ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

চিকিৎসাসেবা-চিকিৎসক সংকট, প্রশ্নের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৪ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২২
চিকিৎসাসেবা-চিকিৎসক সংকট, প্রশ্নের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ঢাকা: হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা পরিবেশ, চিকিৎসকসহ জনবল সংকট নিয়ে সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।

রোববার(৫ জুন) সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পুরক প্রশ্নে করে সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা তাদের নির্বাচনী এলাকাসহ সারা দেশে স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসক ও জনবল সংকট নিয়ে কথা বলেন এবং এর ফলে চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন ৷
এসব বিষয় বার বার সংসদের উত্থাপন এবং ব্যক্তিগতভাবে মন্ত্রীকে ডিইও লেটার দিয়ে তারা কোনো সমাধান পাননি বলে অভিযোগ করেন৷ বার বার বলেও কেন সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না তার কারণও জানতে চান এমপিরা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবশ্য এসব অভিযোগের কথা স্বীকার করেন এবং উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও নার্স সংকট রয়েছে জানিয়ে প্রত্যেক এমপিকেই তাদের এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবল দেওয়ার আশ্বাস দেন। করোনার সময় দেশে ১০ হাজার চিকিৎসক, ১৫ হাজার নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগের শাজাহান খান তার নির্বাচনী এলাকায় চিকিৎসক-নার্সসহ জনবলের সংকটের কথা জানান ৷ তিনি বলেন, মাদারিপুর জেলার আড়াইশ বেডের হাসপাতাল ৫০ বেডের জনবল দিয়ে চলছে। ইন্সস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির একটি দশতলা ভবন তৈরি হয়ে আছে। সেখানে ভবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন ঝাড়ুদার দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ম্যাটস হয়েছে সেখানে কোনো জনবল নেই। একটি নার্সিং ইন্সস্টিটিউট হয়েছে সেখানেও জনবল নেই। কবিরাজপুরে ২০ বেডের সুন্দর একটি হাসপাতাল হয়েছে কিন্তু কোনো জনবল নেই। জনবলের অভাবে আজকে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। এর আগেও সংসদে এই প্রশ্নটি উত্থাপন করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন জনবল দেবেন কিন্তু এ পর্যন্ত জনবল পাইনি। কবে নাগাদ পাব আর চিকিৎসকদের যে সংকট- যে সংকট নিয়ে সবাই কথা বলছেন সেই ডাক্তার কি নিয়োগ দেবেন?

জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, জনবল কিছু ঘাটতি আছে সেটা আমরা স্বীকার করি। কোভিডকালেও ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি। কিন্তু করোনার জন্য তাদের হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। আমরা প্রশিক্ষণ ইন্সস্টিটিউটগুলোতে তাদের দিতে পারিনি এখন সেখানে পদায়ন করা হবে।
আওয়ামী  লীগের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, নলডাঙ্গা উপজেলায় একটি ৫০ বেডের হাসপাতাল তৈরি করা হলেও চিকিৎসক এখনো নিয়োগ করা হয়নি। জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ডিও লেটার দিয়ে আমি চিকিৎসক চেয়ে অনুরোধ করেছি। আজ জানতে চাই সেখানে অনতিবিলম্বে চিকিৎসক দেওয়া হবে কি-না? 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনের তদরকি আছে কি-না সেই প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্র দেব নাথ শম্ভু বলেন, সারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অন্তত জেলার স্বাস্থ্য কীভাবে চলে- সেগুলো কী আপনার অধীনস্থরা আপনাদের অবহিত করেন? বরগুনাকে ২০১০ সালে আড়ইশ বেডের হাসপাতাল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ভবনগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সেখানেও ডাক্তার নেই। খাবার নেই। কিছুই নেই। হাসপাতালের সভাপতি বানিয়ে রাখছেন আমাদেরকে কিন্তু আমরা কোনো জবাব দিতে পারি না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনি প্রশাসনিকভাবে অবহিত কি-না দয়া করে বলুন।  

উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার সময়েও আমরা ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। ১৫ হাজার নার্সও নিয়োগ দিয়েছি। আমাদের ডাক্তারের স্বল্পতা আছে। তারপরও আমরা ডাক্তার দিয়ে যাচ্ছি। ওনার ওখানে যদি ডাক্তার না দেওয়া হয় তাহলে অতিসত্বর ডাক্তার দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আমরা গত দুই আড়াই বছর কোভিড নিয়ে সংগ্রাম করেছি। এতে সফলতাও এসেছে। বাংলাদেশ কোভিড নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে ৫ম ও এশিয়াতে প্রথমস্থানে রয়েছে। আমরা সেখানে জনবল নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া করছি। পর্যায়ক্রমে সব চলে যাবে। আপনার হাসপাতালে ডাক্তার-নার্স না দেওয়া হয়ে থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা  করবো।  ডাক্তার নার্সের কমতি থাকলে আমরা বিশেষভাবে দেখবো।

জিল্লুল হাকিম বলেন, উপজেলা পর্যায়ের প্রত্যেকটি হাসপাতালে আপনারা ডাক্তার দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ বিভাগে কোনো কনসালটেন্ট নেই। কনসালটেন্ট দেওয়া হলে সেবার মান বাড়বে।  

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জেলা সদরগুলোতে আধুনিক হাসপাতাল হচ্ছে। আধুনিক ভৌত অবকাঠামো হচ্ছে। কিন্তু অভিজ্ঞ জনবল নেই। যন্ত্রপাতি নিম্নমানের। অনেক জায়গায় চিকিৎসকের অভাবে নার্সরা অপারেশন করেন। উপজেলা হাসপাতালে রোগী গেলে তাদের জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জেলা হাসপাতালে গেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকায়।

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কিছু চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসক নেই। অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে, অনেক জায়গায় দলীয় বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এসব প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে আমাদের কনসালটেন্ট থাকে। অনেকগুলো ডিসিপ্লিনে কনসালটেন্ট দিতে হয়। তবে কনসালটেন্টের স্বল্পতা রয়েছে। কারণ একটি বিশেষ পর্যায়ে না গেলে কনসালটেন্ট দেওয়া যায় না। সেই প্রসেস আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, এখন আধুনিক এক্সরে মেশিন দেওয়া হয়েছে। তবে এনেসথেসিস্টিদের অভাব রয়েছে এটা সত্য। দীর্ঘ দিনের ঘাটতি পূরণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২২
এসকে/এসআইএস  
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।