ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ওদের বেতন নিয়েও নয়-ছয়!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২২
ওদের বেতন নিয়েও নয়-ছয়!

ফেনী: মানুষগুলোর কেউ নৈশ প্রহরী, কেউ টয়লেট পরিষ্কার করেন, কেউবা আবার হাসপাতালে ঝাড়ু দেন। হাসপাতালের প্রহরী থেকে শুরু করে লাশ ঘর পর্যন্ত পুরো আঙ্গিনাকে পরিপাটি করে রাখার দায়িত্ব তাদের।

পেটের দায়ে, স্বজনদের কথা চিন্তা করে এ কাজগুলো করেন তারা। এসব খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষগুলোর বেতন নিয়ে চলছে নয়-ছয়। বেতনের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে ঠিকাদারের পকেটে।

ন্যায্য বেতনের দাবীতে আয়োজিত মানববন্ধনে এমন অভিযোগ করেন ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারীরা। রোববার (১২ জুন) সকালে হাসপাতালের মর্গের সামনে মানবন্ধন করেন তারা।

মানববন্ধনে আসা এক নারী বলেন, লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে বাথরুম পরিষ্কার করি, মানুষের ময়লা, প্রস্রাব-পায়খানা পরিষ্কার করি- মাস শেষে পরিশ্রমের টাকাটাও ঠিকমতো পাই না।

আরেক নারী বলেন, কশাইগোও দিল কাঁপে, আমগোর টেকা নিতে ঠিকাদারের দিল কাঁপে না।

আন্দোলনকারী কর্মচারীরা বলেন, সরকার থেকে ঠিকাদারের কাছে তাদের বেতন আসে ২১ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু তারা পান মাত্র ৬ হাজার টাকা। বাকি পুরো টাকা যায় ঠিকাদারের পকেটে। ঠিকাদার মাস শেষে চেকে সই করিয়ে বেতনের টাকা নিয়ে সেখান থেকে মাত্র ছয় হাজার টাকা দেন।

২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মোট ৫৩ জন কর্মচারী আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে কাজ করেন। সবার টাকা নিয়ে চলে এভাবে নয়-ছয়। কিছু বলতে গেলেই চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন ঠিকাদাররা। মানুষের অভাব নাই আরও কম টাকায় চাকরি করার মানুষও আছে বলে হুমকি দেন তারা।

জাকির হোসেন নামে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আমাদের নামে। টাকা তোলেন আরেকজন। এখন ৬ হাজার টাকা পেলেও অনেক বছর বিনা বেতনেই কাজ করতে হয়েছে। মানুষ খুশি হয়ে দু-চার পয়সা দিলে তা দিয়েই চলতে হয়।

লাইলী নামে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, বেতনের দুই ভাগই চলে যায় ঠিকাদারের পকেটে। দুই ঈদে দুটো বোনাস আসে তার কানা-কড়িও পাই না।

জোসনা নামের আরেক কর্মচারী বলেন, আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্ট করি, আর টাকা যায় আরেক জনের পেটে।

মানববন্ধন চলাকালে কর্মচারীদের আন্দোলন বন্ধ করে কাজে ফিরতে জোর করেন আবুল খায়ের মিয়াজী নামে হাসপাতালের এক তত্ত্বাবধায়ক। সাংবাদিকদের সামনেই তিনি কর্মচারীদের বলেন, তোমাদের বেতন যা তোমরা তাই নিবে- কম নাও কেন। আমার কাছে তো পুরো বেতন দেওয়ার ডকুমেন্টস আছে।

যা বলছেন ঠিকাদার
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী কথা বলেন ঠিকাদার জানে আলমের সঙ্গে। তিনি বেতন কম দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। জানান, তিনি সব নিয়ম মেনেই বেতন দিচ্ছেন। তার সব ডকুমেন্টসও আছে। সরকারের কাছ থেকে চলতি বছর টাকা এখনও না পেলেও তিনি নিজের কাছ থেকে কর্মচারীদের বেতন চালিয়ে আসছেন।

তত্ত্বাবধায়ক, আরএমও’র ভাষ্য
টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার তাদের বেতন পরিশোধের কাজটি করেন। তার কাছে যে ডকুমেন্টস আসে তাতে দেখা যাচ্ছে ঠিকাদার কর্মচারীদের ন্যায্য বেতনই দিচ্ছেন। বেতনের প্রক্রিয়ায় কর্মচারীদের সইও আছে।

কর্মচারীদের অভিযোগের বিষয়ে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। একটি সম্ভাব্য বাজেটও পাঠানো হয়েছে। কর্মচারীদের বেতন যদি সরাসরি হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে আসে তাহলে অন্যদের মতো তাদেরও ন্যায্য বেতন দেওয়া হবে। বর্তমানে বেতন প্রক্রিয়ায় হাসপাতালের কিছু করার নেই, যা করার ঠিকাদার করবে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ইকবাল হোসেন বলেন, কর্মচারীরা ন্যায্য বেতন পাক এটা তারাও চান। তবে বর্তমান এই প্রক্রিয়ায় হাসপাতালের কিছু করার নেই। তাদের বেতনের টাকা যদি হাসপাতালে অ্যাকাউন্টে সরাসরি আসে সেক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২২
এসএইচডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।