ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

৬ দফা দাবিতে বেসরকারি পাটকল শ্রমিকদের কর্মসূচি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২২
৬ দফা দাবিতে বেসরকারি পাটকল শ্রমিকদের কর্মসূচি

খুলনা: খুলনার আটরা ও মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার মহসেন,  অ্যাজাক্স, সোনালি জুট স্পিনার্স, আফিল ও  শিরোমনির হুগলি বিস্কুট কোম্পানিসহ বন্ধ সব জুট মিল চালু  ও চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের ৬ দফা দাবিতে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বেসরকারি পাট-সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন।

বুধবার (১ জুন) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল খান।

ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ২ জুন (বৃহস্পতিবার)  শিরোমনি মহসেন জুট মিল সংলগ্ন সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে বিকেল ৪টায় মতবিনিময় সভা ও ৩ জুন  ফুলবাড়ীগেট জনতা মার্কেট চত্বরে শ্রমিক জনসভা। এর মধ্যে শ্রমিকদের দাবি পূরণ না হলে জনসভা থেকে রাজপথ, রেলপথ অবরোধসহ কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

মহসেন জুট মিল: খুলনার শিরোমনি শিল্প এলাকার  ব্যক্তি মালিকানাধীন মহসেন জুট মিলটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও মালিক পক্ষ কৃত্রিম অর্থ সংকট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের ২৩ জুন থেকে ৩৯০ দিন বেআইনিভাবে লেঅফ করে রাখে। এরপর ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই এক নোটিশে সব শ্রমিক-কর্মচারীকে  বেআইনিভাবে ছাঁটাই করলেও এ পর্যন্ত তাদের পাওনা পরিশোধ করেনি। বর্তমানে ৩৬৫ জন শ্রমিক-কর্মচারীর  মিল মালিকের কাছেট সোয়া ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ।

আফিল জুট মিল: আটরা শিল্প এলাকার আফিল জুট মিল ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বন্ধ করা হয়। পরে শ্রম পরিচালকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকে  ২০২১ সালের মধ্যে শ্রমিকের চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধ করার কথা বললেও ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে মিলের কয়েকজন শ্রমিককে কিছু পাওনা পরিশোধ করে  মিল মালিক পক্ষ।

অ্যাজাক্স জুট মিল: মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার অ্যাজাক্স জুট মিল ২০১৪ সালে বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। মিলটিতে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। বর্তমানে মালিকপক্ষের কাছে প্রায় ২০ কোটি  টাকা পাওনা রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের ।

জুট স্পিনার্স: শিরোমনি শিল্প এলাকার জুট স্পিনার্স মিলটি ২০১৬ সালে বন্ধ করা হয়। সে সময় প্রতিষ্ঠনাটিতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ১২শ’ শ্রমিক কাজ করতেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের মালিকপক্ষের কাছে প্রায় কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। নতুন করে দৈনিক ভিত্তিতে মিল চালু করার জন্য এরই মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে ।

সোনালী জুট মিল: মিরেরডাঙ্গা শিল্প এলাকার সোনালী জুট মিল ২০১২ সালে  সালে বন্ধ হয়ে যায়।   এরপর থেকে  লিজ নিয়ে একেক সময় একেকজন পরিচালনা করতে থাকেন। বর্তমানে মেসার্স আমেনা ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছে এবং ৪ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। মিল মালিকের কাছে শ্রমিক কর্মচারীদের প্রায় ৪২ কোটি  টাকা পাওনা রয়েছে।

হুগলী বিস্কুট কোম্পানি: শিরোমনি শিল্প এলাকার হুগলী বিস্কুট কোম্পানি ২০২১ সালে  বন্ধ হয়ে যায়। কারখানাটিতে তখন ১৭০ জন শ্রমিক কাজ করতেন।   মালিক কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রায় ৬০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।

শ্রমিক-কর্মচারীদের অভিযোগ মিল মালিকরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সে টাকা অন্যখাতে ব্যয় করে এর আগেও শ্রম ও কর্ম সংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অমান্য করে আসছেন মালিকপক্ষ। বর্তমান শ্রমিক বান্ধব সরকারের ইমেজ ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন মালিকগোষ্ঠী। দেশে বাস করে দেশের আইন অমান্য, মুক্তি যোদ্ধাসহ অসহায় শ্রমিকদের ওপর জুলুম নির্যাতনের বিচার ও শাস্তিসহ ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে সব বন্ধ  জুট মিলের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ শ্রমিকের সব পাওনাদি অতিদ্রুত পরিশোধের দাবি জানান তারা।

ঘোষিত ৬ দফা হচ্ছে- সব বন্ধ মিল অবিলম্বে চালু, শ্রমিকদের যাবতীয় পাওনা এককালিন পরিশোধ, আফিল-জুট স্পিনার্সসহ সব বন্ধ জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের ২০০৬ সালের শ্রম আইন মোতাবেক চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধ,  বাজার দর অনুযায়ী জাতীয় নিম্নতম মজুরি কমিশন গঠন, মূল মজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ,  শ্রমিকদের রেশনের ব্যবস্থা এবং ২০০৬ সালের শ্রম আইন মোতাবেক বেসরকারি জুট মিল পরিচালনা করতে হবে ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি শেখ আমজাদ হোসেন, আফিল জুট মিলের শ্রমিক নেতা মো. নিজামউদ্দিন, জুট স্পিনার্স মিলের শ্রমিক নেতা  মো. শহিদুল ইসলাম, মো. কালাম, মো. আলাউদ্দিন, সোনালী জুট মিলের শ্রমিক নেতা মো. লিয়াকত মুন্সি, সেকেন্দার আলী, বাবুল হোসেন, অ্যাজাক্স জুট মিলের শ্রমিক নেতা মো. সাইফুল ইসলাম, আ. ওহাব, সংগঠনের প্রচার সম্পাদক  মো. সাইফুল্লাহ তারেক, মহসেন জুট মিলের শ্রমিক নেতা  আমির মুন্সি, সাংবাদিক  মিহির রঞ্জন বিশ্বাস,  হুগলী বিস্কুট শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি কাজী মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।