ঢাকা: সঞ্চয়পত্রে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের জন্য সরকার ভর্তুকি দেয়। ফলে এটা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সঙ্গে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে জানিয়েছেন অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার।
শুক্রবার (১০ জুন) বিকেলে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সঞ্চয়পত্রের সুদ থেকে দেওয়া হয়, যেটা কিনা সামাজিক নিরাপত্তার অঙ্ক বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই বলেছেন সঞ্চপত্রের এ সামাজিক নিরাপত্তা খাতের এ বরাদ্দটা প্রশ্নবিদ্ধ তাহলে কোন যুক্তিতে এটা করেছেন জানতে চাইলে অর্থসচিব বলেন, এখানে সঞ্চয়পত্রের সুদ যেটা বলা হয়েছে... আমরা ধরি যে সঞ্চয়পত্রে একটা নিরাপত্তার বিষয় আছে। আমরা জানি সঞ্চয়পত্রে যে সুদ দেওয়া হয় সেটা বাজারে প্রচলিত সুদ থেকে অনেক বেশি। এখানে গড়ে ১১ শতাংশের ওপরে সুদ দেওয়া হয়। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সাড়ে ১০ ও সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত আছে। আমরা দেখি ব্যাংকের যে গড় সুদের রেট সেটার সঙ্গে পার্থক্য কতো। আমরা সেটাই দেখাই। সঞ্চয়পত্রের পুরো সুদটা আমরা দেখাই না। সঞ্চয়পত্রে বছরে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা সুদ দেওয়া হয়। আমরা এখানে পার্থক্যটা দেখি।
তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি সঞ্চয়পত্র কিনছেন কারণ এখানে লাভের ভাগটা বেশি। তারতো ব্যাংকে যাওয়ার কথা যেহেতু সে ব্যাংকে যাচ্ছে না। ফলে ব্যাংকের গড় সুদের রেটের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের এভারেজ রেটের যে পার্থক্য আমরা সেটা এখানে নিয়ে আসছি। সুতরাং এখানে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। যারা ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী তাদের জন্য। তাই আমাদের সেকেন্ড যে ডেফিনেশন সেটার সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ ।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, স্বল্প আয়ের লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য উচ্চ সুদ হারের সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ব্যবস্থা রাখা হলেও অনেক উচ্চ আয়ের বিনিয়োগকারীরা এ স্কিমগুলোর সুবিধা নিচ্ছিল বেশি। সে কারণে আমরা ইতোপূর্বে বিক্রয় ব্যবস্থাপনা অটোমেশন করেছিলাম। যার ফলে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষমতা সীমিত হয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও টিআইএন নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত মুনাফার ওপর নির্ভরশীল স্বল্প আয়ের মানুষের স্বার্থ সমুন্নত রেখে ১৫ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সীমাভেদে ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফার হার কমানো হয়। এতে সঞ্চয়পত্র বাবদ সরকারের সুদ ব্যয় কমলেও ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের ক্ষেত্রে মুনাফার হার একই থাকবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে। সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগের মুনাফার হার দুই শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে মুনাফার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
জিসিজি/আরবি