ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নড়াইলে ‘কৃষকের অ্যাপস’ বোঝেন না চাষিরা

এম এম ওমর ফারুক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
নড়াইলে ‘কৃষকের অ্যাপস’ বোঝেন না চাষিরা

নড়াইল: গত ৩ বছর ধরে কৃষকের অ্যাপস’র মাধ্যমে বোরো মৌসুমে সরকার ধান সংগ্রহ চলছে। কিন্তু স্থানীয় চাষিরা এ অ্যাপস বোঝেন না।

ধান সংগ্রহের কোনো তথ্যই নাকি প্রান্তিক চাষিদের কাছে পৌঁছায় না। এতে কৃষকের ধান ব্যাপারীর মাধ্যমে যাচ্ছে সরকারি গুদামে। যে কারণে সরাসরি ধান সংগ্রহের কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না প্রান্তিক কৃষকরা।

সরকারিভাবে কৃষকের অ্যাপস’র মাধ্যমে লটারি করে নড়াইলে বোরো ধান সংগ্রহ শুরু হয় গত ১২ মে। জেলা প্রশাসক, খাদ্য কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অনলাইনে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচনের কথা বলা হয়। কিন্তু স্থানীয় কৃষকরা এ অ্যাপস বোঝেন না। এমনকি কখন আবেদন করতে হবে, তাও জানেন না।

জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধান সংগ্রহের তথ্য না থাকায় কৃষকের আবাদ ব্যাপারীর মাধ্যমে গুদামে চলে যাচ্ছে। নড়াইল সদরের ধোন্দা, কাগজীপাড়া কৃষি ক্লাব, লোহাগড়ার আমাদা এলাকা ঘুরেও চাষিদের কাছ থেকে কৃষকের অ্যাপস সম্পর্কে ভালো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

কৃষকদের অ্যাপস না বোঝার সুযোগে তাদের নামে ব্যাপারীরা আগের কায়দায় ধান বিক্রি করছেন সরকারি গুদামের কাছে। যে কারণেই সরাসরি ধান সংগ্রহের সুবিধা পাচ্ছে না প্রান্তিক কৃষক।

নড়াইল সদরের ধোন্দা কৃষি ক্লাবের সদস্য ইয়াকুব আলী, কৃষক আলী আহমেদ, আকবর শেখ জানেন না কবে এবং কীভাবে সরকারি গুদামে ধান দিতে হবে। ওমর আলী নামে এক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, তার কাছে ১০০ মন ধান আছে। ধান দেওয়ার খবর পেলে দিতে পারতেন।

কৃষক সাইফুল মোল্যা বাংলানিউজকে বলেন, একজনের কাছে ২০ টাকা দিছিলাম নাম উঠানোর জন্য। সে বললো আমারটা হয় নাই। হের লেইগা হাটে ধান বেইচে দিসি।

আমাদা গ্রামের আবুল হোসেন জানান, আমাগে একটা কার্ড দেবে বা বলবে কোন কায়দায় ধান দিতি হবে তাহলে তো আমরা দিতি পারবো?

যারা আগে সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ খাদ্য-গুদামে নানা জটিলতার পরেও টাকা দিয়ে ধান বিক্রি করতে হয়।

সদর উপজেলার মুলিয়া কোড়গ্রামের কৃষক বনমালী বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, গোডাউনে ধান দিতে গেলে তার অর্ধেক বাদ দেয় তারা। তিনি একবছর ৪২ কেজিতে মন হিসেব করে ধান দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ক্ষতি হয়। সরকারি গুদামে ধান দিতে হলে টাকা দিতে হবে কেন, প্রশ্ন করেন তিনি।

কাগজীপাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমানের অভিযোগ করে বলেন, ধান দিতি গেলি গুদামে লেবারের পয়সা দিতে হয়। তাছাড়া দুটো ফ্যানে ঝাড় দিয়ে অর্ধেক ধান ফেলে দেয়। নানা ফন্দি ফিকির করে। একবার ধান দিছিলাম আর দিতি যাই না।

জেলা খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৭৯৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। এজন্য লটারির মাধ্যমে ২ হাজার ২৬৫ জন কৃষক নির্বাচিত হয়েছেন। গত ২৮ এপ্রিল শুরু হয়ে সংগ্রহ চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। বুধবার (১৫ জুন) পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৫০৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় এ তিন ধরনের কৃষক নির্বাচিত করার কথা থাকলেও এবছর জনপ্রতি ৩ টন হিসেবে বড় কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক ধান সংগ্রহ থেকে বিরত রয়েছেন।

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রোকনুজ্জামান কৃষকের অ্যাপস’র প্রচারণায় দুর্বলতা স্বীকার করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র এবং ইউনিয়নে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এ কাজে কৃষককে সহায়তা করছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) অনির্বাণ ভদ্র ধান সংগ্রহ বিষয়ে বলেন, খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহের যে প্যারামিটার রয়েছে সে অনুযায়ী ধান সংগ্রহ হয়। প্রচার প্রচারণা যেভাবে হয়েছে তাতে কৃষকের ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশাকরি লক্ষ্যমাত্রা যথাসময়ে পূরণ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ১৭ জুন, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।