ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুমসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। এই সরকারের আমলে পুলিশ পরিণত হয়েছে দলীয় বাহিনীতে এবং তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।
সোমবার (১৩ জুন) চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরের সম্পূরক বজেটের ছাটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা এ অভিযোগ করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের এ সব অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, পুলিশে কেউ খারাপ নেই এটা কেউ হলফ করে বলছি না। কিন্তু দেখতে হবে যারা অন্যায় করছে তাদের সরকার বরদাশত করছে কী না। যারা অন্যায় করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে সেটা উনারাই প্রমাণ করেছেন এটা নেহায়েত রাজনৈতিক বক্তব্য।
পুলিশের কাজ দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। অনিয়মের কারণে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা চাকরি হারাচ্ছে। অনেকে বাড়াবাড়ির কারণে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে। শাস্তি পেয়েছে। কারো ক্ষেত্রে অন্যায় অনিয়মের সত্যতা প্রমাণ হলে সরকার তার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
সম্পুরক বাজেটে জননিরাপত্তা বিভাগের ১৭৮ কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দাবি করা হয়। এই বরাদ্দ ছাটাই করতে ১০ জন সদস্য দাবি করেন।
এ ছাটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা অংশ নিয়ে গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবল থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এর কারণ যেসব পুলিশ অপরাধ করছে তার শাস্তি হচ্ছে না।
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, পুলিশ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী ও সাক্ষী হয় এতে প্রমাণ করে দেশের বিচার ব্যবস্থার অবস্থা কতটা নাজুক। সরকারি দল চায় পুলিশ তাদের কথামত চলবে। এই ধারা থেকে আমরা বের হয়ে না আসতে পারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিতে পারবো না।
তিনি আরও বলেন, র্যাবের ডিজির সফর উপলক্ষ্যে নিরাপত্তার নামে সব সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেট পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখান থেকে কোনো শিক্ষার্থীদের বের হতে দেওয়া হয়নি। আমি পরিচয় দিয়ে চারটি বেরিকেড পার হই। পুলিশ বহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুমের অভিযোগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। ক্ষমতায় থাকার জন্য পুলিশ বাহিনীকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপিদলীয় রুমিন ফারহানা বলেন, এই সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী নয়। পুলিশ পরিণত হয়েছে দলীয় বাহিনীতে। পুলিশের কাছে নতুন সমস্যায় পড়তে হয় কী না এই আশঙ্কায় মহাবিপদে পড়লেও পুলিশের কাছে মানুষ যেতে চায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা গুম তো করেই। হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এর প্রতিকার চাইতে গেলেও নেমে আসে নির্যাতন।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আজকে পুলিশের কেউ অন্যায় করলে মানবাধিকার কমিশন নিশ্চুপ থাকে। কোনো পুলিশ অন্যায় করলে সব পুলিশ একত্রিত হয়ে তাকে সাপোর্ট করে। এতে করে জুডিশিয়ারী অসহায় হয়ে যায়। জনগণের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিন্তু তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। পুলিশকে বুঝতে হবে। পি ফর পেলাইট। আমাদের পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে জনগণকে তাদের চাকর মনে করেন। পুলিশের দায়বদ্ধতা প্রয়োজন। পুলিশ মনে করে অস্ত্র তার হাতে। তার কোন সীমাবদ্ধতা নেই। তারা সীমাহীন ক্ষমতার মালিক।
তিনি আরও বলেন, সংসদে মানবাধিকার বিষয়ক সর্বদলীয় বিশেষ কমিটি করা উচিত। এই মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি জনগণের যে কোনো অভিযোগ এলে তা তদন্ত করবে এবং দায়বদ্ধতা করবে।
বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, সাবেক হলেই বলে, কিন্তু বর্তমান থাকতে কেন বলে না? যেমন দেখলাম সাবেক সিইসি কেএম নুরুল হুদাকে, যিনি নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। এই ফ্রুটিকাটি যদি আগেই খেতো, আরও ভালো করেই বলতে পারতো।
জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু ভালো কাজ করছে। কিছু খারাপ কাজও করছে। এই খারাপগুলোকে শুধরানো দরকার।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যেসব দুর্নীতিবাজ রয়েছে তাদের অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক। দু’চারজন অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য গোটা পুলিশ বাহিনীর দুর্নাম হোক তা আমরা চাই না।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
এসকে/এসএ
