ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাহাড় কেটে আবাসন, ৪ সরকারি কর্মচারীসহ ৮ জনের নামে মামলা

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
পাহাড় কেটে আবাসন, ৪ সরকারি কর্মচারীসহ ৮ জনের নামে মামলা

কক্সবাজার: শহরের কলাতলী মোড়ের হোটেল-মোটেল জোনে নামতে হাতের ডান দিকে চোখে পড়বে ৫১ একর আবাসন প্রকল্প। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নামে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল।

তবে বনবিভাগ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) মামলার কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এ প্রকল্প বাতিল করা হয়।

কিন্তু অভিযোগ ওঠেছে, এই প্লটসহ গত একমাসে আশপাশের আরও ৫ একর পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। এসব পাহাড় ও গাছ কেটে জমি দখল করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করছেন সরকারি কর্মচারীসহ একটি প্রভাবশালী চক্র।

এ ঘটনায় সোমবার (১৩ জুন) চার সরকারি কর্মচারীসহ ৮ জনের নামে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির কক্সবাজার  কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এই মামলা  করেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, মামলায় ৪ সরকারি কর্মচারীসহ  ৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

তারা হলেন- কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি ও কক্সবাজার পৌরসভার কানাইয়া বাজার এলাকার নুরুল হুদার ছেলে সুলতান মোহাম্মদ বাবুল (৪৫), কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়ার মৃত আবুল আহামদের ছেলে জয়নাল আবেদীন প্রকাশ জয়নাল সওদাগর (৬২), কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের জানারঘোনার মৃত মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের জারিকারক জুলফিকার আলি ভুট্টো (৫২),  কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিনাফাঁড়ি এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ইয়াছিন (৪০), কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলীর সৈকতপাড়ার  মৃত লাল মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোসাইন ফকির প্রকাশ মাছন ফকির (৫৫), কক্সবাজার টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার শাহজাহান (৪৩), কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলী ৫১ একর এলাকার ইয়াকুব মাঝির ছেলে দিল মোহাম্মদ (৩৫) ও কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলী ৫১ একর এলাকার মৃত আবুল হোসেন প্রকাশ ভান্ডারির ছেলে ছিদ্দিক মাঝি (৪৫)।

মামলার এজাহারে অভিযুক্তদের  বিরুদ্ধে কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে সরকারি পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়।

এর আগে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর ৫১ একর এলাকার পূর্ব পাশে জয়নাল সওদাগরেরঘোনা এলাকায় ৩০/৪০ জন শ্রমিক দিয়ে ৫ একরের একটি বিশাল পাহাড়ের অর্ধেক কেটে ফেলেন জেলা কালেক্টরেট ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি  সুলতান মোহাম্মদ বাবুলের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট।

অন্যদিকে পাহাড় কাটার ঘটনায় জড়িত সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যেই সুলতান মোহাম্মদ বাবুলসহ সরকারি কর্মচারীদের কেন বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'এনভায়রনমেন্ট পিপল' এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, 'এমনিতেই কক্সবাজারে পাহাড় কাটার অহরহ ঘটনা ঘটছে। এর ওপর সরকারি কর্মচারীরা প্রকাশ্যে পাহাড় কাটাতে জড়িত হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে শুধু মামলা করলেই হবে না, বনায়নের মাধ্যমে পাহাড় সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। '

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ বাবুল, জয়নাল সওদাগর, সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারী মোহাম্মদ ইয়াছিন, জুলফিকার আলি ভুট্টো, মাছন ফকির, ইয়াকুব মাঝিসহ কয়েকজন প্রভাবশালী প্রায় এক মাস ধরে ওই এলাকায় রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করছেন। এরই মধ্যে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে চড়া দামে কয়েকটি প্লট বিক্রিও করেছেন।

এর প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে সেখানে দু’দফা অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় কয়েকটি ঘর ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু অভিযান শেষে আবারও ফের এই অপকর্মে নেমে পড়ে দখলদাররা।

তবে, পাহাড় দখল করে প্লট তৈরি ও স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারী নেতা সুলতান মোহাম্মদ বাবুল। জানিয়েছেন এ ঘটনায় তিনি কোনো ভাবেই জড়িত নন।   জেলা প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাকে ঘায়েলের জন্যে প্রতিপক্ষ এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।

কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী ইব্রাহীম খলীল মামুন গত ২৫ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সাত কর্মকর্তার কাছে পাহাড় ও গাছ কেটে স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কক্সবাজার শহরের পাহাড় কাটা ও দখল বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছে। এর প্রেক্ষিতে আদালত ২০১১ সালের ৮ জুন জেলা প্রশাসনের আবাসন প্রকল্পটি বাতিল, পাহাড় না কাটা ও বন এলাকা থেকে সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের এই আদেশ বাস্তবায়ন তো হয়নি বরং উল্টো পাহাড় দখল ও কাটা অব্যাহত রয়েছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘পাহাড় কাটা ও দখলের খবর পেলেই অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অভিযানের শেষে না হতেই তারা আবার একই কাজ করছে।

আবার অনেক সময় অভিযানে যাওয়ার আগেই   অভিযুক্তরা খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা তিনি।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, সরেজমিন পরিদর্শনে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়ায় ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুন ১৩,২০২২,
এসবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।