ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সংসার সামলাতে নিলয়কে নরম হাতেই ধরতে হয়েছে ক্ষুর-কাঁচি

ডিস্ট্রক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২২
সংসার সামলাতে নিলয়কে নরম হাতেই ধরতে হয়েছে ক্ষুর-কাঁচি

মাগুরা: সংসার শব্দটির মানে বোঝার মতো বয়স না হতেই কাঁধে তুলে নিয়ে হয়েছে সংসার নামের এই কঠিন বোঝা। কলম ছেড়ে নরম হাতে ধরেছে ক্ষুর-কাঁচি।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের পূর্বনারায়ণপুর গ্রামের এক অসহায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হচ্ছে ১৪ বছর বয়সের কিশোর নিলয় শীল। সে শীল বীরেন শিকদার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

সংসারের হাল ধরে মা বোনের ভরণপোষণ জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তার ওপর নিজের ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া বোনের লেখাপড়ার খরচও আছে।

স্বল্প আয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের। যে বয়সে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা আর আড্ডায় মেতে থাকার কথা, সেই বয়সে ক্ষুর-কাঁচি নিয়ে তাকে ধরতে হয়েছে সংসারের হাল।

নিলয়ের মায়ের নাম অরুনা রানী শীল। প্রায় ১১ বছর আগে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে রেখে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্বামী নিরঞ্জন শীল। সেই থেকে দেবরদের সহযোগিতা এবং অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চলছেন অরুনা রানী। খেয়ে, না খেয়ে ছোট্ট একটি টিনের ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা।

জানা গেছে, ঘর থেকে নামতে গিয়ে পা ভেঙে যায় অরুনা রানীর। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। দুই শতক জমি ছাড়া আর কোনো জমিজমা বা অর্থসম্পদ নেই তাদের। তার স্বামী পেশায় সেলুন ব্যবসায়ী ছিলেন।  

সে সময় সেলুনের কাজ করে ভালোই চলতো তাদের সংসার। হঠাৎ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় এক বছর ভোগান্তির পরে মারা যান তিনি। এরপর থেকে অন্ধকার নেমে আসে পরিবারটিতে।

অরুনা রানী শীল বাংলানিউজকে বলেন, নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন বিছানায় ভুগে মারা যান নিলয়ের বাবা। সেই থেকে নিলয়ের কাকা পলাশের সহযোগিতায় এবং নিজে অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলে-মেয়ে নিয়ে চলছি।

তিনি আরও বলেন, নিজেদের সংসার রেখে চাচারা আর কত দেখবে! আমিও প্রায় ছয় মাস ধরে পা ভেঙে অুসস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে কাকাদের সঙ্গে ছেলেটাকে কাজে দিয়েছি।

এসব কথা বলতে বলতে কান্না করে অরুনা রানী বলেন, শুনেছি কত মানুষ গরিবগেরে সাহায্য দেয়। কিন্তু আমাগের কেউ খবরও নেয় না। দুইশতক জমির ওপরে ছোট টিনের ঘরে দেবরের সহযোগিতায় থাকি। সরকারি সহযোগিতায় একটা ঘর দিলি, খেতে না পারলেও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে রাতে একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারতাম।

নিলয় বাংলানিউজকে জানায়, জমিজমা না থাকায় সংসারের চাহিদা মেটাতে লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলুনের কাজ করতে হচ্ছে। এই কাজ করে দিনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের খরচ চালাতে হয়।

বীরেন শিকদার স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান মিলন বাংলানিউজকে বলেন, নিলয় এই স্কুলের অষ্টম শ্রেনির ছাত্র। সে লেখাপড়ায় ভালো। তার লেখাপড়ায় যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য নিলয়কে স্কুলের পক্ষ থেকে উপবৃত্তিসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু সংসারের চাহিদা মেটাতে তাকে এখন সেলুনের কাজ করতে হচ্ছে।

মহম্মদপুর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ইকবাল আক্তার কাফুর উজ্জ্বল বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল জানান, জমিজমা নেই এমন ভূমিহীন হতদরিদ্র মানুষের জন্যই প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর দেওয়া হচ্ছে। খোঁজখবর নিয়ে তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২২
এফআর/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।