

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা―সব দেশে আমার সফরগুলো গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিল। কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় প্রতিবেশীদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি আমাদের ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতিতে প্রতিফলিত হয়। ২০১৪ সাল থেকে ভারতের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতির ক্ষেত্রে এটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে এটিই প্রথম ও সবার আগে। ’

ইউক্রেন ইস্যুতে স্বতন্ত্র অবস্থানের প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে কী প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে শ্রিংলা বলেন, ‘অন্য দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বতন্ত্র। ইউক্রেনে চলমান সংঘাত নিয়ে ভারতের অবস্থান ধারাবাহিক ও সুসংহত। ’ 

শ্রিংলা বলেন, ‘আমরা সেখানে অবনতিশীল মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি। আমরা অনতিবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা ও বৈরিতা বন্ধ করতে বলেছি। প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি―দুই জনের সঙ্গেই ফোনালাপে আমরা বলেছি, কূটনীতি ও আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। ’

ভারতের সদ্যবিদায়ী পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় আমরা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে চলমান বিশ্ব ব্যবস্থা এবং দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানানোর ওপর জোর দিয়েছি। ’

শ্রিংলা বলেন, ‘ভারতের মোট জ্বালানি তেল আমদানির ২ শতাংশেরও কম আসে রাশিয়া থেকে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি তেল আমদানিকারক হিসেবে আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জাতীয় স্বার্থ ভারতের নীতির ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। ’

ইউক্রেন সংকটে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক যে জোরালো হচ্ছে ভারত কী তার জন্য প্রস্তুত―জানতে চাইলে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, রাশিয়া-চীনসহ দ্রুত পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে তাঁরা অবগত। এই পরিবর্তনের সঙ্গে সাড়া দিতে ভারত তার মতো করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে।

পাকিস্তানে নতুন সরকার আসার ফলে দেশটির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কী উন্নতি হবে? শিগগিরই কী সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে?

এসব প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, ‘আমরা অনেকবার বলেছি, পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো প্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ক চায় ভারত। কোনো সমস্যা থাকলে দ্বিপক্ষীয় ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ। ’

শ্রিংলা আরও বলেন, অর্থবহ যে কোনো আলোচনার জন্য অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। এই পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব পাকিস্তানের। দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, সন্ত্রাসমুক্ত, স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা চায় ভারত।

সীমান্তে চীনের সঙ্গে বিরোধ প্রসঙ্গে শ্রিংলা বলেন, ‘চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্তে নজিরবিহীন পরিস্থিতির সঙ্গেও আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। এটি সমাধানের প্রচেষ্টার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট মনোযোগ প্রয়োজন। ’ 

শ্রিংলা বলেন, ‘কোভিড সংকট আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করেছে। এক অর্থে, আমার পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে সময়কালকে সংজ্ঞায়িত করেছে। তবে এটিই আমার সময়ের একমাত্র সংকট ছিল না। চীনের সঙ্গে আমাদের সীমান্তে, আমাদের প্রতিবেশী এবং এর বাইরেও আমাদের অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছিল। আফগানিস্তান থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত অনেক অস্থিরতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। ’

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জগুলো সুযোগও সৃষ্টি করেছে। এটি আমাদের সামর্থ্য ও খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়টিও প্রকাশ করেছে। কোভিড মহামারির প্রাথমিক পর্যায় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছিল। আজ মহামারি কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের নাগরিকদের সফলভাবে প্রত্যাবাসনে সন্তুষ্টি দাবি করতে পারি। চীনের উহান থেকে শুরু করে এবং ‘বন্দে ভারত মিশনে’ শেষ হয়েছে। বিশ্বের ফার্মেসি হিসেবে আমাদের খ্যাতি বিভিন্ন দেশে ভারতে তৈরি ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে আরও জোরালো হয়েছে। ’

শ্রিংলা বলেন, ‘আফগানিস্তান এবং ইউক্রেনের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে আটকে পড়া নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার সুবিধার্থে, ভারত নিশ্চিত করেছে যে বিদেশে তার নাগরিকদের মঙ্গল, নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ’  

তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্তে চীনের আগ্রাসী পদক্ষেপের মোকাবিলায় আমরা অটল ছিলাম। নির্বাচনী মেরুকরণের পরও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত একটি উচ্চতর সম্পর্ক নিশ্চিত করতে কূটনীতি ভূমিকা রেখেছে। ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতির আওতায় সবাইকে নিয়ে উন্নতি করার ভাবনা থেকে প্রতিবেশীদের সুসময় ও দুঃসময়ে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ’

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘কোভিড সত্ত্বেও আমাদের সক্রিয় কূটনীতি অবিরাম অব্যাহত ছিল। ডিজিটাল কূটনীতি এবং এমনকি ভার্চ্যুয়াল শীর্ষ সম্মেলন, বৈঠক নতুন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। সত্যি বলতে, ঘড়ির কাঁটা কখনোই থামেনি। ’ 

শ্রিংলা বলেন, ‘আমরা চীনকে স্পষ্ট বলেছি, আমাদের উন্নয়নের জন্য সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও প্রশান্তি অপরিহার্য। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা নিশ্চিত যে ভারত-চীন সম্পর্কের বিকাশ শুধু ‘তিনটি পারস্পরিক’―পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক সংবেদনশীলতা এবং পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে হতে পারে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২২২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।