ঢাকা, সোমবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ মে ২০২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

খাল খননে বাধা, ১৪শ একর জমির ফসল নিয়ে অনিশ্চয়তায় কৃষক

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪৬, জুন ১০, ২০২২
খাল খননে বাধা, ১৪শ একর জমির ফসল নিয়ে অনিশ্চয়তায় কৃষক

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদী কুণ্ডু রামদিয়া কুমার নদে খনন কাজে বাধা দেওয়ায় ১৪শ একর জমির ফসল নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন কৃষকরা। বৃষ্টি হলেই জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায়।

ওই সব জমির পানি নেমে যাওয়ার একমাত্র ভরসা কুণ্ডু রামদিয়া কুমার নদ। সে নদ খনন কাজে বাধা পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক।

জানা যায়, কুণ্ডু রামদিয়া কুমার নদ রামদিয়া বামনগাড়িয়া বিল পর্যন্ত এসে শেষ হয়েছে। রামদিয়া, কুণ্ডু রামদিয়া, কাদিরদীসহ কয়েকটি বিলের পানি ওই খাল দিয়ে নেমে যায়। খালের শেষ মাথায় বামনগাড়িয়া বিলে মাটি ভরাট করে খালটি দখল করেন ওই এলাকার ইউনুচ শেখ বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ২০২২/২৩ অর্থ বছরে বিএডিসি কর্তৃক বাস্তবায়িত বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প ওই খালটি সংস্কার কাজের বাজেট করেন। খালটির খনন কাজ করে বামনগাড়িয়া বিলের কাছে আসলে খনন কাজে বাধা দেন ইউনুচ শেখ।  

ইউনুচ শেখের বাধার কারণে ১৩০ মিটার খাল খনন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ওই এলাকার হাসমত ফকির (৫২), মো. মজিবর রহমান (৫০), মো. রুস্তম শেখ (৪০), মো. চুন্নু শেখ (৫০) বলেন, এই খালটি ৮০ বছরের পুরোনো। আশপাশে বেশ কয়েকটি বিলের পানি এই খাল দিয়ে নেমে যাওয়ার কারণে ফসল তলিয়ে যেত না। খালের মধ্যে অনেকেরই জমি রয়েছে। শুধু ইউনুচ শেখ তার খালের মধ্যে জমিটুকু মাটি দিয়ে ভরাট করার কারণে বিলে পানি আটকে মাঠের সব ফসল তলিয়ে যায়। যে ১৩০ মিটার কাজে বাধা পড়েছে তার মধ্যে ৫ জনের জমি রয়েছে। ৫ জনের মধ্যে শুধু ইউনুচ শেখ খাল কাটায় বাধা দিয়েছে।  

তারা বলেন, প্রথমে তিনিও খাল কাটতে বলেছিলেন। কাটা শুরু করলে পরে তিনি বাধা দেন। খালটি না কাটলে বামনগাড়িয়া বিলসহ আশপাশের কয়েকটি বিলের জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। প্রায় ১৪শ একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এই এলাকার কৃষকদের দাবি খালটি যাতে কাটার জন্য যেন ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন।

খাল খনন কাজে দায়িত্বে থাকা বিএডিসির কর্মকর্তা প্রশান্ত রানা বলেন, খাল খনন যেটুকু বরাদ্দ হয়েছে তার সবটুকু খনন কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে শুধু ১৩০ মিটার বাদ রয়েছে। বাধা পড়ায় খালের ১৩০ মিটার কাটা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ইউনুস শেখের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও খাল কাটা নিয়ে মারামারির ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।  

তবে এ ব্যাপারে ইউনুস শেখের স্ত্রী মুক্তি বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের যে জমিতে খাল কাটার কথা বলা হচ্ছে সেটা খালের কিংবা সরকারি জমি নয়। এটা আমাদের ব্যক্তি মালিকানার জমি। আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে খাল কাটার চেষ্টা করছে একটি মহল। আমাদের ব্যক্তি মালিকানার জমি কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াই খাল কাটায় বাধা দেওয়ায় আমার স্বামীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। তবে এটা যদি খালের কিংবা সরকারি খাস জমি হয় তবে খাল কাটলেও আপত্তি থাকবে না বলে জানান মুক্তি বেগম।

ইউনুচ শেখের ভাতিজা আব্দুল আলীম বলেন, খালের মধ্যে আমাদের জমি রয়েছে। তাই আমরা বাধা দিয়েছি।

সাতৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাফিউল আলম মিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, খালটি উত্তর ও দক্ষিণ দুইপাশে কুমার নদের সংযোগ ঘটেছে। যে ১৩০ মিটার খাল খনন কাজে বাধা পড়েছে, ওই ১৩০ মিটার খাল ৫ জন মালিকানা জমির ভেতর দিয়ে গেছে। প্রথমে ৫ জনই খাল কাটার অনুমতি দিয়েছিল। কাটা শুরু করলে ৫ জনের মধ্যে শুধু ইউনুচ শেখ বাধা দেয়। খালটি না কাটলে প্রায় ১৪শ একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে ক্ষতি হবে এ এলাকার কৃষি অর্থনীতি।  

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।