ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ২ সন্তানসহ স্ত্রীকে খুন করেন গিয়াস!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ২ সন্তানসহ স্ত্রীকে খুন করেন গিয়াস!

নরসিংদী: নরসিংদীর বেলাবতে গিয়াস উদ্দিন মিয়াই তার দুই সন্তান ও স্ত্রী রাহিমা বেগমকে হত্যা করেছেন।  

জমি নিয়ে বিরোধের কারণে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়াস উদ্দিন নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করেছেন বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে স্বীকার করেছেন।

তার দেওয়া তথ্যের ভিক্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ক্রিকেট খেলার ব্যাট ও ছুরি জব্দ করা হয়েছে। তবে তিনি শত্রুদের ঘায়েল করতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন দাবি করলেও এর পেছনে পরকীয়ার সম্পর্ক পেয়েছে পিবিআই।
 
রোববার (২২ মে) সকালে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের ভাবলা গ্রামে দুই সন্তানসহ মাকে ছুরিকাঘাতে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ দুপুরে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহত রাহিমা বেগম এলাকায় দর্জির কাজ করতেন। ছেলে রাব্বি স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্র ও মেয়ে রাকিবা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ছাত্রী।

রঙ মিস্ত্রি গিয়াস উদ্দিন শেখ একই গ্রামের মৃত শাহাব উদ্দিন শেখের ছেলে।

আরও পড়ুন:ঘরে পড়ে ছিল ২ সন্তানসহ মায়ের গলা কাটা মরদেহ

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবেশী শরীফা আক্তার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পোশাক নিতে দর্জি রাহিমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা খোলা। তিনি দেখেন, ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় রাহিমা এবং পাশের ঘরে চৌকির ওপর রক্তাক্ত দুই সন্তান পড়ে আছেন। এসময় তার চিৎকারে আশপাশের এসে পুলিশে খবর দেন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রথমে বেলাব থানা পুলিশ ও পরে পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান ও সিআইডির পুলিশ সুপার এনামুল কবিরের নেতৃত্বে দু’টি দল যোগ দেওয়ার পর নিহতদের মরদেহ উদ্ধারের কাজ শুরু হয়।  

নিহত রাহিমা বেগমের ননদ ফরিদা বেগম জানান, গিয়াসের বাড়ির চারদিকের পুরো জায়গা রেনু মিয়ার। রেনুর জায়গা দিয়েই গিয়াসদের চলাচল করতে হয়। জমিজমা নিয়ে রেনুর সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। কয়েক দিন আগে গিয়াস বিক্রির জন্য তার বাড়ির কিছু গাছ কাটেন। এ গাছ রেনুর জায়গা দিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে রেনু বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। স্থানীয়রাও তাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি জানতে পারেন।

ওই সময় রাহিমার স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ দাবি করেন, তিনি মৃত্যুর খবর পেয়ে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার আড়াল গ্রাম থেকে এসেছেন। রাতে বাড়িতে ছিলেন না তিনি। এক সপ্তাহ আগে বাড়িতে কয়েকটি গাছ কেটেছিলেন। এ নিয়ে তখন তার চাচাতো ভাই রেনু মিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয়। ওই চাচাতো ভাই তাদের গাছগুলো বিক্রি করতে দেননি। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক বাড়লে তিনি হত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তবে ঘটনাস্থলে গিয়াস উদ্দিনের ভাবলেশহীন চলাফেরা পিবিআইয়ের নজরে পড়ে। তিনি পিবিআইকে জানান যে স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার খবর পেয়ে গাজিপুর থেকে এসেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঘন ঘন একটি মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন।

বিষয়গুলো নিয়ে সন্দেহ হলে পিবিআই গিয়াস উদ্দিনের ফোন ট্র্যাক করে জানতে পারে, রাতে তিনি গাজিপুর নয় এই এলাকায়ই ছিলেন। পরে দুপুর ১টার দিকে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন।

পরে পিবিআই আটক গিয়াস উদ্দিনকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে বিকেলে গ্রামের পাশের গঙ্গাঞ্জলী নদী থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে। একই সঙ্গে বাড়ির পাশের বাঘিবাড়ি আলীরটেক জঙ্গল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ক্রিকেট ব্যাট উদ্ধার করা হয়।

পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, হত্যা করার কথা গিয়াস উদ্দিন স্বীকার করেছেন। তিনি শত্রুদের ঘায়েল করার জন্য স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করেছেন বলে জানালেও এর পেছনে পরকীয়ার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছি। তার সঙ্গে একই গ্রামের আরেকজনের স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি জুয়া খেলেন এবং মাদক সেবন করেন। আমরা সবগুলো বিষয় যাচাই বাছাই করে হত্যার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি।

এদিকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে একই এলাকার রেনু মিয়াসহ বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে আটক ব্যক্তিদের সংখ্যা ও পরিচয় জানায়নি পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।