ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা খামারিরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা খামারিরা

বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। খাদ্যের এ দাম না কমলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আগৈলঝাড়া উপজেলায় বিপুলসংখ্যক গরু, ছাগল প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করছেন খামারিরা, কিন্তু দিন যতই এগিয়ে আসছে গো-খাদ্যের দাম ততই বেড়ে চলছে। এতে খামারিদের খরচ বাড়ছে।

দফায় দফায় গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার বেশির ভাগ খামারিরা। কয়েক মাস আগে যে গমের ভুসি ৮শ’ টাকা ছিল তা এখন প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে অনেকে পরিমাণ মতো খাদ্যের যোগান দিতে না পেরে গবাদিপশুর খাবার কমিয়ে দিয়েছেন।

আর এ গো-খাদ্যের দাম বাড়ার পেছনে আমদানিকারক ও মিলারদের কারসাজি এবং সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলার বাশাইল এলাকার ডেইরি খামারি কামাল হোসেন প্রায় ১০ বছর ধরে উন্নতজাতের গবাদি পশুপালন করে আসছেন। খামারটি এতদিন ভালো চললেও সম্প্রতি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। এর প্রধান কারণ গবাদি পশুর দানাদার খাবারের উচ্চমূল্য। যে কারণে বাধ্য হয়ে গরুকে এখন কম খাবার দিতে হচ্ছে তাকে।

খামারের দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন আর গরু পালার কোন সুযোগ নেই। গত ছয়মাস আগে যে গমের ভুসি কিনেছি আটশত টাকায়, এখন তা কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। আগে যে ভুট্টার গুড়া কিনেছি ১ হাজার ২০০ টাকায় এখন তা নিতে হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। ৪০ কেজির মুগের ভুসি আগে ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে সাড়ে আঠারশত টাকায়।

জানা গেছে, দানাদার খাবারের বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকায় অনেকেই খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে আবার গরু বিক্রি করে খামার ছোট করছেন।

ব্যবসায়ী কালাম সরদার জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। কোথাও কোনো তদারকি কিংবা মনিটরিং নেই। হঠাৎ করেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের শতশত খামারিকে পথে বসতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। উপজেলার খামারি হাবুল সরদার জানান, এবছর আমার খামারে ২৫টি ষাঁড় রয়েছে।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরুগুলোকে মোটাতাজা করছি। তবে গরুর খাদ্যের দাম এত বেশি হওয়ার কারণে খরচ বেড়েছে। কোরবানির হাটে গরুর ভালো দাম পাবো কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

গৈলা বাজারে গো-খাদ্য বিক্রেতা খালেক বেপারী জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে যখন গমের দাম বাড়লো সেই থেকে গমের ভুসির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেল। এছাড়া যখনই সয়াবিন তেলের দাম বাড়লো সেসময় থেকে সয়ামিলের ভুসির দামও বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে খুব বেশি ভুট্টার আবাদ হয় না। এ কারণে যেসব এলাকায় ভুট্টা উৎপাদন হয় সেসব এলাকা থেকে সরাসরি বিভিন্ন ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভুট্টা কিনে নিচ্ছে, এতে করে ভুট্টার বাজারও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান তরফদার বলেন, সারাবিশ্বেই খাবারের মূল্য বেড়েছে। তবে কিভাবে খামারিদের টিকিয়ে রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এজন্য খামারিদের উন্নত জাতের ঘাস চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সরকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খামারিদের ঘাস চাষে সহযোগিতাও করবে। পাশাপাশি যেসব খামারি আগামী কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজা করছেন তাদের জন্য ইউরিয়ার মোলাসেস তৈরির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা মে ২২, ২০২২
এমএস/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ