ঢাকা: রানা আহমেদ (১৯) নামে এক যুবক অপহরণের ঘটনায় রাজধানীর পল্লবী ও সাটুরিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ ভুয়া র্যাবকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-৪) সদস্যরা।
সোমবার (১৩ জুন) দুপুরে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপহরণকারী চক্রের গ্রেফতার সদস্যরা হলেন- রাজশাহী জেলার মো. আশিকুর রহমান (২৯), চাঁদপুর জেলার শাহ মো. দোজাহান (২২), ঢাকা জেলার মো. মিঠুন (১৮), মানিকগঞ্জ জেলার মো. হাবিবুর রহমান (২৭) ও শরিফুল ইসলাম (৩২)। এদের মধ্যে আশিকুর রহমান মূল সদস্য।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১টি পিস্তল, ১টি গুলি, ৯৮ পিস ইয়াবা, র্যাব জ্যাকেট, সেনা আইডি কার্ড, ভুয়া র্যাব আইডি কার্ড, র্যাবের লোগো সম্বলিত স্টিকার, র্যাবের মনোগ্রামযুক্ত মাক্স জব্দ করা হয়।
ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গত ১১ জুন মো. বিল্লাল হোসেন (৫০) নামে একজন রাত ২ টা ৩০ মিনিটের দিকে লিখিতভাবে একটি অভিযোগ দেন- দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তার ছেলে মো. রানা আহমেদকে (১৯) র্যাব পরিচয়ে কিছু লোক সাদা মাইক্রোবাসে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে অপহরণকারীরা বিল্লালকে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব রোববার (১২ জুন) সকাল থেকে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর পল্লবী থানাধীন সাগুপ্তা হাউজিং লিমিটেডের নিঝুম সমিতির প্লটের কাশবন এবং মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানাধীন এলাকা থেকে অপহৃত ভুক্তভোগীকে উদ্ধারসহ চক্রের পাঁচ সদস্যকে অস্ত্র-গুলি ও মাদকসহ গ্রেফতার করে।
ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ১১ জুন সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী রানা আহমেদ (১৯) মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানাধীন সাফুল্লী স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা শেষে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে সাটুরিয়া থানাধীন ইনাম ক্লাবের সামনে পৌঁছালে র্যাবের জ্যাকেট ও র্যাবের লোগো সম্বলিত মাস্ক পরিহিত অবস্থায় কতিপয় ব্যক্তি রানার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে এবং পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে তাকে মাদক পাচারকারী হিসেবে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাত ৮টার দিকে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগীর বাবার কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলে ও তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিক্রি করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগীর বাবা মুক্তিপণের টাকা কমানোর জন্য বারবার অনুরোধ করলে শেষ পর্যন্ত ৫ লাখ টাকায় রাজি হয়। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে অপহরণকারীরা ওই ছেলের বাবাকে মিরপুর-১ গোল চত্বরে যেতে বলে। সে সময় র্যাবের আভিযানিক দলের পরিকল্পনায় ও তত্ত্বাবধানে মুক্তিপণের টাকাসহ মিরপুর ডিওএইচএসের ১নং গেইটে থেকে চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পল্লবী থানাধীন মিরপুর সাগুপ্তা হাউজিং লিমিটেড সমিতির প্লট থেকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারসহ চক্রের আরও ২ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। চলমান অভিযানে অপহরণকারী দলের মূল সহযোগী হাবিবুর রহমান (৩৭) এবং শরিফুল ইসলামকে (৩২) মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেফতার আসামিরা জবানবন্দি দিয়েছেন তারা সংঘবদ্ধ চক্র৷ ভুক্তভোগীর বাবা এলাকার চাল ব্যবসায়ী। তাই প্রতিবেশী মো. শরিফুল ইসলাম এবং হাবিবুর রহমানের পরিকল্পনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাকিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ অভিযান চলাকালে র্যাবের আভিযানিক দলের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
এসজেএ/জেডএ
